"হয়তো মানসিকভাবে আমরা অতটা শক্ত ছিলাম না"
দারুণ একটা সিরিজের শেষটা ভুলে যাওয়ার মতো হলো, বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশকে মাটিতে নামিয়ে আনল পাকিস্তান। ঢাকা টেস্টের পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম কথা বলেছেন দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক, টসের সিদ্ধান্ত, দলের দুর্বলতা-শক্তিসহ আরও অনেক কিছু নিয়েই।
আপনি কি ম্যাচের দিন পিচ দেখেই প্রথম একাদশ বেছে নেন ?
মুশফিক : হ্যাঁ, পিচ দেখার পরেই এটা নেওয়া হয়েছে। প্রথমে ১২ জনই ছিল উইকেট দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন ১১ জন খেলবে।
* দলে বিশেষজ্ঞ পেসার মাত্র দুজন কেন ?
- মুশফিক: সৌম্যকে ধরলে আমরা তো তিন পেস বোলার নিয়ে খেলেছি।দুইজন আসলে নয়। তাঁদের সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তে এটা হয়েছে। ফলটা হয়তো ভুল ধারণা দিতে পারে। তবে সেটা অন্যরকম হলে সিদ্ধান্ত নিয়ে এত কথা হতো না।
* আগে ফিল্ডিং করায় অনেক সমালোচনা হয়েছে। সেসবের কতটুকু প্রভাব পড়েছে পারফরম্যান্সে?
মুশফিক: এসবের মধ্য দিয়ে আমাদের তো আগেই যেতে হয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। সমস্যা শুধু একটাই, আমরা প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স করতে পারিনি। দায়টা আমাদের সবার। প্রথম টেস্টে খুব ভালো ব্যাট করে আমরা ম্যাচ বাঁচালাম, বড় একটা লিড নিলাম। অথচ এই টেস্টে কোনো ইনিংসেই ভালো ব্যাট করতে পারিনি।
* দল নির্বাচনে অধিনায়ক কতটুকু স্বাধীন ?
মুশফিক: এখানে বলার সুযোগ সবারই থাকে। এটা আমার একার দল নয়, কোচেরও দল নয়, কারোরই নয়। এটা বাংলাদেশ দল। এখানে সবারই মতামত থাকে।
* অনেকেই বলছেন শেষ টেস্টের জন্য বাংলাদেশ দলের নির্বাচন অনেক বেশি রক্ষণাত্মক হয়েছে? জেতার কথা ভেবে কি দল সাজানো হয়নি?
মুশফিক: না, আমরা অবশ্যই জয় মাথায় রেখেই দল সাজিয়েছিলাম। লিখন (জুবায়ের) প্রথম দিন সকাল পর্যন্ত এই টেস্টের দলে ছিল। সকালে এসে ও চোট পাওয়ায় বিকল্প নিতে হয়। আমাদের মনে হয়েছিল বিকল্প হিসেবে শুভাগতকে নিলে ভালো হবে। ওদের ইয়াসির শাহ ভালো বোলিং করেছে। লিখন খেললে হয়তো উইকেটের সুবিধা পেত।
* হার দিয়ে সিরিজ শেষ করে কি হতাশ ?
মুশফিক : তা তো বটেই। গত ম্যাচে টপ অর্ডার এতো ভালো খেলেছে। অনেকেই আশা করেছিল তারা সেই ফর্মটা ধরে রাখবে। অনেকেই বলছিল আগে ব্যাট করলে ভালো করত, কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করেছিল বোলাররা বেশি সাহায্য পাবে। শাহাদাত ভালো থাকলে হয়তো অন্যরকম কিছু হতে পারত। দুর্ভাগ্য, সেটা হয়নি।
* টেস্ট সিরিজে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কি হতাশ ?
