মুমিনুলের ১৭৫* এর দিনে বাংলাদেশের রেকর্ড ৩৭৪
প্রথম টেস্ট, চট্টগ্রাম
টস-বাংলাদেশ (ব্যাটিং)
১ম দিনশেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৩৭৪/৪* (মুমিনুল ১৭৫*, মুশফিক ৯২, তামিম ৫২, ইমরুল ৪০, লাকমাল ২/৪৩, সানদাকান ১/৫৮, পেরেরা ১/৯৮)
মুমিনুলের দিন। মুশফিকের আক্ষেপের দিন। মুমিনুল-মুশফিকের রেকর্ড জুটির দিন। এবং শেষবেলায় উইকেট হারানোর আক্ষেপের দিন। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিনে মুমিনুলের অপরাজিত ১৭৫ রান ও মুশফিকের সঙ্গে ২৩৬ রানের জুটির পর ৩৭৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ। একদিনে বাংলাদেশের এটিই সর্বোচ্চ স্কোর, যা ভেঙেছে ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৮ উইকেটে ৩৬৫ রানের রেকর্ড।
মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিমের জুটি যখন ইঙ্গিত দিচ্ছিল বাংলাদেশের দিনের খেলা শেষ করে শ্রীলঙ্কাকে আরও বেশি হতাশা উপহার দেওয়ার, মুশফিকের লাকমালের বাইরের বলে খোঁচা দেওয়া তখনই। অফস্টাম্পের বাইরের বলটা অনায়াসে ছাড়তে পারতেন, উল্টো ক্যাচ দিয়ে সেঞ্চুরি থেকে থামলেন ৮ রান দূরে। পুরো উল্টো চিত্র লিটন দাসের, পরের বলটা ছেড়ে দিয়ে হারিয়ে ফেললেন অফস্টাম্প! নতুন বল, লাইন-লেংথ- সবকিছু ভুলে বসেছিলেন তিনি। প্রথম সেশনে ২ উইকেটের পর দ্বিতীয় সেশনে উইকেটশূন্য বাংলাদেশ শেষ সেশনেও তাই হারিয়েছে দুই উইকেট, দুই বলের মাঝেই।
স্পিন-স্পিন রব উঠেছিল টেস্ট শুরুর আগে থেকেই, দুই দলেই বিশেষজ্ঞ স্পিনার আছেন তিনজন করে। তবে টার্নের সে অর্থে দেখা পাননি শ্রীলঙ্কার কেউই। দ্বিতীয় নতুন বলে ঝলক দেখিয়েছেন সুরাঙ্গা লাকমাল, দিনের সেরা বোলারও তিনিই। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন মুমিনুলই।
মুমিনুলের সেঞ্চুরির উদযাপনটাই বলছিল অনেক কিছু। ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ইনসাইড আউটে চার মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করাটা যেমন তার ইনিংসের পরিচায়ক, হাত ছুঁড়ে উদযাপনটা তেমন ২০১৪ সালের নভেম্বরের পর সেঞ্চুরি পাওয়ার স্বস্তির পরিচায়ক। লাঞ্চের আগে মুমিনুল ছিলেন প্রথম গিয়ারে, ৩৯ বলে ২৬ রানে। এরপর গিয়ার বদলালেন, পরের ৫৬ বলে করলেন ৭৬ রান! শেষ সেশনে অবশ্য ধীর-স্থির ছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে মেরেছেন ১৬ চারের সঙ্গে ১টি ছয়। ক্যারিয়ারে এটি দ্বিতীয় ‘ড্যাডি’ সেঞ্চুরি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের, ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ১৮১ রানের পর উঁকি দিচ্ছে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও। আর মুশফিক এ নিয়ে কাটা পড়লেন ৩ বার নড়বড়ে নব্বইয়ে।
তিনজন স্বীকৃত স্পিনার নিয়ে টসে জিতেছিল বাংলাদেশ। ঘটা করে ডেকে নিয়ে গেলেও টেস্ট দলে ফেরা হয়নি আব্দুর রাজ্জাকের, অভিষেক হয়েছে সানজামুল ইসলামের। ব্যাটিং নিতে ভাবতে হয়নি মাহমুদউল্লাহকে, শুরুতে তামিমের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং সে সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক করেছে আরও। তামিম আজ ছিলেন তার সহজাত ভঙ্গিমায়।
লাহিরু কুমারাকে টানা তিন চারে শুরু করেছিলেন, ২৫তম ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৪৬ বলে। টানা চার বল ডট দিয়ে খোলসে ঢোকাই যেন কাল হলো তার, এর আগে শট খেলতে গিয়ে স্লিপে এদিক-ওদিক দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল বল, এবার দিলরুয়ান পেরেরার বলটা ঢুকলো ভেতরে। ফরোয়ার্ড ডিফেন্স হলো না।
তামিমের ইনিংসের বেশিরভাগ সময় দর্শক ছিলেন ইমরুল, এরপর হাত খুলেছিলেন তিনিও। তবে তামিমের মতো খোলসবন্দী হলেন তিনিও, লাকশান সান্দাকানের রং-আনে এলবিডাব্লিউ। মুমিনুলের সঙ্গে আলোচনা করেও রিভিউ নেননি, অথচ রিপ্লে দেখাচ্ছিল বল যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে।
এরপরই মুশফিকের সঙ্গে জুটি মুমিনুলের। মুমিনুল করেছেন দ্বিতীয় ‘ড্যাডি’ সেঞ্চুরি, ১৬টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছয়। শ্রীলঙ্কার টার্ন না পাওয়া স্পিন হুমকি তৈরী করতে পারেনি তাদের জন্য। যেটা হয়েছে লাকমালের বলে। তার পরপর দুই বলে দুই আঘাত ক্রিজে এনেছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে।