• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    শীতকালীন দলবদলঃ কে, কোথায়, কেন?

    শীতকালীন দলবদলঃ কে, কোথায়, কেন?    

    মাসখানেক ধরে বহু ঘটনার জন্ম দিয়ে শেষ হল ২০১৭-১৮ মৌসুমের শীতকালীন দলবদল। সাধারণত মৌসুমের এই সময়টায় ছোট দলগুলোর মধ্যেই দেখা যায় তৎপরতা, আর একরকম শীতনিদ্রাতেই আচ্ছন্ন থাকে বড় দলগুলো। কিন্তু এবার অবশ্য ঘটেছে উলটোটা। বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনাল- সবাই ব্যস্ত ছিল নতুন খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে। সেই দলবদলের বাজারটাকে বিশ্লেষণ করলে কী দাঁড়াবে? 


     

    ফিলিপ কুতিনিয়ো : ইনিয়েস্তার উত্তরসূরি?

    মৌসুমের মাঝপথে ফিলিপ কুতিনিয়োর দল পরিবর্তন অবাক করেছে। ব্রাজিলিয়ানকে দলে ভিড়িয়ে আসলে বার্সা কাজ এগিয়ে রেখেছে ভবিষ্যতের জন্য। লা লিগায় ভালো অবস্থানে আছে দল, কুতিনিয়োর জন্য নেই চ্যাম্পিয়নস লিগের চাপও। নতুন দলে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ পান খুব কম খেলোয়াড়ই।    

     

    চড়া দাম দিয়ে কিনলেও বার্সার মূল একাদশে কুতিনিয়োর থাকাটা হয়ত এখই পাকাপোক্ত নয়। নেইমার চলে যাওয়ায় এই মৌসুমে এর্নেস্তো ভালভার্দে নিয়মিতই খেলাচ্ছেন ইনিয়েস্তাকে। কুতিনিয়োর সংযোজন বাকি সময়টায় চাপ কমাবে ইনিয়েস্তার ওপর থেকেও।   

    দুর্দান্ত ড্রিবলিং, দূরদর্শীতা এবং দূরপাল্লার আগুনে শট- বিশ্বমানের মিডফিল্ডার হওয়ার সম্ভাব্য সব গুণই আছে কুতিনিয়োর ভেতর। লিভারপুলেও নিজেকে প্রমাণ করেই স্পেনে এসেছেন তিনি। লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজদের সাথে বোঝাপড়াটাও দারুণই হওয়ার কথা তার। ফ্রান্সিস ফ্যাব্রিগাস, অ্যালেক্সিস সানচেজদের মতো পরিণতি নিশ্চয়ই চাইবেন না কুতিনিয়ো। স্বদেশী নেইমারও সময় নিয়েছিলেন মেসির সাথে মানিয়ে নিতে। ওই মৌসুম শিরোপাবিহীন কেটেছিল বার্সার। কিন্তু একবার গুছিয়ে ওঠার পর সুয়ারেজ আর মেসিকে সঙ্গে প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নেইমার। মেসিদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কুতিনিয়ো পাচ্ছেন বেশ খানিকটা সময়।  


    অ্যালেক্সিস সানচেজ : 'ইউটার্ন' নিয়ে সফল হবেন?   

    কুতিনিয়োর মতই ক্লাব ছাড়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাকুল ছিলেন সানচেজ। গত বছরের শেষদিকেও তার ম্যানচেস্টার সিটিতে পাড়ি জমানোটা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। এবারের দলবদলে সানচেজ ম্যানচেস্টারেই এসেছেন, তবে সিটির নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিখ্যাত জার্সি নম্বর ৭ গায়ে। 

    মৌসুমের শুরুটা দারুণ হলেও এখন যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে হোসে মরিনহোর দল। মূল স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু অনেকটাই বিবর্ণ। একজন নিয়মিত গোল স্কোরার জরুরীই হয়ে পড়েছিল মরিনহোর জন্য। গত মৌসুমে আর্সেনালের হয়ে ৩৫ গোল করা সানচেজ প্রিমিয়ার লিগের পরীক্ষিত সৈনিক। হেনরিখ মিখিতারিয়ানের কাছ থেকে সেরাটা পাননি বলেই অভিযোগ ছিল মরিনহোর। মূল স্ট্রাইকারের খানিকটা পেছনে সানচেজকে খেলাবেন মরিনহো- ইউনাইটেডের গত দুই ম্যাচের কৌশল দেখে সেটা আঁচ করা যায় সহজেই। 

    লিগে সিটিকে টপকে যাওয়াটা আপাত অবস্থায় অসম্ভবই মনে হচ্ছে ইউনাইটেডের জন্য। তবে নিদেনপক্ষে দ্বিতীয় হয়েও শেষ না করতে পারলে চাপ বাড়বে মরিনহোর ওপরই। সানচেজের সংযোজন নিশ্চিত করতে পারে ইউনাইটেডের প্রাথমিক লক্ষ্য। সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগেও ভালো কিছু করার আশা করতেই পারেন রেড ডেভিল সমর্থকেরা।  

     


                                                  আরও পড়ুনঃ বাতিগোল স্তুতি


     

