• কোপা আমেরিকা
  • " />

     

    কোপা কাহিনি-৩

    কোপা কাহিনি-৩    

    আরো পড়ুনঃ 

    কোপা কাহিনী ১

    কোপা কাহিনী ২


     

     

    গত পর্ব শেষ করেছিলাম ১৯৪৫ সালের কোপা দিয়ে। ইউরোপে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মাত্র শেষ হয়েছে। তবে ইউরোপের যুদ্ধের আঁচ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে একেবারেই লাগেনি। তাই বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত না হলেও কোপা আমেরিকা আয়োজন থেমে থাকেনি।

     

    এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৬ সালে কোপা আমেরিকার ১৯তম আসর বসলো আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে। নয় দলের মধ্যে পেরু, কলম্বিয়া এবং ইকুয়েডর এই আসরে অংশ নেয় নি। নিজেদের মাটিতে ৮ম বারের মতো দক্ষিণ আমেরিকার সেরা হয় আর্জেন্টিনা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো উরুগুয়ে ৪র্থ হয়। দল ৪র্থ হলেও কোনকিছুই হোসে মারিয়া মেদিনাকে টপ স্কোরার হওয়া থেকে আটকাতে পারেনি। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন আর্জেন্টিনার অ্যাডলফো পেডারনেরা।

     

    ১৯৪৭ সালে কোপা আমেরিকার আসর প্রথমবারের মতো বসলো ইকুয়েডরে। এই আসরে ব্রাজিল ছাড়া অংশ নিলো বাকি ৮ দল। প্যারাগুয়েকে রানার্সআপ বানিয়ে টানা ৩য় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হল আর্জেন্টিনা। এদিকে দল যেমনই করুক না কেন, উরুগুইয়ানদের গোল উৎসব চলছিলই। আগের আসরের মতো এবারো সর্বোচ্চ গোলদাতা হন নিকোলাস ফ্যালেরো নামে একজন উরুগুইয়ান। সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার যায় আর্জেন্টিনার হোসে ম্যানুয়েল মরেনো’র কাছে।

     

    দীর্ঘ ২৭ বছর পরে, ১৯৪৯ সালে ৩য় বারের মতো কোপা আমেরিকা ফিরল ব্রাজিলে। স্বাগতিক হওয়ার পাশাপাশি ৩য় টাইটেল জিতে নিলো তাঁরা। তবে সেবার বেঁকে বসলো আর্জেন্টিনা। কোপা থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ায় টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় ৮ দলকে নিয়ে। রানার্সআপ হয় প্যারাগুয়ে। টপ স্কোরার হন ব্রাজিলের পিন্টো। সেরা খেলোয়াড় হন একই দলের আদেমির।  

     

    ১৯৫৩ সালে পেরুতে বসলো কোপা আমেরিকার ২২তম আসর। টানা ২য় বারের মতো কোপা থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেয় আর্জেন্টিনা। এবার সাথে যোগ দেয় কলম্বিয়া। ৭ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টে প্যারাগুয়ে আর ব্রাজিলের পয়েন্ট সমান হওয়ায় প্রয়োজন হয় প্লে-অফের। অবশেষে প্যারাগুয়ের অপেক্ষার প্রহর ফুরালো। ব্রাজিলকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আমেরিকার সেরা হওয়ার স্বাদ পায় তাঁরা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন চ্যাম্পিয়ন দলের হেরিবার্তো হেরেরা। চিলির ফ্রান্সিস্কো মলিনা পান টপ স্কোরারের খেতাব।

     

    ১৯৫৫ সালে কোপা আমেরিকা আয়োজিত হল চিলিতে। ব্রাজিল, বলিভিয়া এবং কলম্বিয়া এ আসরে খেলেনি। তাই ৬ দল নিয়েই টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়। আর্জেন্টিনা ১০ম শিরোপা জয় করে এ আসরে। প্রথমবারের মতো রানার্সআপ হয় চিলি। ৮ গোল নিয়ে আর্জেন্টিনার রোডোলফো মিশেলি হন টপ স্কোরার। দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলেও সেরা খেলোয়াড়ের পদকটি ঠিকই বাগিয়ে নেন চিলির এনরিকে হোরমাজাবাল।

     

    উরুগুয়ে শেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ১৯৪২ সালে। দীর্ঘ ১৪ বছর পরে, ১৯৫৬ সালে যখন উরুগুয়ে কোপা আমেরিকা আয়োজন করলো, তাঁরা যেন তাঁদের অপ্রতিরোধ্য ফর্ম ফিরে পেলো। ৬ দলের টুর্নামেন্টে সবাইকে একরকম দর্শক বানিয়ে জিতে নিলো নিজেদের নবম শিরোপা। টানা ২য় বারের মতো রানার্সআপ হল চিলি। আগের আসরের সেরা খেলোয়াড় চিলির এনরিকে হোরমাজাবাল হলেন এ আসরের টপ স্কোরার। দলকে শিরোপা জিতিয়ে সেরা খেলোয়াড়ের সম্মানে ভূষিত হন উরুগুয়ের অস্কার মিগুয়েজ।

