• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    ডেডলাইন ডে-এর ডামাডোলে

    ডেডলাইন ডে-এর ডামাডোলে    

    ৩১ জানুয়ারি, ২০১১।

    শীতকালীন দলবদল মৌসুমের শেষদিন। ডেডলাইন ডেতে চমক থাকটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রেকর্ড-ভাঙ্গা গড়ার খেলায় সেদিনটা আলাদা করেই জায়গা করে নিয়েছে ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে।

    পুরো জানুয়ারি মাস জুড়েই ফার্নান্দো তোরেসের ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন চলছিল সেবার। স্প্যানিশ স্ট্রাইকারকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী ক্লাবের তালিকায় সবার উপরে নাম ছিল চেলসিরই। ২৭ তারিখ প্রথমবার তোরেসের জন্য প্রস্তাব দিয়েই অবশ্য খালি হাতে ফিরতে হয় লন্ডনের ক্লাবকে। লিভারপুল তখন পর্যন্তও নিজেদের সেরা স্ট্রাইকারকে দলে রাখার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিতই ছিল!

    কিন্তু বিপত্তিটা বাধে পরদিনই। ২৮ তারিখ সকালে তোরেস নিজেই জানিয়ে দেন, লিভারপুলে থাকছেন না তিনি। ক্লাব ছাড়ার অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠান লিভারপুল কর্তৃপক্ষের কাছে। এর পর তোরেসের চেলসিতে যাওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু চুক্তির টাকার অংকটা ঠিক করতে দুই ক্লাবকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল শেষদিন পর্যন্ত। ব্রিটিশ ট্রান্সফার রেকর্ড গড়ে ৫৮ মিলিয়ন ইউরোতে অবশেষে লিভারপুলের লাল জার্সি ফেলে চেলসির নীল গায়ে জড়ান তোরেস। ডেডলাইন ডের ডমিনো ইফেক্ট শুরু হয় এরপরই।



    নভেম্বরে আয়াক্সের হয়ে খেলার সময় পিএসভি আইন্দহোভেনের এক খেলোয়াড়কে কামড় মেরে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন লুইস সুয়ারেজ। উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের মেধা আর সামর্থ্যের পরিচয় ততোদিনে জেনে গেছে সবাই, সাথে ‘খারাপ’ দিকটাও অজানা ছিল না কারোই। ডাচ ফুটবল ফেডারেশনের ওই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আর আয়াক্সের হয়ে মাঠে নামা হয়নি সুয়ারেজের। তোরেস চলে যাওয়ায় ব্যাপার নিশ্চিত হওয়ার পরই নতুন একজন স্ট্রাইকার খুঁজছিল লিভারপুল। আগেরবার লিগে সাত নম্বরে শেষ করায় চ্যাম্পিয়নস লিগেও জায়গা হয়নি কপদের। সুয়ারেজকে দলে পাওয়া নিয়ে তাই সংশয় ছিল খোদ লিভারপুল কর্তৃপক্ষেরও।

     


                                           আরও পড়ুনঃ আর্সেনালেই যাচ্ছেন অবামেয়াং?



    একই সময়ে তাই চলতে থাকল আরও একজন স্ট্রাইকারের খোঁজ। প্রিমিয়ার লিগে তখন উড়ছেন অ্যান্ডি ক্যারোল। আগের মৌসুমে নিউক্যাসেলের প্রিমিয়ার লিগে ফিরে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তার। প্রিমিয়ার লিগেও টেনে এনেছিলেন চ্যাম্পিয়নশিপের ফর্মটাই। ৬ মাসে করে ফেলেছেন ১৪ গোল। নিউক্যাসেলের হয়ে ভালো খেলার উপহার হিসেবে ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলেও। ইংলিশ স্ট্রাইকারকে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টাটা তাই যৌক্তিকই ছিল লিভারপুলের। কিন্তু সদ্য প্রিমিয়ার লিগে পা রাখা নিউক্যাসেলের তো লড়াই তো টিকে থাকার। দলের মূল খেলোয়াড় মাঝপথে ক্লাব ছাড়লে পথ দেখাবে কে?

    ডেডলাইন ডেতে তোরেসের চুক্তি হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ঘোষণাটা এল, লিভারপুলকেই বেছে নিয়েছেন সুয়ারেজ। যাকে পাওয়া নিয়ে সন্দেহ ছিল, তাঁকেই আগে দলে ভেড়াল লিভারপুল। ২৬.৫ মিলিয়ন ইউরোতে আয়াক্স থেকে নতুন ক্লাবে যোগ দিলেন উরুগুইয়ান। লিভারপুলের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় তখন তিনি! কিন্তু সেই তকমাটা সুয়ারেজের গায়ে থাকল অল্প কয়েক ঘণ্টা। সুয়ারেজের সাথে চুক্তি নিশ্চিত করার কিছুক্ষণ পরই ক্যারোলের সঙ্গেও চুক্তি হয়ে গেল লিভারপুলের। ক্যারোলের জন্য লিভারপুলকে ব্যয় করতে হল ৪১ মিলিয়ন ইউরো! দলবদলের শেষদিনে কেনি ডাল্গলিশ সংবাদ সম্মেলনে এলেন একজনের বদলে দুইজনকে নিয়ে! ডানে বসলেন সুয়ারেজ, বাঁ দিকে ক্যারোল। দুজনের মুখেই হাসি, ডাল্গলিশ মুখের হাসিটা আরও চওড়া। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দুজনের একজনই খুশি করতে পেরেছিলেন ডাল্গলিশকে।