আড়াই দিনেই হারলো বাংলাদেশ
ঢাকা টেস্ট
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ২২২ (মেন্ডিস ৬৮, রোশেন ৫৬, পেরেরা ৩১, রাজ্জাক ৪/৬৩, তাইজুল ৪/৮৩, মুস্তাফিজ ২/১৭) ও ২য় ইনিংস ২২৬ ( রোশেন ৭০*, তাইজুল ৪/৭৪)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১১০ ও ২য় ইনিংস ১২৩ (মুমিনুল ৩৩, মুশফিক ২৫, দনঞ্জয়া ৫/২৪, হেরাথ ৪/৪৯)
শ্রীলঙ্কা ২১৫ রানে জয়ী
স্পিনে লঙ্কানদের বধ করার কৌশল এঁটে উল্টো নিজেরাই স্পিন-জুজুর শিকার হয়ে গেছে বাংলাদেশ। ৩৩৯ রানের অসম্ভব রান-তাড়াকে আকিলা দনঞ্জয়া ও রঙ্গনা হেরাথ মিলিয়ে বাংলাদেশীদের জন্য মঙ্গলে গিয়ে বসতি গড়ার মতো দুরূহ করে তুলেছেন। দুইজন মিলে নিয়েছেন ৯ উইকেট, ৮ সেশনের মাঝেই দ্বিতীয় টেস্টে হেরে গেছে দুই ইনিংস মিলিয়ে ২৩৩ রান করা বাংলাদেশ।
লাঞ্চের আগেই আভাসটা দিয়ে রেখেছিলেন হেরাথ ও পেরেরা, জয়টা শ্রীলঙ্কার জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল সময়ের ব্যাপার। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন মুমিনুল হক, বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র তিনি ই যা একটু দেখিয়েছেন- শুধু সামনের পায়ে না, পেছনের পায়েও স্পিন খেলতে হয়। বাকিদের প্রায় সবাই সামনের পায়ে খেলার দোষে চরমভাবে দোষী, দনঞ্জয়া-হেরাথ তাদেরকে সামনে এনেছেন, তারপর তাদের ব্যাট ছুঁয়ে ক্যাচ গেছে হয় ডিকভেলার কাছে, নাহয় ব্যাট-প্যাড ফিল্ডারদের কাছে। আর নাহলে তারা বেসামাল হয়ে পড়েছেন, হয়েছেন স্টাম্পড।
লাঞ্চের আগেই শুরুটা করেছিলেন তামিম ইকবাল। দিলরুয়ান পেরেরার ভেতরের দিকে ঢোকা বল তার রক্ষণ ফাঁকি দিয়ে আঘাত করেছে প্যাডে, ইমপ্যাক্ট আম্পায়ারস কল হওয়ায় শুধু রিভিউটাই বেঁচেছিল। ইমরুল নড়বড়ে ছিলেন শুরু থেকেই, ছয় মেরেও জায়গাটা পোক্ত করতে পারেননি। হেরাথকে সামনের পায়ে ডিফেন্স করতে এসে এজড হয়ে ক্যাচ দিয়েছেন পেছনে, ডিকভেলার হাতে। পুরো ইনিংসেই ব্যস্ত ছিলেন শ্রীলঙ্কান উইকেটকিপার, করেছেন ৫টি ডিসমিসাল।
মুমিনুল আউট হয়েছেন ইমরুলের মতো করেই, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে- পার্থক্য বলতে- মুমিনুল চেষ্টা করেছিলেন ড্রাইভের। আকিলা দনঞ্জয়ার প্রথম শিকার লিটন দাস, বিভ্রান্ত লিটনের ব্যাটের হাতল ছুঁয়ে ওঠা ক্যাচ গেছে শর্ট লেগে। মাহমুদউল্লাহ যেন এলিয়েন হয়ে এলেন, দনঞ্জয়ার মানবিক স্পিনের কোনও জবাবই জানেন না তিনি! ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে এলোমেলো এক চেষ্টায় ক্যাচ দিতে পারলেন শুধু স্লিপে। মুশফিক সামনে এসে খেলতে গিয়ে এজড হলেন না, হলেন স্টাম্পড। সাব্বির সামনের পায়ে আসতে গিয়েও আসলেন না, জায়গা থেকেই খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাড তিনি।
রাজ্জাক নিচু হওয়া বলে তুলে মারার চেষ্টায় বেসামাল হয়ে স্টাম্পড। টেইল-এন্ডারদের মতো স্লগ করতে থাকা মিরাজের উইকেট দিয়ে অভিষেকেই ৫ উইকেট হয়ে গেছে দনঞ্জয়ার। এই টেইল-এন্ডেই এক টেস্টে নিজেদের সর্বনিম্ন ২২৬ রানের ট্যালিটা ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ। হেরাথকে তুলে মারতে গিয়ে লাইনে ক্যাচ দিয়েছেন তাইজুল। এ উইকেট দিয়ে বাঁহাতি স্পিনারের টেস্ট উইকেট হলো ৪১৫টি, ওয়াসিম আকরামকে ছাড়িয়ে তিনিই এখন বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটের মালিক।
এর আগে শ্রীলঙ্কার শেষ দুই উইকেট নিতে ৫১ মিনিট ও ১১.৫ ওভার খরচ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আগের দিনের সেরা বোলার মুস্তাফিজের সঙ্গে মিরাজকে দিয়ে শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, তবে সাফল্য এনেছিলেন তাইজুল। তার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন লাকমাল, পরের বলেই এলবিডাব্লিউ হেরাথ।
সেই তাইজুলই আউট হলেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে, ওই হেরাথের বলেই। ব্যাপারটাকে প্রতীকি হিসেবেই নিতে পারেন, ব্যাটসম্যান হেরাথদের বধ করতে এসে উল্টো হেরাথদের হাতেই বধ হতে হলো তাইজুলদের!