সিলেটেও উড়ে গেল বাংলাদেশ
শ্রীলঙ্কা ২১০/৪ (মেন্ডিস ৭০, গুণাথিলাকা ৪২, শনাকা ৩০*, থারাঙ্গা ২৫, মুস্তাফিজ ১/৩৯)
বাংলাদেশ ১৩৫ অল-আউট, ১৮.৪ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৪১, তামিম ২৯, সাইফউদ্দিন ২০, মাদুশাঙ্কা ২/২৩, গুণাথিলাকা ২/৩)
শ্রীলঙ্কা ৭৫ রানে জয়ী
দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কান বোলারদের সমস্যা হওয়ার কথা ছিল শিশিরের প্রভাবে। ফলে, রান তাড়ায় সুবিধা হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের। আগের ম্যাচ থেকে চারটি পরিবর্তন- নতুন বাংলাদেশ দেখার কথা ছিল এদিন। অন্তত মাহমুদউল্লাহর সিদ্ধান্ত বলছিল এমনই। টসে চান্ডিমালও বলছিলেন, সবাই তো আর প্রতিদিন টসে জেতে না!
তবে, কেউ কথা রাখল না। টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া বাংলাদেশকে গুণতে হলো ২১০ রান। বোলিংয়ে খেই হারানোর পর অপার সৌন্দর্যের ভেন্যু সিলেটের ওপর জেঁকে বসা আঁধারেই যেন মিলিয়ে গেল সব। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৭৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হার, টেস্ট সিরিজ হারের পর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে হতে হলো হোয়াইটওয়াশ।
টসে হেরে ব্যাটিং- দুই শ্রীলঙ্কান ওপেনারকে দেখে অবশ্য তেমন কিছু মনেই হলো না! পাওয়ারপ্লেতে ইন-ফিল্ডদের দারুণভাবে ছাড়ালেন গুণাথিলাকা-পেরেরারা, তুললেন ৬৩ রান। ৫টি চারের সঙ্গে ৪টি ছয়। ৮ থেকে ১২- এই ৪ ওভার একটু স্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ। ২৯ রানের বিপরীতে মিলেছে ১টি উইকেট। তবে শেষ ৮ ওভারের ঝড়ে উড়ে গেছে সেই স্বস্তির খেলাঘর- পেরেরার ১৭ বলে ৩১, থারাঙ্গার ১৩ বলে ২৫ ও শনাকার ১১ বলে ৩০ রানের ইনিংসগুলো যেন ছিল একেকটা গ্রেনেড! শ্রীলঙ্কা পেরিয়েছে ২০০, এ নিয়ে বাংলাদেশ ৫ম বার টি-টোয়েন্টিতে ২০০ বা এর বেশি রান হজম করলো।
প্রথম উইকেটের জন্য ১১তম ওভার ও একজন পার্টটাইমারের অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অন্তত দুইবার ‘জীবন’ পাওয়া দানুশকা গুণাথিলাকা ক্যাচ দিয়েছেন তামিম ইকবালের হাতে, লং-অফে সৌম্য সরকারের বলে। সৌম্যর প্রথম টি-টোয়েন্টি উইকেট এটি। থিসারা পেরেরাও ফিরেছেন একইভাবে, এবার আবু জায়েদ নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট। অনেক ভুগিয়ে মেন্ডিস ফিরেছেন মুস্তাফিজের শর্ট অব আ লেংথের বলে পুল করতে গিয়ে, লং-অনে ক্যাচ নিয়েছেন অভিষিক্ত মেহেদি। শেষ ওভারে গিয়ে আউট হয়েছেন থারাঙ্গা, লং-অফে সাইফউদ্দিনের বলে ক্যাচ দিয়ে। আগের ম্যাচের মতোই সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার নাজমুল, ৪ ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান। এই নাজমুলকে একটু মনে রাখুন, শেষে গিয়ে কাজে লাগবে।
২১১ রানের লক্ষ্য, আগের দিনই টি-টোয়েন্টির নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা ভাঙতে হতো বাংলাদেশকে। পাওয়ারপ্লেতে এলো মাত্র ৪০ রান, বাংলাদেশের দুর্দশা বাড়াতে গেল ৩ উইকেট। দনঞ্জয়ার বেশি বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে আকাশে তুলেছেন সৌম্য, মাদুশাঙ্কার বলে টাইমিংয়ের ট-ও খুঁজে পাননি মুশফিক ও মিঠুন। ২.১ ওভার করে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে উঠে গেলেন মাদুশাঙ্কা- তবুও শ্রীলঙ্কাকে চেপে ধরতে পারার কথা যেন ভাবতেও পারলো না বাংলাদেশ!
তামিম টিকে থাকলেন শুধু ফুললেংথের বলে শরীর থেকে দূরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেওয়ার জন্যই, সেই সঙ্গে অ্যাপোনসোকে দিয়েছেন প্রথম উইকেটের স্বাদ। মেন্ডিসের বলে এরপর প্লাম্ব আরিফুল। ৩১ বলে মাহমুদউল্লাহর ৪১ রানের ইনিংস বিশাল ক্ষতে ওষুধ দিতে পারলো না, উল্টো সাইফউদ্দিনের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে রান-আউট হয়ে আরও দগদগে করলেন সেটা। সেই সাইফউদ্দিন উদানার বলে পুল করতে গিয়ে সোজা ক্যাচ দিলেন মিড-উইকেটে। টেইল-এন্ডাররা আউট হলেন তাদের মতো করেই, এতো বর্ণনা না করলেও চলবে সেগুলোর। তবে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন আবু জায়েদ, গুণাথিলাকাকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারতে গিয়ে হলেন স্টাম্পড। গুণাথিলাকা দুই হাত মাথার ওপর তুলে করলেন ‘নাগিন’ উদযাপন, নন-স্ট্রাইক থেকে চেয়ে চেয়ে দেখলেন শুধু ‘নাগিন’ নাজমুল।
চিত্রটাকে প্রতীকি হিসেবে ধরতে পারেন। টসে সিদ্ধান্তের পর উদযাপনের কথা ছিল বাংলাদেশের, সিরিজজুড়েই উদযাপন নিয়ে অনেক রব উঠেছিল বাংলাদেশের, অথচ উদযাপন করে গেল শ্রীলঙ্কা।
ওই যে, কেউ কথা রাখলো না। কেউ কথা রাখে না!