রান-আউটে তছনছ দক্ষিণ আফ্রিকার সাজানো ব্যাটিং
সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট
টস- দক্ষিণ আফ্রিকা (ব্যাটিং)
১ম দিনশেষে
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস ২৬৯/৬* (মার্করাম ৯৪, আমলা ৮২, আশ্বিন ৩/৯০)
অলরাউন্ডার যখন কাউকে বলে হয় ক্রিকেটে, ফিল্ডিংয়ের ব্যাপারটা প্রায়ই উহ্য থাকে। হারদিক পান্ডিয়া এ সিরিজে ভারতের অলরাউন্ডার হিসেবেই খেলছেন, এবং তার ফিল্ডিংটা আর উহ্য রাখার জো নেই। তার করা এক রান-আউটেই সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের প্রথম দিনের খেলা ঘুরে গেছে প্রায় ১৮০ ডিগ্রি। হাশিম আমলার সেই রান-আউটের পর শেষ ঘন্টায় দক্ষিণ আফ্রিকা হারিয়েছে আরও দুই উইকেট, দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছে ভারত।
আগের টেস্টের মতো এবারও টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি, কেপটাউনের মতো এবার অবশ্য এ সিদ্ধান্তে সামান্য বিস্ময়েরও সুযোগ নেই। পরিষ্কার আকাশ, ইতিহাস অনুযায়ী প্রথম দিনের উইকেট এখানে ধীরগতির, ব্যাটিং সহায়ক। সে সহায়তা আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা নিলেন, প্রথম চার উইকেটে রান উঠলো- ৮৫, ৬৩, ৫১, ৪৭। প্রথম উইকেট নিতে ভারতকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩০তম ওভার পর্যন্ত, সহায়তা নিতে হয়েছে একমাত্র স্বীকৃত স্পিনার ও দিনের সেরা বোলার রবি আশ্বিনের।
ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট-ইন ফিল্ডার মুরালি বিজয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন এলগার। হাতের আগে বিজয়ের পেটের অবদান আছে এতে, সেখানে আটকে যাওয়ার পরই বারকয়েকের চেষ্টায় ধরেছেন সেটা। এইডেন মার্করাম অবশ্য টলেননি সহজে, ২য় ফিফটি পূর্ণ করে খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন ৩য় সেঞ্চুরির। আশ্বিনের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বলে বদ্ধ হয়ে গেলেন সামনে ও পেছনের পায়ের মাঝামাঝি জায়গায়। বলটা তার প্রত্যাশামতো ঘুরলোও না। ক্যাচ গেল ঋদ্ধিমান সাহার বদলে সুযোগ পাওয়া উইকেটকিপার পার্থিব প্যাটেলের কাছে। ১৫ চারে ৯৪ রানেই থামলেন মার্করাম।
এ ম্যাচে আরেক বদলি ইশান্ত শর্মা নিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের উইকেট। ঠিক স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন না আজ ডি ভিলিয়ার্স, আগে একবার বাঁচলেও এবার ইশান্তের বাইরের শর্ট বলকে ডেকে এনেছেন স্টাম্পে। এই শর্ট বল বা বাউন্সারের সক্ষমতার জন্যই ইশান্তকে নিয়েছে ভারত, তাও আবার আগের ম্যাচের সেরা বোলার ভুবনেশ্বর কুমারকে বাদ দিয়ে!
অবশ্য স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন আমলা। ফিফটি করলেন, ডু প্লেসির সঙ্গে জুটিটাও জমছিল। এরপরই পান্ডিয়ার সেই অসাধারণ ফিল্ডিং। লেগসাইডে খেলেছিলেন, ডু প্লেসির ডাকে সাড়া দিতে দেরি করেছিলেন ক্ষণিকের জন্য। পান্ডিয়া ছুটে গিয়ে ফলো-থ্রুতেই ঘুরে থ্রোতে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প ভেঙ্গেছেন, আমলা তখনও ক্রিজের বেশ বাইরে। সেঞ্চুরি থেকেও ১৮ রান দূরেই তাই থামতে হয়েছে ১৪টি চার মারা আমলাকে।
কুইন্টন ডি কক শুধু এসেছেন আর গেছেন। আশ্বিনকে খেলতে গেলেন অলস ভঙ্গিমায়, যেন এ উইকেটে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন তিনি! আশ্বিনের গুডলেংথের বল টার্ন করলো, পা আটকে রেখে খেলতে যাওয়া ডি ককের ব্যাট ছুঁয়ে গেল স্লিপে বিরাট কোহলির কাছে ক্যাচ। ভারত ম্যাচে ফিরলো।
ভারতকে আরেকটু ফেরালেন ভারনন ফিল্যান্ডার, অবাক করা রান-আউট হয়ে। তিনিও আমলার মতো লেগসাইডে খেলেছিলেন, এরপরই ছুটেছিলেন রান নিতে। শুধু ছুটেছেনই, এপাশে ডু প্লেসি যে নিষেধ করেই যাচ্ছেন, সেদিকে খেয়ালই ছিল না! উইকেটকিপার ছুটে গিয়ে বল থ্রো করলেন, পান্ডিয়া স্ট্রাইকিং প্রান্তের বেইলস ফেলে দিলেন। ফিল্যান্ডার তখন ডু প্লেসির সঙ্গে একই প্রান্তে গিয়ে উপস্থিত! ৫ রানের মাঝেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেললো দক্ষিণ আফ্রিকা, যার দুইটিই রান-আউট!
দিনজুড়ে দাপুটে ব্যাটিং করা দক্ষিণ আফ্রিকাও তখন দিনশেষে অন্য অভিজ্ঞতার সামনে উপস্থিত! ডু প্লেসির সঙ্গে উইকেটে আছেন কেশভ মহারাজ, দুইজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ১৮ রানের। কাল তারা কোথায় নিয়ে আফ্রিকাকে হাজির করেন, দেখার বিষয় সেটাই।
তবে আজ সবচেয়ে বেশি দেখার মতো ছিল পান্ডিয়ার ওই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ফিল্ডিং-ই। আর একটু অন্যভাবে, বারবার দেখতে পারেন ফিল্যান্ডারের মতিভ্রমের দৃশ্যায়নটাও!