'ইতিবাচক' বাংলাদেশের 'অধৈর্য্য' ব্যাটসম্যানরা
ইমরুল কায়েস যেন ক্রিজে থাকতেই চাচ্ছিলেন না। তার ব্যাটিংয়ে একটা চিত্রই ফুটে উঠছিল- স্বভাববিরুদ্ধ খেলা খেলছেন তিনি। সেটার খেসারত দিলেন, ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারা ছয়ের পর রঙ্গনা হেরাথের বলে সামনে পায়ে খেলতে গিয়ে শরীর থেকে বেশ এগিয়ে রাখলেন ব্যাট। ফল- এজ হয়ে নিরোশান ডিকভেলার গ্লাভসজোড়াকে ব্যস্ত রাখা। মুমিনুল আক্রমণাত্মক ছিলেন, আলগা বলকে কাজে লাগিয়েছেন। তবে দুইবার অন্তত অতিরিক্ত বাউন্সে ভড়কে গিয়েছিল তার ব্যাট। ফিল্ডারদের মাঝে পড়েছিল বলে বেঁচে গেছেন। তিনিও আউট হলেন ইমরুলের মতো করেই, শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ করতে গিয়ে।
মুশফিকুর রহিম তো আরও বেশী কিছু করতে চেয়েছিলেন, এক ওভারেই দুইবার চেষ্টা করলেন রিভার্স সুইপের। হেরাথের ঝুলিয়ে দেওয়া বল তাকে প্রলোভন দেখিয়ে সামনে আনলো, এরপর টার্ন ধোঁকা দিয়ে তাকে রেখে গেল বেসামাল অবস্থায়। ক্রিজের বাইরে আসা মুশফিক হলেন স্টাম্পড। মিরপুরের এই উইকেটে থিতু হওয়াটা অভিধানের বাইরেই চলে গিয়েছিল প্রায়, তবে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা ন্যূনতম ধৈর্য্যটাও দেখাতে পারলেন না। আগের দিনই ম্যাচসেরা রোশেন সিলভা বলেছিলেন, এ উইকেটে রান করতে হলে আলগা বলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। তবে সেই আলগা বলের জন্য তো অপেক্ষা করতে হবে!
সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বললেন, দলের কৌশলই ছিল ইতিবাচক থাকার, ‘ব্যাখ্যাটা এটা ছিল, যখন আমাদের এটা নিয়ে কথা হয়েছে, ওরা প্রায় ৩১২ রানের লিডে ছিল। তখন এ ধরনের উইকেটে যদি আপনি (এমন) অভিপ্রায় না দেখান, আপনি যদি ইতিবাচক না থাকেন, আপনি যদি বোলারকে সুযোগ দেন থিতু হওয়ার, তাহলে আপনি বিপদে পড়বেন। আপনাকে অন্তত অভিপ্রায়টা দেখাতে হবে, বল বাছাই করতে সঠিকভাবে।’
বল বাছাইয়ে ভুল হয়ে গেল খোদ অধিনায়কেরই। দনঞ্জয়ার বলে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এলেন ঠিকই, তবে শেষমুহুর্তে শট খেলার বদলে নিজেকে ঢুকিয়ে ফেললেন খোলসে। ফল- স্লিপে ক্যাচ।
‘আপনি কোনটা শট খেলবেন, কোনটা রক্ষণ করবেন, এটা ঠিক করতে হবে। নাহলে আসলে কঠিন। আমাদের মধ্যে যে কথা হয়েছে, আমরা ইতিবাচক থাকব। কিন্তু আমরা যদি বারবার রক্ষণাত্মক খেলতে থাকি, বোলারদের সুযোগ দিতে থাকি- এখানে একটা বল স্পিন হচ্ছে, একটা সোজা যাচ্ছে, একটা নীচু বাউন্স হচ্ছে, -সেদিক থেকে মনে হয় আপনি সুযোগ দিচ্ছেন। সেদিক থেকে বলব, ওরা সবসময়য় চাপটা বজায় রেখেছে।’
এই নীতিটাকেই এই উইকেটে সফল হওয়ার উপায় মানছেন মাহমুদউল্লাহ, ‘আপনি যদি এই তত্ত্বে না যান, তাহলে আপনার সাফল্যের সম্ভাবনাটা আরও কমে যাবে। আপনি যদি মনে করেন আপনি রক্ষণাত্মক খেলবেন, আপনি পারবেন না। আমার যা জ্ঞান, আমার যা অভিজ্ঞতা- আমার মনে হয় না যে এই ধরনের উইকেটে আপনি সেটা পারবেন। কারণ বোলার ছয়টা বল করবে, সাত নম্বর বলে আপনাকে সুন্দর মতো সিলিতে অথবা স্লিপে নিয়ে যাবে (ক্যাচ)। আর আপনাকে স্ট্রোক খেলতে হবে। আমি যেটা বললাম, অভিপ্রায় অবশ্যই থাকবে, কিন্তু আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে আপনি কোন বলটা মারতে পারবেন। না হলে ওরকম ভুল শট খেললে তো আপনি আউট হবেন। কিন্তু অন্তত আপনি যদি চেষ্টা না করেন, তাহলে তো আপনি সুযোগই দিচ্ছেন না।’
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা আছে, সঙ্গে আছে স্পিনারদের সেভাবে কার্যকরী হয়ে না ওঠার দায়ও। সাফল্য পেতে এমন উইকেটে ধারাবাহিক থাকতে হবে, পিচের প্রকৃতিই এমন- বাকিটা করে নেবে পিচই। দনঞ্জয়া-হেরাথ-পেরেরারা সেটাই করেছেন। জায়গামতো বল ফেলে গেছেন, ব্যাটসম্যানরা সামনের পায়ে ঝুঁকেছেন, তারপর ধোঁকা খেয়েছেন টার্ন ও অতিরিক্ত বা অসম বাউন্সে।
‘আপনি হেরাথ, দিলরুয়ান বা আকিলার বোলিং দেখেন, আমরা যে কয়টা বাউন্ডারি মেরেছি অনেক ঝুঁকি নিয়ে মারতে হয়েছে’, দুই দলের স্পিনারদের মাঝেও পার্থক্য দেখছেন অধিনায়ক, ‘অন্যদিকে আমাদের বোলাররা যখন বল করেছে- এই উইকেটে যত সামনের দিকে খেলাবেন, ব্যাটসম্যানদের রান করা কষ্ট। আমাদের স্পিনাররা পাঁচটা বল ভালো করেছে, একটা বল সহজ বাউন্ডারি দিয়েছে। এই ব্যাপারটা ওদের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে দিয়েছে।’
এখানে বাড়তি কাজ করার সুযোগ দেখছেন তিনি, ‘আমার মনে হয় এই ব্যাপারে আমাদের কাজ করার আছে। আমাদের এই উইকেটে ধৈর্য্যটা দরকার। আমাদের স্পিনারদের আরেকটু ভালো করা উচিত ছিল, কিন্তু আমাদের ব্যাটিংটাই দায়ী ছিল বেশি।’
শেষের কথা দিয়েই আসলে সব বলে দিলেন মাহমুদউল্লাহ। মানসিকতা, অভিপ্রায় তো আগে থেকে ঠিক করে রাখা যায়, উইকেটে গিয়ে সেসব কাজে লাগাতে প্রয়োজন ধৈর্য্য। এ উইকেটে যেটা দরকার ছিল, এ উইকেটে যেটা দেখাতেই ব্যর্থ বাংলাদেশ!