হাথুরুকে নিয়ে ভাবছেন না মাশরাফি
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চলে গেছেন, শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নিয়েছেন, সফরে বাংলাদেশেও এসেছেন। তবুও, হাথুরুসিংহে যেন যাননি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পরাজয়, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচের আগে তাই তিনি ফিরে ফিরে এলেন বাংলাদেশ অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনেও। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজা ‘হাথুরুসিংহের শ্রীলঙ্কা’ বলে আলাদা করে কিছু ভাবতে চান না একেবারেই।
‘মনের ভেতরে যেটা থাকে, ম্যাচটা জিততে হবে। এর বাইরে কোন সুযোগই নাই চিন্তা করার। চিন্তা করলে হয় কি, আরও বেশি চাপ আসে শেষে। আমার কাছে মনে হয় খেলার দিকেই সবার মনোযোগ থাকে। সেটাই আছে, আমরা যেন আরও ভালো খেলি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছি সেভাবে খেলি। ওইদিকেই সবাই ভাবছে আর এটাই হয়ে থাকে’, মাশরাফি বরাবরের মতোই যুক্তিবাদি।
‘চ্যালেঞ্জ আসলে সব জায়গাতেই থাকে। হাথুরুসিংহে যখন এখানে ছিল তখন তার ওপরে এক রকম চ্যালেঞ্জ ছিল। হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা পুরোটা হেরে আসার পর চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি হত। আরও উপভোগ্য হত। তিনি হয়তো থাকেননি, তিনি শ্রীলঙ্কাকে বেছে নিয়েছেন। এখন তার আরেক রকম চ্যালেঞ্জ। আমাদেরও চ্যালেঞ্জ, যখন ছিল কথা তো সব আমরাই শুনেছি। তো চ্যালেঞ্জ তো সব সময় আমাদেরকেই নিতে হয়। এই চ্যালেঞ্জটা থাকছে, এখনও যে নাই তা না। আর আমরা এই টুর্নামেন্টটা যদি জিতিও পরের সিরিজে তো একই চাপ থাকবে। প্রত্যাশাও তৈরি হয়। আপনি যখন বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন এই চ্যালেঞ্জ থাকবেই। এটা নতুন কিছু না। আমরা যে কখনো চাপ সামলাইনি এমন নয় বা এখন সামলাতে পারব না এমন না।’
প্রতিপক্ষ হাথুরুসিংহেকে ‘চমকে দেওয়ার জন্য’ আলাদা কিছুও করার ইচ্ছা নেই মাশরাফির, ‘আলাদা করে চমক দেওয়ার কিছু নেই। আমরা যেভাবে খেলতাম সেভাবেই খেলবো। হাথুরুসিংহে থাকতেও এখানে এসে বলতাম আমরা আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতা নিয়ে ক্রিকেট খেলতে চাই। আপনি যদি দেখেন প্রায় তিন বছর পর বিজয় (এনামুল) দলে এসে সে যেভাবে ক্রিকেট খেলেছে, আমরা ঠিক এটাই চাই। ভয়হীন ক্রিকেট খেলুক।’
‘অবশ্যই এনামুলের জায়গা থেকে ওর রানটাকে বড় করার সুযোগ ছিল। কারণ লক্ষ্যটা এতো বড় ছিলোনা। আমাদের সেই চাপ ছিলোনা। তারপরও ও যেভাবে ব্যাটিং করেছে আমরা শতভাগ তাকে ব্যাকআপ করবো। এটা দেখায় যে, যে অনেক ইতিবাচক। তার মানসিকতা আমরা দল থেকে যেটা চাই, সেভাবেই সে খেলেছে। আমি বলতে চাচ্ছি এগুলোই আপনাকে বড় বড় ম্যাচ বা ভালো ম্যাচ জিততে সহযোগিতা করবে। বাইরের অনেক কিছু চিন্তা করে মাঠে ঢোকা যে এমন পরিকল্পনা করবো- এর চেয়ে। আর শুধু চিন্তা করলেই হয় না মাঠে তার প্রয়োগটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে হারের পর শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে সমালোচনাটাও স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন মাশরাফি, ‘পেশাদার জগতটা এরকম, হারলে তো প্রশ্ন উঠবেই। হাথুরুর জায়গায় আমি থাকলেও প্রশ্নটা উঠত। দক্ষিণ আফ্রিকায় কেউই পারছে না, আমরাও পারিনি, তারপরও একই সমালোচনা হয়েছে। হয়নি তা তো না। কেউ পারছে না বলে আমরা পারব না, এটা কোনো অজুহাত নয়।’
এরপরই মাশরাফি আবার ঢুকে গেলেন নিজের বৃত্তে, ‘আমাদের মাথায় রাখতে হবে, যেখানেই যাই আমাদের কাজ পারফর্ম করা। সেটা করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় পারিনি, এখানে আমাদের জন্য বড় সুযোগ। কাল আমরা চেষ্টা করব, সেরাটা দেওয়ার। আমরা ইতিবাচক আছি। অনুশীলন দেখে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন সবাই অনেক চেষ্টা করছে টুর্নামেন্টে ভালো করার। বিশেষ করে গত সিরিজটা আমাদের জন্য ভালো যায়নি।’
দক্ষিণ আফ্রিকার সফরের বিভিষীকাটাও ছেড়ে যায়নি এখনও, ‘কঠিন জায়গাটা যদি বলেন এত সমালোচনা এত কিছু হয়েছে, ওই স্বাধীনতা নিয়ে মাঠে খেলতে পারব কি না সেটা বড় চ্যালেঞ্জ। এমন তো না একটা সিরিজের পর খেলা ভুলে গেছি। যে স্বাধীনতা নিয়ে আমরা শেষ দুই আড়াই বছর খেলেছি, একটা সিরিজের পর এত সমালোচনা। ওই স্বাধীনতার জায়গা থাকে কিনা।’
‘আমরা খুবই খুশি, বিজয় এসে ওই ভূমিকাটা পালন করছে। তামিম নিজের খেলাটা খেলছে। মুস্তাফিজ আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে। আমি যখন চার পাঁচটি স্লিপ যখন রেখেছি সে বলেছে রাখেন। এই যে মানসিকতা, সাহস এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা থাকলে অনেক কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যায়। এর মধ্যেই উত্থান পতন থাকবে, খারাপ সময় যাবে। কিন্তু আমরা এই ব্র্যান্ডের খেলাই খেলতে চাই। কালকে আমরা যেভাবে যা পরিকল্পনা করছি সেটা কতভাগ কাজে লাগাতে পারি। সেটা করতে পারলে ভালো কিছুই হবে।’