     

    ১৯৫৩ সালের পরে, চিলি আর উরুগুয়ে ঘুরে ১৯৫৭ সালে কোপা আমেরিকা ফিরে আসে পেরুতে। ব্রাজিলকে রানার্সআপ বানিয়ে আর্জেন্টিনা যেতে তাঁদের ১১তম কোপা আমেরিকা শিরোপা। উরুগুয়ে হয় ৩য়। সেরা খেলোয়াড় হন আর্জেন্টিনার ওমার শিভোরি। ৯ গোল করে যৌথভাবে টপ স্কোরারের পুরস্কার পান আর্জেন্টিনার হামবার্তো মাসচিও এবং উরুগুয়ের হাভিয়ের অ্যামব্রোইস।   

     

    ১৯৪৬ সালের পরে আর্জেন্টিনাতে আর কোপা আমেরিকা অনুষ্ঠিত হয় নি। তাই ১৯৫৯ সালে কোপা অনুষ্ঠিত হয় আর্জেন্টিনাতে। এই আসর সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে শুধু একটা কথাই বলা যায়। তা হল, “এ আসর ছিল কালো মানিক পেলের।” টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার, সেরা খেলোয়াড় সব পুরস্কার একাই বাগিয়ে নিলেন শুধু আসল কাজটি করতে পারলেন না। পারলেন না দলকে শিরোপা জেতাতে। আর্জেন্টিনা নিজেদের মাটিতে টানা ২য়বারের মতো শিরোপা জিতে নিলো। এর ফলে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা ট্রফির সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ তে।

     

    এর পরে ব্রাজিল আবার চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৮৯ সালে। পেলে ততদিনে অবসর নিয়েছেন। তাই নিজের নামের পাশে ৩টি বিশ্বকাপ থাকলেও দক্ষিণ আমেরিকার সেরার কোন খেতাব নেই কালো মানিকের। কি বলবেন একে? “প্রকৃতি সাম্যাবস্থা পছন্দ করে।”

     

    ১৯৫৯ সালেই কোপা আমেরিকার একটি এক্সট্রা আসর অনুষ্ঠিত হয় উরুগুয়েতে। পেরু, চিলি, বলিভিয়া এবং কলম্বিয়া এতে অংশগ্রহণ করে নি। ব্রাজিল কোনরকমে একটি দল পাঠিয়ে কাজ সারে। ফলে যা হবার তাই হয়। ৫ দলের টুর্নামেন্টে প্রথম দুটি দলের নাম উরুগুয়ে এবং আর্জেন্টিনা। স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে উরুগুয়ে জেতে তাঁদের ১০ম টাইটেল। টপ স্কোরার আর্জেন্টিনার হোসে সানফিলিপ্পো। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় উরুগুয়ের অ্যালসিডেস সিলভেইরা।

     

    ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মতো কোপা আয়োজিত হল বলিভিয়াতে। অন্য সব দেশ যখন স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে, বলিভিয়া বসে থাকবে কেন? তাই এ আসরের চ্যাম্পিয়ন দলের নাম বলিভিয়া। রানার্সআপ প্যারাগুয়ে। দল পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকে থাকলেও সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ইকুয়েডরের কার্লোস আলবার্তো রাফো। সেরা খেলোয়াড় চ্যাম্পিয়ন দলের রামিরো ব্ল্যাকাট।

     

     

    ১৯৬৭ সালে কোপা আমেরিকাতে ভেনেজুয়েলা প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে। এই আসরে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রথমবারের মতো কোয়ালিফাইং রাউন্ডের দরকার হয়। চিলি কলম্বিয়াকে এবং প্যরাগুয়ে ইকুয়েডরকে পরাজিত করে কোপায় খেলার ছাড়পত্র পায়। এই আসর বসেছিল উরুগুয়েতে। ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ আর্জেন্টিনাকে রানার্সআপ বানিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। আর্জেন্টিনার লুইস আর্টাইম হন সর্বোচ্চ গোলদাতা। উরুগুয়ের পেদ্রো রোচা হন সেরা খেলোয়াড়।

     

    ১৯৬৭ সালের পরে কোপা আমেরিকা বন্ধ থাকে প্রায় ৮ বছর। ১৯৭৫ সাল থেকে যখন আবার এই টুর্নামেন্ট শুরু হয় তখন তা ‘দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ’ যুগ থেকে প্রবেশ করে ‘কোপা আমেরিকা’ যুগে। কোন নির্দিষ্ট ভেন্যুর বদলে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয় কোপা আমেরিকার ৩টি আসর।

     

    সে গল্প পরের পর্বে।

     


    আরো পড়ুনঃ 

    কোপা কাহিনী ৪ 

    কোপা কাহিনী ৫