    হেনরিখ মিখিতারইয়ান : 'আর্মেনিয়ান মেসি' এখন লন্ডনে

    ২০১৭-১৮ মৌসুমে ইউনাইটেড এবং মিখিতারিয়ানের পারফরম্যান্স গ্রাফ যেন একে অন্যের সমার্থক। দারুণ শুরুর পর ফর্ম হারিয়ে ফেলায় শেষমেশ সানচেজের সাথে অদলবদল হয়ে আর্সেনালে এসেছেন এই আর্মেনিয়ান। সানচেজের সাথে ফর্মের বিচারে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও মিখিতারিয়ানের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই তেমন। ইউনাইটেডের আগে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়েও ইউরোপ মাতিয়েছিলেন তিনি।

     

     

    আক্ষরিক অর্থেই সানচেজের সরাসরি বদলি হিসেবে দলে জায়গা পাওয়ার কথা মিখিতারিয়ানের। আক্রমণভাগের দুই উইং-এ বা ‘নাম্বার টেন’ হিসেবেও সমান পারদর্শী তিনি। ইউনাইটেডের মূল একাদশে জায়গা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও আর্সেনালে জায়গাটা পাকাপোক্তই হওয়ার কথা। সানচেজের মতই ইপিএল-এ খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় ইংলিশ লিগে নতুন দলের হয়ে মানিয়ে নেওয়ার সমস্যাটাও থাকছে না মিখিতারিয়ানের।
     

    পিয়ের-এমেরিক অবামেয়াং : আর্সেনালের বহুল প্রতীক্ষিত 'জাতের স্ট্রাইকার'?

    আর্সেনালে নিজের আনুষ্ঠানিক ফটোশ্যূটে বোমাটা ফাটিয়েছেন মিখিতারিয়ানই। অবশেষে ডর্টমুন্ডের সাথে একাধিকবার দর কষাকষির পর শেষমেশ প্রায় ৬৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আর্সেনালে পাড়ি জমিয়েছেন গ্যাবনের এই স্ট্রাইকার।

     

     

    রবিন ভ্যান পার্সি যাওয়ার পর বিশ্বমানের কোনো স্ট্রাইকারকেই দলে ভেড়াতে পারেনি আর্সেন ওয়েঙ্গারের দল। নিকোলাস বেন্ডটনার, মারুয়ান শামাখ, ওলিভিয়ের জিরু- কেউই মেসুত ওজিলের মত দুর্দান্ত এক ‘নাম্বার টেন’-এর যোগানো অগুণতি বলের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এদিকে অবশ্য দুর্দান্ত ফিনিশিং, ড্রিবলিং এবং চিতার মত ক্ষীপ্রগতি- ডর্টমুন্ডে এই তিনের মিশেলে একের পর এক গোল করে গেছেন অবামেয়াং। আর্সেনালে এসে পেয়েছেন সাবেক ডর্টমুন্ড সতীর্থ মিখিতারিয়ানকেও। দুইজনের জুটিটা পুরনো, পরীক্ষাটা নতুন। ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার আলেকজান্ডার লাকাজেতও সঙ্গে। সব মিলিয়ে নিজেদের নতুন আক্রমণ চতুষ্টয় নিয়ে ‘গানার’ সমর্থকেরা আশা দেখতেই পারেন!

     

    আয়মেরিক লাপোর্তে : ওটামেন্ডির যোগ্য সঙ্গী?

    প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম মৌসুমটা খুব একটা ভাল যায়নি পেপ গার্দিওলার। কিন্তু এবার রীতিমত নিজেকে আবারও নতুন করে চেনাচ্ছেন এই স্প্যানিশ কোচ। গার্দিওলার দ্বিতীয় মৌসুমের ২৫ ম্যাচ শেষে ১৫ পয়েন্টের লিড নিয়ে শীর্ষস্থানে থাকলেও রক্ষণভাগে নিকোলাস ওটামেন্ডির সঙ্গী বাছাইয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ‘পেপ’কে। চড়া দামে কেনা এলিয়াকুইম মাঙ্গালা, জন স্টোন্সদের কেউই থিতু হতে পারেননি পুরোপুরি। ইনজুরির ঝামেলায় মূল একাদশ থেকেই ছিটকে গেছেন সিটির একসময়ের অধিনায়ক ভিন্সেন্ট কোম্পানি। ওদিকে ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইককে লিভারপুল কিনে নেওয়ায় এবারের দলবদলে একজন সেন্টারব্যাক কেনার জন্য মরিয়া ছিল সিটি। একেবারে শেষদিকে এসে প্রায় ৬৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার আয়মেরিক লাপোর্তেকে দলে নিয়েছেন গার্দিওলা। ৬ ফুট ২ ইঞ্চির দীর্ঘকায় এই তরুণ ডিফেন্ডারকে কিনতে অনেকদিন ধরেই উঠেপড়ে লেগেছিল বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মত দলগুলো।

     

     

    বয়সের তুলনায় যথেষ্ট পরিণত, প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়ার দারুণ সক্ষমতা, গতিশীল, হেডিং- সব মিলিয়ে রীতিমত ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’-ই বলা চলে এই তরুণ ডিফেন্ডারকে। নিজের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ব্রমের বিপক্ষে ক্লিনশিট রাখার পাশাপাশি কোচের বাহবাও কুড়িয়েছেন লাপোর্তে। একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওটামেন্ডি একজন 'যোগ্য' সঙ্গী পেয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে।