টেস্ট মেজাজ ফিরিয়ে আনাই চ্যালেঞ্জ
“পারফরমেন্স সবসময়ই প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেয়”- কথাটা অনেকটা ধ্রুব সত্যের মতই। বিশ্বকাপ থেকে এক ঝাঁক আনন্দ নিয়ে ফেরার পর ঘরের মাঠে এসে যেন বিস্ময়ের ডালি খুলে বসেছিল আন্তর্জাতিক ট্র্যাকে বড় দলগুলোকে শাসানির দৃষ্টি দিতে শুরু করা বাঘের দলটা। অবস্থাটা এখন এমন, কাল থেকে খুলনায় শুরু হতে যাওয়া টেস্ট সিরিজটা ড্র হলেও হয়তো মন ভরবে না টাইগার ভক্তদের। টেস্ট সিরিজটাতেও ঝকঝকে একটা বাংলাওয়াশ ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেন না এদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটপ্রেমী।
পূর্বের সেই দিনগুলোর মত একজন বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্তের এহেন প্রত্যাশাকে এখন আর যুক্তিহীন বলা যায় না মোটেই, ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে টেস্ট পরাজয় উপহার দেবার মত পর্যাপ্ত রসদও মজুদ আছে। তবে দুশ্চিন্তার জায়গাও কিন্তু আছে বেশ কয়েকটাই। প্রথমত, জিম্বাবুয়ের সাথে গত নভেম্বরে খেলা টেস্ট সিরিজটার পর দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট থেকে দূরে। পুরো স্কোয়াডের মধ্যে শুভাগত, জুবায়ের, শাহাদাত এবং শহীদ- এই চারজনই কেবল ফার্স্ট-ক্লাস ক্রিকেট খেলেছেন সম্প্রতি, বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে জাতীয় লীগে। টেস্ট মেজাজটা আয়ত্ত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে অবশ্য এই মুহূর্তে নির্ভারই থাকতে পারেন কোচ হাথুরুসিংহে, একটা-দুটো পরিবর্তন বাদ দিলে ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টিতে খেলা ব্যাটসম্যানরাই কাল মাঠে নামবেন বাংলাদেশের হয়ে, যাদের প্রায় সবাই দুর্দান্ত সময় কাটাচ্ছেন ব্যাট হাতে। ইনিংসের শুরুতে তামিমের সঙ্গী হবেন ইমরুল, যিনি বাংলাদেশের খেলা শেষ টেস্টেও ছিলেন একই পজিশনে, সেঞ্চুরিও পেয়েছিলেন একটা। ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি ‘ওপেন’ করা সৌম্যকে অবশ্য কাল লোয়ার অর্ডারে খেলতে হবে, সাত নম্বরে নামার কথা রয়েছ তাঁর। তিন নম্বরে নিজের জায়গাতেই থাকবেন মমিনুল।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের টেস্ট দলে মিসবাহ উল হক ও ইউনিস খান থাকায় ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টটা শক্তিশালী হচ্ছে তাঁদেরও। ফর্মে থাকা আজহার আলি ও আসাদ শফিক চেষ্টা করবেন যতটা পারা যায় তাঁদের সঙ্গ দিতে।
বোলিং নিয়ে চিন্তায় থাকবে দু’দলই। বাংলাদেশের সমস্যাটা যেখানে অনভিজ্ঞতা, পাকিস্তানী বোলাররা যুঝছে ফর্ম ফিরে পেতে। অধিনায়ক মাশরাফির অনুপস্থিতি তো একটা বড় ঘাটতি বটেই, বল হাতে তাঁর নেতৃত্বটাকেও ‘মিস’ করবেন সাকিব বা রুবেলরা। টেস্টে বোলিং আক্রমণের সর্বাগ্রে বরাবরের মত সাকিবকেই থাকতে হবে, ঘূর্ণি বল হাতে তাঁর দু’পাশে থাকবেন তাইজুল ও জুবায়ের, যাঁদের কারোরই অভিজ্ঞতার ঝুলিটা তেমন বড় নয়। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দুরন্ত হয়ে ওঠা রুবেলের টেস্ট রেকর্ডটা ভুলে যাবার মতই, একই অবস্থা শাহাদাত হোসেনেরও। জাতীয় লীগে অসাধারণ পারফরমেন্স দেখানো মোহাম্মদ শহীদকে একটা সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের উইকেট বরাবরই যেমন হয়, তৃতীয় দিনের শেষে বা চতুর্থ দিনের শুরুতে ভাঙতে শুরু করে। সে হিসেবে প্রথম তিন দিন ব্যাটিং-প্রাধান্য ও শেষ দেড় বা দু’দিন স্পিন বিষক্রিয়া আশা করা যাচ্ছে এ টেস্টে।