চারদিন শেষে চাপে বাংলাদেশই
প্রথম টেস্ট, চট্টগ্রাম
চতুর্থ দিনশেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫১৩, ২য় ইনিংস ৮১/৩ ( তামিম ৪১, মুমিনুল ১৮, সানদাকান ১/৩, পেরেরা ১/২০)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৭১৩/৯ ডিক্লে. (ডি সিলভা ১৭৩, মেন্ডিস ১৯৬, রোশেন ১০৯, মুস্তাফিজ ১/১১৩, মেহেদি ৩/১৭৩, তাইজুল ২/২১২)
বাংলাদেশ ১১৯ রানে পিছিয়ে
টেস্ট ক্রিকেট আপনাকে বিস্মিত করতে পিছপা হবে না কখনোই। যেমন, আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তে বাড়তি এক ওভারে গুরুত্বপূর্ণ এক উইকেট পড়তে পারে নাটকীয়ভাবে, দিনের শেষে গিয়ে। ব্যাটিং-স্বর্গে হুট করেই এক সেশনে পড়ে যেতে পারে ৫ উইকেট। ১ম ইনিংসে ৫০০ পেরুনো দল ৫ম দিনের আগে নিজেদের আবিষ্কার করতে পারে এমন এক অবস্থানে- যেখানে নিজেদের অনেক কিছু হারানোর শঙ্কা। চট্টগ্রাম টেস্ট এতোকিছু নিয়ে হাজির হলো যেন হঠাৎ করেই।
মুশফিক আগের দুই উইকেট হারানোর চাপ সামলাতে করছিলেন অতিধীর ব্যাটিং, অস্বস্তিতে পড়ে ডাকলেন ফিজিওকে। সেটা পুষিয়ে দিতেই আম্পায়াররা এক ওভার বাড়তি করানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, হেরাথের বলে অনেকখানি পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে যাওয়া মুশফিকের বেরসিক ব্যাট বলকে প্রথমে প্যাডে নামিয়ে পড়লো ঠিক মুশফিকের বুটের ওপর, এরপর সিলি পয়েন্টে কুশাল মেন্ডিসের হাতে। টিভি আম্পায়ারের শরণাপন্ন হওয়ার আগে অন-ফিল্ড আম্পায়ারদের সফট সিগন্যাল নট-আউটই ছিল, বদলে গেল সেটাই। দিনের শেষবেলায় উইকেট হারানোটাকে ‘অলিখিত নিয়ম’ বানিয়ে ফেলা বাংলাদেশ চাপে পড়ে গেল আরও। সম্বল ৭ উইকেট, লিডের বোঝা ১১৯ রানের। সঙ্গে আছে চট্টগ্রামের উইকেটে বোলারদের জন্য ‘কিছু থাকার’ আভাস। শ্রীলঙ্কার তিন স্পিনারই সফল হয়েছেন শেষবেলায়।
২০০ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের ৫২ রানের ওপেনিং জুটির পরও চাপে পড়েছিল দুই ওপেনারের স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আউট হওয়াতে। চাপ বয়ে এনেছিলেন ইমরুল কায়েস, লাকশান সান্দাকানকে সুইপের মতো করে স্কুপ ধরনের কিছু একটা খেলার চেষ্টায় পরিণত হলেন সহজ ক্যাচে। দিলরুয়ান পেরেরার অফস্পিন তাড়া করতে যাননি ঠিক তামিম ইকবাল, তবে ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন আগ বাড়িয়েই। মাশুল গুণেছেন সেটার।
এর আগে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বকে মনে করিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং। বাংলাদেশের কাছে মনে হতেই পারে, যেন অনন্তকাল ধরে ব্যাটিং করেছে শ্রীলঙ্কা! পুরো উল্টো চিত্র শ্রীলঙ্কার, যেন ব্যাটিংয়ের নেশা পেয়ে বসেছিল তাদের। প্রথম সেশনে রোশেন সিলভা করেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। মেহেদির নীচু হওয়া বলে দূর থেকে খেলতে গিয়ে এজ হয়ে লিটনের ক্যাচ বনেছেন।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের সফলতম সেশন ছিল দ্বিতীয়টি, এসেছে তিনটি উইকেট। ৮৭ রানে তাইজুলের বলে বোল্ড হয়ে সেঞ্চুরি মিস করেছেন চান্ডিমাল, ব্যাট-প্যাডের মাঝে রেখেছিলেন ফাঁক। রিভার্স সুইপের চেষ্টায় মেহেদির বলে বটম-এজে লিটনকে ক্যাচ দিয়েছেন ডিকভেলা, এর আগে করেছেন ৬১ বলে ৬২। দিলরুয়ান পেরেরা এলবিডাব্লিউ হয়েছেন সানজামুলের বলে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় স্কোরের রেকর্ড শ্রীলঙ্কারই, ৬ উইকেটে ৭৩০ রানের সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও জেগেছিল। তবে চা-বিরতির পরই তাইজুলের দ্রুত ২ উইকেটে ইনিংস ঘোষণা করেছেন চান্ডিমাল। বড় শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন লাকমাল, হেরাথ হয়েছেন এলবিডাব্লিউ। ৬৭.৩ ওভার বোলিং করে তাইজুল গড়েছেন রেকর্ড, বাংলাদেশের হয়ে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ওভার বোলিংয়ের তালিকায় সাকিব আল হাসানের ৬৬ ওভারকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ৪ উইকেট নিতে খরচ করতে হয়েছে তাকে ২১৯ রান, যা আবার বিশ্বরেকর্ড। পরের রেকর্ডটা নিশ্চয়ই চাননি তাইজুল।
মুশফিক যেমন শেষের ওভারটা খেলতে চাননি। বাংলাদেশ যেমন চায়নি শেষে গিয়ে আবার উইকেট হারাতে। যেমন চায়নি, প্রথম ইনিংসে ৫০০ পেরিয়েও ৫ম দিনের আগে উল্টো চাপে পড়তে।
তবে যেহেতু ফরম্যাটটা টেস্ট, সেটা তো বিস্মিত করবেই।