কোপা কাহিনি ৫: তিন "আরের" যুগ ও মেসির অপেক্ষা
আরো পড়ুনঃ
গত পর্ব শেষ করেছিলাম আর্জেন্টিনার ১৪তম শিরোপা জয় দিয়ে। এখন পর্যন্ত সেটিই হয়ে আছে কোপাতে তাঁদের শেষ শিরোপা।
১৯৯৫ সালে কোপার আসর বসেছিল উরুগুয়েতে। মজার ব্যাপার হল, নিজেদের মাটিতে হওয়া কোপার কোন আসরেই শিরোপা হারায়নি উরুগুয়ে। তাই বুঝতেই পারছেন চ্যাম্পিয়ন দলের নাম কি। ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে হারিয়ে ১৪তম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁরা। আগের দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবার সেরা ৪ থেকে ছিটকে যায়। ১২ বছর আগের নিজের কীর্তির পুনরাবৃত্তি করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে আসা এনজো ফ্রান্সেসকোলি।
১৯৯৭ সালে কোপার ৩৮তম আসর বসলো বলিভিয়াতে। আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে বিস্ময়করভাবে প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ে। আর আর্জেন্টিনা প্রথম রাউন্ড পার করতে পারলেও কোয়ার্টার ফাইনালে পেরুর কাছে হেরে গিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর এমন পারফরম্যান্সে ব্রাজিলের রাস্তা ‘ফাঁকা’ হয়ে যায়। তাই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ‘দ্য ফেনোমেনন’ রোনালদোর ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্সে ভর করে ৫ম বারের মতো কোপা জেতে ব্রাজিল। স্বাগতিক বলিভিয়া হয় দ্বিতীয় সেরা।
১৯৯৯ কোপাতে অংশ নেয় ১২টি দল। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ নয় এমন দেশ হিসেবে প্রথম অংশ নেয় জাপান। এ আসরের ব্যাপারে শুধু একটা কথাই বলতে হয় এ কোপা ছিল দুই ‘আর’ময়। রোনালদো এবং রিভালদো’র যৌথ ‘প্রযোজনা’য় উরুগুয়েকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখে ব্রাজিল। কে কতটা ভালো খেলতে পারে টা নিয়ে দুজনের মধ্যে যেন একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছিল। ৬ গোল করে দুজনেই হন টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার। তবে আগেরবারের সেরা খেলোয়াড়কে সরিয়ে এ আসরের সেরা খেলোয়াড় হন রিভালদো।
২০০১ সালে কোপার আগে আর্জেন্টিনাকে ‘খেলতে আসলে খবর আছে’ এই বলে হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। তাই কোপার এ আসর থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেয় আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার দেখাদেখি কানাডাও তাঁদের পথে হাঁটে। আর্জেন্টিনা এবং কানাডার বদলে খেলতে আমন্ত্রণ জানানো হয় কোস্টারিকা এবং হন্ডুরাসকে। কোপার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোপা আয়োজন করে কলম্বিয়া। এবং নিজের দেশের মাটিতে প্রথমবারেই ‘দাঁও’ মারে তাঁরা। মেক্সিকোকে একমাত্র গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁরা। দল তৃতীয় হলেও দারুণ খেলে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পান হন্ডুরাসের আমাদো গুয়েভারা।
২০০৪ সাল। ষষ্ঠবারের মতো কোপা আমেরিকা আয়োজন করলো পেরু। আদ্রিয়ানো ম্যাজিকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ৭ম বারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতলো ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলছিল। ফাইনালে নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে শেষ হলে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় ব্রাজিল। দারুণ খেলে দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে ভূমিকা রাখায় সেরা খেলোয়াড় হন আদ্রিয়ানো।
২০০৭ সালের ৪২তম কোপা ছিল ‘রবিনহো শো।’ একই সাথে সেরা খেলোয়াড় এবং টপ স্কোরার নির্বাচিত হন তিনি। ভেনেজুয়েলাতে প্রথম আয়োজিত ৪২তম কোপার ফাইনালে ২০০৪ সালের পুনরাবৃত্তি হয়। সেবারও দুর্দান্ত খেলছিল আর্জেন্টিনা। ফাইনালের আগে মনে করা হচ্ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার সামনে দাঁড়াতেই পারবে না। কিন্তু শেষে গিয়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার ‘ঐতিহ্য’ বজায় রাখায় ব্রাজিল তাঁদেরকে হারায় ৩-০ গোলে। আর ঘরে তোলে কোপার অষ্টম শিরোপা।
২০১১ সালের কোপাতে যেন ফিরে আসলো বিংশ শতাব্দীর উরুগুয়ে এবং আর্জেন্টিনার ক্লাসিক দ্বৈরথ। তবে এবার ফাইনালের বদলে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় তাঁরা। টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়ে আবারও আর্জেন্টিনার ঘাতকের নাম উরুগুয়ে। তবে সবচেয়ে অবাক করে দেয় ব্রাজিল। কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়ের সাথে টানা ৪টি টাইব্রেকারের শট মিস করে তাঁরা। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা দুই দলই বাদ পড়ে যাওয়ায় উরুগুয়ের আর কোন সমস্যাই হয়নি কাপ জিততে। আর দলকে ১৫তম শিরোপা জিতিয়ে সেরা খেলোয়াড় হন লুইস সুয়ারেজ।
ব্রাজিলের বেবেতো-রোমারিও এবং থ্রি ‘আর’ রোনালদো-রিভালদো-রোনালদিনহোকে বাদ দিলে ল্যাটিন আমেরিকার আর কোন লিজেন্ডই একইসঙ্গে কোপা এবং বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। পেলে পারেননি, পারেননি ম্যারাডোনাও। এমনকি ক্লাব ফুটবলের প্রায় সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দেওয়া লিওনেল মেসিও এখনো কোপা জিততে পারেননি। এবার কি মেসির সেই অতৃপ্তি ঘুঁচবে?