মুশফিক: টেস্ট ক্রিকেট সবসময় বাড়তি মনযোগ দাবি করে। নিজের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ থাকে। সেদিক থেকে এই সিরিজ আমার জন্য হতাশারই। শেষ কবে এমন সিরিজ খেলেছি নিজেই ভুলে গেছি। চোটের জন্যও আমি একটু ভুগেছি। জানতাম আমি শতভাগ ফিট হতে পারব না। দলের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি, দুর্ভাগ্য আমার , সেটা পারিনি।
* আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশের বোলিং ২০ উইকেট নেওয়ার মতো সামর্থ্য রাখে ?
মুশফিক: খুলনায় কেন ফ্ল্যাট উইকেটে খেললাম, যেখানে ২০ উইকেট নেওয়া যায় না-এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে।এটা ঠিক, খুলনার চেয়ে ঢাকার উইকেট বোলারদের জন্য বেশি ভালো ছিলো। আমাদের ব্যাটসম্যাণরা ফর্মে ছিল। একাণেই টিম ম্যানেজমেন্ট সুযোগ দিতে চেয়েছে। আর উইকেট নিয়ে এত কথা বলার কিছু নেই। ব্যাটসম্যানরা বাজে ভাবে আউট হয়েছে, বোলাররাও তাদের কাজ ঠিকভাবে করতে পারেনি। এ ছাড়া নো বলে উইকেট পড়েছে; এসব বিষয় নিয়ে কথা বললে ভালো হবে। মনোযোগ বা অন্য কিছুতে আমাদের ঘাটতি ছিল না।
ফাস্ট বোলাররা বিশেষ করে সাফল্য পাচ্ছে না কেন ?
মুশফিক : দেখুন, বাংলাদেশে যে ধরনের উইকেটে খেলা হয়, তাতে [রথম ১০-১২ ওভারের পর পুরো ম্যাচই স্পিনারদের ওপরেই নির্ভর করতে হয়। পেসাররা অনেক সময় বুঝতে পারে না কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে বল করতে হয়। ধীরে ধীরে উন্নতি করছে, কিন্তু এখনও অনেক দূর যেতে হবে। এমনকি জিম্বাবুয়েঐ আমাদের চেয়ে এসব ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী।
* এই সিরিজ থেকে কি শিক্ষা পেল বাংলাদেশ ?
মুশফিক: শেষটা ভালো হয়নি, সবাই ওটাই মনে রাখে। আমরা যে এতদূর পর্যন্ত এসেছি, সেটাও কম অর্জন নয়। আসলে অন্য কোনো সময় যদি কোনো টেস্টে এভাবে হারতাম, তাহলে এত কথা হতো না। তখন হয়তো মনে করা হতো পাকিস্তানের সাথে আমরা এভাবেই হারব। এবার আমরা ভালো খেলাতেই এত কথা।
* শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ এভাবে ব্যাট করল কেন ?
মুশফিক: পরিকল্পনা ছিল নিজেদের স্বাভাবিক খেলা। মিডল অর্ডারের কেউ কেউ চেষ্টাও করেছে। তবে তাদের উচিত ছিলো পরিস্থিতি চিন্তা করে খেলা। চতুর্থ দিনের উইকেটে সব বলে মারা বা সুইপ করা অনেক কঠিন ছিল। আমাদের চিন্তা ছিল আজকের প্রথম এক ঘণ্টায় টপ অর্ডারে বড় একটা জুটি গড়া। কারণ একজন ব্যাটসম্যান কম, রাজিব (শাহাদাত) ব্যাটিং করতে পারবে না। সেটা হয়নি, কেউ ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি। খুব তাড়াতাড়িই আউট হয়ে ফিরে গেছে।
* ভারত সিরিজের জন্য প্রস্তুতিটা কেমন হবে?
মুশফিক: ভারত সিরিজের আগে আমরা বিসিএলে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব। প্রস্ত্ততিতে এটা কাজে লাগবে। এই সিরিজে যারা ভালো খেলেছে, তারা জানে তাদের কী করতে হবে। আর যারা খারাপ খেলেছে, তারা চেষ্টা করবে দ্রুত ফর্মে ফিরতে। বোলিংয়েও আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। ব্যাটসম্যানদের যতটা উন্নতি হয়েছে, সে হিসেবে বোলারদের হয়নি।