২২ গজের সেলুলয়েডঃ তামিমের দিন
ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!
খুলনা টেস্টে দারুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ড্র করলো বাংলাদেশ। পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথম ড্র, কিন্তু সব ছাপিয়ে আলো কেড়ে নিলেন তো তামিম ইকবাল খানই-
বৃষ্টিরে বৃষ্টি...
সকাল ১১.২০ এর দিকে নেমেছিল একবার। লাঞ্চ এগিয়ে আনা হলো, খেলা শুরু হলো প্রায় ঘন্টাখানেক পর। আধা ঘন্টা পর আবার, এবার খেলা বন্ধ থাকলো মিনিট পনেরো। বৃষ্টি বাগড়া বাধায়নি আর। ১৫ ওভার বাকি থাকতে দুদলের সম্মতিতে এমনিই শেষ হয়েছে ম্যাচ!
বৃষ্টি বোধহয় মুখ গোমড়া করেছে শুধু! এত চেষ্টা, সেই ম্যাচই কিনা সময়ের আগেই শেষ!
মুমিনুলের ছক্কা!
জুলফিকার বাবরের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটিকে লং-অনের ওপর দিয়ে মারলেন মুমিনুল। ক্যারিয়ারের প্রথম ছক্কার জন্য মুমিনুল অপেক্ষা করলেন ১৩ ম্যাচ ও ২৫ ইনিংস। কোন ছয় না মেরেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার তালিকায় সবার ওপরে সাবেক ইংলিশ স্পিনার ডেরেক আন্ডারউড। ৮৬ টেস্ট ও ১১১ ইনিংস ব্যাটিং করেও ছয়ের মুখ দেখেননি তিনি। আর সবচেয়ে বেশি রান করেও ছয় না মারার রেকর্ডের মালিক এখন পর্যন্ত আরেক ইংলিশ, জোনাথন ট্রটের ক্যারিয়ারের ৩৮২৬ রানের মধ্যে ছয় নেই একটিও! ট্রট যদি ছয় মারেন, তাহলে রেকর্ড ফিরে যাবে সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান বিজয় মাঞ্জরেকারের কাছে। ৫৫ ম্যাচে ৩২০৮ রান করেছিলেন এই ডানহাতি, কোন ছয় ছাড়াই!
তাঁরা তারা
একই ইনিংসে দুই ওপেনারের ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে বাংলাদেশের সঙ্গেই। তবে উভয় দলের ওপেনারের ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড হলো এই প্রথম। পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজের পরে বাংলাদেশের তামিম ইকবাল, ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন দুদলেরই দুই ওপেনার। দুজনেরই আবার এটি প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি! পরে তামিমের উইকেটটিও নিয়েছেন আবার হাফিজ!
হাফিজ ৪১তম টেস্টে এসে ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেলেন, তামিমের লেগেছে হাফিজের থেকে তিন ম্যাচ কম (৩৮তম ম্যাচ)।
ড্র ম্যাচ হলেও খুলনাকে নিশ্চয়ই অনেকদিন মনে রাখবেন এ দুই ওপেনার!
চার ছক্কায় পগারপার-২
কাল ফিফটি করেছিলেন চার মেরে। সেঞ্চুরিও তাই। ১৮২ রানে দাঁড়িয়ে ইয়াসির শাহকে টানা দুই ছয়ে ১৯৪, তারপর সিংগেল। তামিম ইকবালকে কি পেয়ে বসলো নড়বড়ে নব্বইয়ের (১৯০) চাপ?
জুনাইদ খানকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ছয় মেরে করলেন নিজের প্রথম ও দেশের হয়ে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি।
চাপ? ফু.....
মানিকজোড় ২
কালই দেশের হয়ে যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম ও ইমরুল। এবার দুজন মিলে ভেঙ্গে দিলেন এক বিশ্বরেকর্ডই। তৃতীয় ইনিংসে এতদিন সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি ছিল কলিন কাউড্রে ও জিওফ পুলারের ২৯০ রান। ১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই রান করেছিলেন দুই ইংলিশ ওপেনার। তামিম ও ইমরুল শুধু সেই রেকর্ডই ভাঙ্গেননি, হয়েছেন তৃতীয় ইনিংসে প্রথম ৩০০ রান করা ওপেনিং জুটিও।
উত্তাপ
শেন ওয়াটসনের সঙ্গে বিশ্বকাপে সেই ঘটনার পর থেকেই ওয়াহাব রিয়াজ যেন অন্যরকম মুডে আছেন। আজও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করেছেন সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। তার আগে সৌম্যের সঙ্গে প্রায় সংঘর্ষ হয়ে যাচ্ছিল আজহার আলীর। আজহার তো অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড এর আবেদনও করছিলেন। আর সাকিব ও রিয়াজ রীতিমত আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলেছেন, একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে। ড্র ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বাড়তি উত্তাপ ছড়িয়েছিল এই কথার লড়াইও!
সাকিবের অনীহা
ম্যাচের বাকি তখন ১৫ ওভার। চাইলেই ড্র মেনে নিতে পারেন দুদলের খেলোয়াড়রা। ক্রিজে শুভাগত হোমের সঙ্গে তখন সাকিব আল হাসান অপরাজিত ৭৬ রানে। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ড্রেসিং রুম থেকে ইশারা করছিলেন, যাতে সেঞ্চুরি পর্যন্ত অপেক্ষা করেন তিনি। তামিমের পাশ থেকে আবার মমিনুল হাত দিয়ে ‘এক শূন্য শূন্য’ বোঝালেন। কে শোনে কার কথা! সাকিব ততক্ষণে আম্পায়ার ও পাকিস্তানী খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দন শুরু করে দিয়েছেন।
পড়ে রইল সেঞ্চুরি। উঁচু হয়ে রইলেন সাকিব আল হাসান!