সিলেটে শুধুই টিকেট চাই!
প্রায় যুদ্ধজয় ভঙ্গিতেই বেরিয়ে এলেন মামুন। হাতের টিকিটটা আঁকড়ে ধরে আছেন সাত রাজার ধনের মতো, যেন কেউ যে কোনো সময় কেড়ে নিয়ে নেবে। আগের দিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে দাঁড়িয়ে থাকার পর সোনার হরিণের দেখা মিলেছে পরের দিন সকাল দশটায় এসে। মামুনের মতো সৌভাগ্য অবশ্য খুব কম জনেরই হয়েছে। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সকালে লোকে লোকারণ্য, তেঁতে ওঠা রোদ মাথায় করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত হাজার চারেক মানুষ। বিপিএলের টিকিটের জন্য সিলেটে এমনই হাহাকার!
এবারই প্রথম সিলেটে গড়াচ্ছে বিপিএল, তাও আবার শুরুটা হচ্ছে এখানেই। এর আগে বাংলাদেশের কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচই এখানে হয়নি, মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকদের কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতাও হচ্ছে এবারই। সিলেট শহরের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে বিপিএলের মৌতাত, শহরে ঢুকতেই স্বাগত জানাচ্ছে ঘরের ফ্র্যাঞ্চাইজি সিলেট সিক্সারসের বড় বিলবোর্ড। ড্যারেন স্যামিরা হোটেল থেকে স্টেডিয়াম যাওয়ার আগ পর্যন্ত সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন লোকজন, হুল্লোড় করে স্বাগত জানাচ্ছেন। পুরনো ব্রিজের ওপর রাতের বেলা যেভাবে আলোকসজ্জা করা হয়েছে, তাতে বিপিএল নাকি বিয়েবাড়ি সেটা নিয়েও ভ্রম হতে পারে। তবে সিলেটে বিপিএলকে নিয়ে যে উন্মাদনা, সেটা বিয়েবাড়ি থেকে কম নয়।
একটু খানিকক্ষণ শহরটা চক্কর মারলেই তা টের পাওয়া যায়। বিপিএলের জন্য বেশ কিছু বড় ব্যানার তো আছেই, মানুষের মুখে মুখেও শুধু টিকিটের আক্ষেপ। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই জানালেন, পুলিশের লাঠিচার্জ উপেক্ষা করেও পরের দিন তাঁরা আবার টিকিটের জন্য দাঁড়িয়েছেন। তার ওপর একজনকে দেওয়া হচ্ছে একটা টিকিট, স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতাই যে ১৮ হাজার! এর মধ্যে বেশ কিছু টিকেট যাবে আবার ফ্র্যাঞ্চাইজি বা বিসিবির অন্যান্য প্রভাবশালীদের কাছে। মেরেকেটে হয়তো ১৫ হাজার টিকেট পৌঁছাবে দর্শকদের কাছে, কিন্তু চাহিদা অনেক। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ করার সময় স্থানীয় এক সিএনজিওয়ালাও বলছিলেন, দরকার হলে কালোবাজার থেকেও টিকিট কিনবেন। সব টিকিট যে লাইনে দাঁড়িয়ে পাওয়া যাচ্ছে না, তা তো বলাই বাহুল্য।
টিকিট অবশ্য শুধু পাওয়া যাচ্ছে জেলা স্টেডিয়ামেই। ইউএসিবিলের কাউন্টারে পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। অনলাইনের এই যুগে তাই রোদে পুড়েই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তাতেও অবশ্য ক্লান্তি নেই কারও, যে কোনো মূল্যে একটা টিকেট চাই। মাঠে কেমন হবে বলা মুশকিল, তবে মাঠের বাইরে বিপিএলে সিলেটে এখন শিহরণই!