শুরুতে ডামাডোল, মাঝে মাহমুদউল্লাহ, শেষে উইকেট-হতাশা
প্রথম টেস্ট, চট্টগ্রাম
দ্বিতীয় দিনশেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫১৩ (মুমিনুল ১৭৬, মুশফিক ৯২, মাহমুদউল্লাহ ৮৩* তামিম ৫২, , সানজামুল ২৪, লাকমাল ৩/৬৮, হেরাথ ৩/১৫০)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ১৮৭/১ (ডি সিলভা ১০৪*, মেন্ডিস ৮৩*, মেহেদি ১/৪৫)
শ্রীলঙ্কা ৩২৬ রানে পিছিয়ে
লাইভস্কোর ও পুরো স্কোরকার্ড দেখুন
কুশাল মেন্ডিস। ক্যাচ মিসে পাওয়া জীবন- দুই। তার বিপক্ষে ব্যর্থ রিভিউ- দুই।
ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তার বিপক্ষে ব্যর্থ রিভিউ- এক।
আউটসাইড-এজ মিস- দুইজনেরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বার।
দুইজনের একজনকেও এক সেশনের বেশি সময় ধরে আউট করতে পারেনি বাংলাদেশ, ডি সিলভার ক্যারিয়ারের চতুর্থ ও টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিনে ৮৩ রানে অপরাজিত মেন্ডিস, চট্টগ্রামের ‘ব্যাটিং-সহায়ক’ উইকেটে বাংলাদেশের লিড ৩২৬ রানে নামিয়ে এনেছে শ্রীলঙ্কা।
ঠিক সে অর্থে বিশাল টার্ন পাননি স্পিনাররা, তবে মেহেদি-সানজামুল সুযোগের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন বেশ কয়েকবারই। মুস্তাফিজের বলে স্লিপে মেন্ডিসের ক্যাচ ছেড়েছেন মেহেদি-ইমরুল দুইজন মিলে, এরপর মেহেদির বলে মেন্ডিসের ক্যাচটা ঠিক যেন বুঝেই উঠতে পারেননি ইমরুল। তাইজুলের বলে তিনবার রিভিউ নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, এলবিডাব্লিউর একটি রিভিউ ইমপ্যাক্ট তিন মিটারের বেশি হয়ে আম্পায়ারস কল হওয়ায় অক্ষত ছিল, তবে কট-বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে হারিয়ে গেছে সেটা। এর আগে আরেকটা রিভিউ হারাতে হয়েছে এলবিডাব্লিউতে। তৃতীয় দিনে বোলারদের কঠিন সময় যদি অপেক্ষা করে থাকে, তাহলে সেটা কঠিনতর হয়ে উঠবে এই রিভিউ হারানোয়।
রিভিউ-ক্যাচ মিসের পরিসংখ্যানের বিপরীতে ডি সিলভা-কুশাল ছিলেন বেশ স্বচ্ছন্দ্যই। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছেন ডি সিলভা, ১৫ চারের ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ৮২। মেন্ডিস সঙ্গ দিয়েছেন দারুণ, তিনি ছিলেন বেশ সতর্ক।
বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছিল শুরুতেই, শূন্য রানেই মেহেদির অফস্পিন আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন দিমুথ করুনারত্নে, হাঁটুর ওপর সেটা নিয়েছেন ইমরুল কায়েস।
এর আগে আরেকবার সঙ্গী-হীনতায় ভুগেছেন মাহমুদউল্লাহ। সুরাঙ্গা লাকমালের শর্ট বলে শেষমুহুর্তে ব্যাট লাগিয়ে মুস্তাফিজ যখন আউট হলেন, এপ্রান্তে বাংলাদেশ অধিনায়ক অপরাজিত ৮৩ রানে। প্রথম বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি পাওয়ার রেকর্ডটা তাই গড়া হয়নি তার। তবে ছুঁয়েছেন ২০০০ রানের মাইলফলক।
লাঞ্চের পরপরই সানজামুলের প্রতিরোধ ভেঙেছে সানদাকানের ফ্লাইটে ধোঁকা খেয়ে, ডাউন দ্য লেগের বলে বেরিয়ে এসেছিলেন ক্রিজ ছেড়ে, ডিকভেলার হাতে হয়েছেন স্টাম্পড। মাহমুদউল্লাহকে অবশ্য অফসাইডে ওয়াইড করেছিলেন সান্দাকান, ডিকভেলা ব্যর্থ হওয়ায় বেঁচে গেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। যতোখানি সম্ভব, আলগা ডেলিভারিকে কাজে লাগিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সানদাকানকে চারের পর বোলারস ব্যাকড্রাইভে মারা ছয়টা ইনিংসেরই অন্যতম সেরা শট।
সকালটা শুরু হয়েছিল এক ঘন্টায় তিন উইকেটের ঝড়ে। রাতভর মুমিনুল হকের ইনিংস যদি কল্পনা-রোমাঞ্চের মিশেলে অনেক বড় করে থাকেন, তাহলে সকালে আপনি হতাশই হয়েছেন। রঙ্গনা হেরাথের ফুললেংথের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট লেগে কুশাল মেন্ডিসের দারুণ ক্যাচে আগেরদিনের স্কোরের সঙ্গে ১ রান যোগ করেই শেষ হয়েছে তার ইনিংস।
অনেকদিন পর দলে ফেরা মোসাদ্দেক আউট হয়েছেন বড় শট খেলার চেষ্টায়, ইনফিল্ডকে ছাড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড-অনের হাতেই ধরা পড়েছেন। টেস্ট দলে ফেরার প্রথম ধাপটা তার হলো ভুলে যাওয়ার মতোই। মোসাদ্দেকের চেয়েও বেশি তাড়াহুড়ো করলেন মেহেদি হাসান। ১৯ বলে ২০ রানের ইনিংস শেষ হয়েছে রান-আউটে। মাহমুদউল্লাহকে তিন রানের জন্য কল করেছিলেন তিনিই, ডাইভ দিয়েও রক্ষা হয়নি তার। এরপর সানজামুলকে নিয়ে লাঞ্চের আগেই মাহমুদউল্লাহর জুটি ছুঁয়েছিল ৫০।
সেই সানজামুল, মেহেদি, তাইজুল, মুস্তাফিজরা শুধু উইকেটের জন্য হাপিত্যেশই করে গেলেন। মিললো না দ্বিতীয় উইকেটটাই!