সেরা সময়টা বাকি রাজ্জাকের?
‘আপনারা (সংবাদমাধ্যম) কি আমাকে জোর করে অবসর নেওয়াতে চান? আমাকে যদি সরিয়ে দিতে হয়, ম্যানেজমেন্টই সেটা করবে । হয়তো আমার ফর্মটা খারাপ যাচ্ছে, তবে আমি এখনও সেই পর্যায়ে যাইনি।’
আব্দুর রাজ্জাক আদতে সে ‘পর্যায়ে’ চলেই গিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই বাংলাদেশের হয়ে শেষ ম্যাচটা খেলে ফেলেছিলেন। টেস্ট খেলেছিলেন আরও আগে, সে বছরের ফেব্রুয়ারিতে, চট্টগ্রামে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। রাজ্জাক কথা বলেছিলেন ডেইলি স্টারের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে।
‘আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ৩২ থেকে ৩৬ বছরের বয়সটা একজন স্পিনারের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সেরা সময়। এমন বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো আগে আমি বুঝতাম না, কিন্তু এখন বুঝি।’
রাজ্জাকের সেই ‘বুঝাবুঝি’র দাম দেওয়া হয়নি তখন।
৮ বছর সময় নিয়ে রাজ্জাক টেস্ট খেলেছিলেন মাত্র ১২টি। টেস্ট দলে যাওয়া-আসার মধ্যেই ছিলেন, তবে সীমিত ওভারে রাজ্জাক ছিলেন অপরিহার্য। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম ২০০ উইকেটও তার। যে বছর বাদ পড়লেন, সেই ২০১৪ সালে ৬টি ওয়ানডেতে রাজ্জাকের উইকেট ছিল ৩ টি। গড় ১১২.৩৩।
রাজ্জাক জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে ফিরলেন ঘরোয়াতে। তবে একটু ভিন্নভাবে। ৪০টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেছেন এই সময়ে, উইকেট ৬২টি। তবে দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেটে যেন ভিন্ন রাজ্জাক। ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজ্জাক খেলেছেন ৭২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, উইকেট ৩০৩টি। ২০১৪ এর পর থেকে এ পর্যন্ত খেলেছেন ৪২টি ম্যাচ, উইকেট ২০৭টি।
****
বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ, বিসিএলের তিন রাউন্ড পেরিয়ে গেছে। সাউথ জোনের হয়ে বোলিং করেছেন ৫ ইনিংস, ৩২.৬৫ গড়ে উইকেট ২০টি। এর মাঝে আছে ইতিহাসগড়া ৫০০তম উইকেটও। পরের রাউন্ড শুরু হবে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে, হয়তো প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সেটারই।
ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খানের সঙ্গে কথা হয়েছিল, তবে সেটা তেমন কিছু নয়। এরপর বিসিবির এক কর্মকর্তার ফোন পেলেন, ‘অভিনন্দন’। রাজ্জাক একটু অবাকই হলেন, ‘কেন ভাই, ৫০০ উইকেটের জন্য?’ কদিন আগে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা তাকে ও তুষার ইমরানকে সম্মাননা জানিয়েছিল, হয়তো রাজ্জাক ভেবেছিলেন এবার বিসিবিও তেমন কিছু করবে। অথবা কিছুই ভাবেননি তেমন।
‘আরে না, আপনার টিকেট কনফার্ম হয়েছে। আপনি দলের সঙ্গে যাচ্ছেন চট্টগ্রামে। আপনার শিডিউল এইটা।’
রাজ্জাক আরও বেশি অবাক হলেন। তিনি দলের সঙ্গে যাবেন কেন! পরে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর ফোন পেলেন। ‘অবাক হয়েছি। চিন্তাও করিনি, মাথাতেই ছিল না। আসলে বলার পরে বুঝতেছিলাম না, কী হচ্ছে, সব ঠিক আছে কিনা!’
আদতে ঠিকই আছে সব। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম টেস্টের জন্য ডাকা হয়েছে তাকে।
****
‘তবে জিনিসটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিতই ছিল। আমি আসলে বুঝতেই পারিনি। অনেক সময় আশা থাকে, হয়ে যায়, তবে এইটা ওইরকম ছিলই না।’
তবে রাজ্জাক অবশ্য আশা ছাড়েননি কখনোই, ‘নট রিয়েলি। আমি সবসময়ই বলেছি, লক্ষ্য না থাকলে ঘরোয়াতে ভাল খেলা যায় না। প্রত্যেকটা ক্রিকেটারেরই লক্ষ্য থাকে জাতীয় দলে খেলা। তবে এইভাবে এই সময়ে হবে (জাতীয় দলে আবার ডাক পাওয়া), এটা আসলে বুঝিনি।’
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচ হয়েছিলেন ২০১৪ সালের জুলাইয়ে। রাজ্জাক বাদ পড়লেন আগস্টের পর। তিনি দলে ডাক পাননি আর। যখন পেলেন, হাথুরুসিংহে তখন শ্রীলঙ্কার কোচ। চার বছর যদি রাজ্জাক টেস্ট খেলতে নামেনও, সেটা সেই হাথুরুসিংহের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই!
‘আসলে না, এটা “পার্ট অব লাইফ, পার্ট অব ক্রিকেট, পার্ট অব ইভেন্ট”। আসলে এমনই। কখনও ভাল সময়, কখনও খারাপ সময়, কখনও ভাগ্য পাশে থাকবে, কখনও থাকবে না। এরকমই হয়। এটা ইতিবাচক ভাবেই নেওয়া উচিৎ। আসলে আগে-পরের কথা বলবো না। ভাগ্য যখন ডেকে আনবে তখনই হবে, আগে-পরের কথা বাদ দেন। আমার চেষ্টা থাকবে ভাল খেলার। এটা হাথুরুসিংহের জন্য না, এটা আমার জন্য, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য। যদি আমি সুযোগ পাই আরকি।’
সুযোগ পান বা না পান, চার বছর টেস্ট দলে ডাক পাওয়াটা তো মোটেই নিয়মিত ঘটনা নয় বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিতে।
‘আমার কাছে মনে হয়, দৃষ্টান্ত হয়ে থাকা উচিৎ। আসলে শেষ হয়ে যায় না। অনেক তরুণ ক্রিকেটার ভাবে, আর হবে না, হচ্ছে না- আমার মনে হয় না এভাবে নেওয়া উচিৎ। আপনি ভাল খেললে একসময় না একসময় আপনাকে প্রয়োজন হবেই। আপনার জায়গাটার। সুযোগের অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষা কতোদিনের হবে, সেটা বলা শক্ত। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা ছিল যে, “ওর হবে না আর”। ৯৫ ভাগ মানুষই হয়তো এটা ভাবতো। তবে আমার ভেতরে একটা জিনিস কাজ করতো, হয়তো আমি আবার খেলব।’
আবার খেলার দ্বারপ্রান্তে এখন তিনি। আর ১৩৭ দিন পর ৩৬ পূর্ণ হবে রাজ্জাকের। তার নিজের হিসাব মতে, একজন স্পিনার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেরা সময় কাটানোর জন্য আরও ১৩৭ দিন আছে তার।