• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    সিটি-আর্সেনাল ফাইনাল ছাপিয়ে কন্তে-মরিনহো দ্বন্দ্ব

    সিটি-আর্সেনাল ফাইনাল ছাপিয়ে কন্তে-মরিনহো দ্বন্দ্ব    

    যে ম্যাচের উত্তাপটা বেশি ডাগআউটেই

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম চেলসি, বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

     

    অক্টোবর ২৩, ২০১৬। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে মুখোমুখি চেলসি এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। হোসে মরিনহোর দলকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে রীতিমত অপদস্থই করল আন্তোনিও কন্তের চেলসি। প্রত্যেক গোলের পর নিজের স্বভাবসুলভ বুনো উল্লাসে মেতেছিলেন কন্তে। অমন উদযাপন ভালোভাবে নেননি মরিনহো। সেদিন থেকে আজ অব্দি, সুযোগ পেলেই একে অন্যের দিকে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির সুযোগ হাতছাড়া করেননি দুইজনের কেউই। গত কয়েক মাসে দুইজনের কথার লড়াই ছাপিয়ে গেছে আগের সবকিছুকেও! মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে তাই ডাগআউটের লড়াইটাও কম আকর্ষনীয় হবে না!

    এই মৌসুমে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে আবারও মরিনহোকে হারিয়েছেন কন্তে। সব মিলিয়ে চার দেখায় মরিনহোর জয় মাত্র একটি, বাকি তিনবার জিতেছেন কন্তে। আজ ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইউনাইটেড বনাম চেলসির চেয়ে বরং মরিনহো-কন্তের মধ্যকার লড়াই-ই ফিরছে সবার মুখে মুখে।

    স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের আগে দুই কোচের সংবাদ সম্মেলনে উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গই। তবে নিজের ব্যক্তিগত রেষারেষি এড়িয়ে ম্যাচের ওপরই জোর দিয়েছেন কন্তে, “তারা (ইউনাইটেড) এই মৌসুমে দারুণ ফর্মে আছে। নিজেদের মাঠে তাদের হারানোটা বেশ কঠিন হবে আমাদের জন্য। ৯০ মিনিটের পুরোটা সময়ই নিজেদের সেরাটা দিতে হবে আমাদের”।

    মরিনহোর সাথেও হিমশীতল সম্পর্কের ইতি টানতে চান- এমনটাই জানালেন কন্তে, “অতীতে আমরা দু’জনেই একে অপরের ব্যাপারে অনেক কিছু বলেছি। কিন্তু আমি এসব মনে রাখতে চাই না। আজকের ম্যাচ আমাদের মধ্যে নয়, আমাদের দু’দলের মধ্যে”। মরিনহো অবশ্য নিজের মতোই আছেন। কন্তের ব্যাপারে তার ধারনা আগের মতো আছেই বলেই মনে হয়েছে তার কথায়। “আমি আগেই বলেছি, এই প্রসঙ্গে (কন্তের সাথে সম্পর্ক) আমি কোনো কথাই বলব না। সে একজন ভাল ম্যানেজার, চেলসি দারুণ একটি দল”- মরিনহো। ম্যাচের আগে কন্তের সাথে হাত মেলাবেন কিনা, এমন প্রশ্নে রহস্যময় এক হাসি দিয়েই এড়িয়ে গেছেন মরিনহো।

     

     

    মৌসুমের অন্যতম ‘হাই ভোল্টেজ’ ম্যাচের আগে স্কোয়াডের অনেককেই পাচ্ছেন না মরিনহো। ইনজুরির কারণে দলে থাকছেন না ইব্রাহিমোভিচ, মারুয়ান ফেলাইনি, মার্কোস রোহো, ফিল জোন্স, দালি ব্লিন্দ, অ্যান্ডার হেরেরা। ইনজুরি কাটিয়ে না উঠায় চেলসির হয়ে ম্যাচটি মিস করবেন রস বার্কলি, তিয়েমুয়ে বাকায়োকো এবং দাভিদ লুইজ। সাবেক দলের হয়ে নিজেদের প্রমাণ করার বাড়তি অনুপ্রেরণা নিয়েই মাঠে নামবেন লুকাকু, নেমানিয়া মাতিচ এবং হুয়ান মাতা। সাবেক কোচ হিসেবে আজ  লুকাকু বনাম অ্যাজপিলিকুয়েতা, মোরাতা বনাম বাই, হ্যাজার্ড বনাম ভ্যালেন্সিয়া, সানচেজ বনাম মোজেস, কান্তে বনাম মাতিচ, পগবা বনাম ফাব্রেগাস- দু’দলের বিশ্বমানের তারকাদের মধ্যে এই একক লড়াইগুলোর গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।

     

    সম্ভাব্য একাদশঃ

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (৪-২-৩-১): ডি গেয়া; ভ্যালেন্সিয়া, স্মলিং, বাই, ইয়ং; মাতিচ, পগবা; মার্শিয়াল, পগবা, সানচেজ; লুকাকু

    চেলসি (৩-৪-৩): কর্তোয়া; অ্যাজপিলিকুয়েতা, ক্রিস্টেনসেন, রুডিগার; মোজেস, ফাব্রেগাস, কান্তে, আলোন্সো; উইলিয়ান, মোরাতা, হ্যাজার্ড

     

    ফর্ম বা লিগটেবিলে অবস্থানের বিচারে এগিয়ে থাকলেও চেলসির বিপক্ষে সাম্প্রতিক রেকর্ড অনুকূলে নেই ইউনাইটেডের। শেষ ১৪ ম্যাচে মাত্র ১ বার ‘ব্লুজ’দের হারিয়েছে ‘রেড ডেভিল’রা। আর নিজেদের প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে চেলসির কাছেই সবচেয়ে বেশিবার (১৮) হেরেছে ইউনাইটেড; সবচেয়ে বেশি গোলও (৬৭) হজম করেছে চেলসির কাছেই।

    মরিনহো না কন্তে- কথার লড়াইয়ের পর মাঠের লড়াইয়ে জয়ী হবেন কে? লুকাকু না মোরাতা- কে জ্বলে উঠবেন দলের প্রয়োজনে? হ্যাজার্ড না সানচেজ- শেষ হাসিটা হাসবেন কে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আজকের বহুল প্রতীক্ষিত ম্যাচটির পরই।

     

    সিটির ‘পাঁচে তিন’?

    ম্যানচেস্টার সিটি বনাম আর্সেনাল; ইএফএল কাপ ফাইনাল; বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৩০

     

    গত চার মৌসুমে দু’বার ইএফএল কাপের ফাইনালে খেলেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। সান্ডারল্যান্ড এবং লিভারপুলকে হারিয়ে দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ‘সিটিজেন’রা। আজ ওয়েম্বলিতে আর্সেনালকে হারালেই ইংল্যান্ডে নিজের প্রথম শিরোপার স্বাদ পাবেন পেপ গার্দিওলা। গত চার বছরে তিনবার এফএ কাপ জিতলেও সেই ১৯৯৩ সালে শেষবার লিগ কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল ‘গানার’রা। লিগে আর্সেনালকে হারালেও ওয়েম্বলিতে ফাইনালের আগে সতর্কই থাকছেন গার্দিওলা, “আর্সেনাল ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা দল। বিশেষ করে ওয়েম্বিতে তারা সবসময়ই ভাল খেলে। আগামীকাল (আজ) মৌসুমের অন্যতম কঠিন ম্যাচে খেলব আমরা। নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে শিরোপা জেতা সম্ভব বলে মনে হয় আমার”।

     

     

    ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে কাউকে পাত্তা না দেওয়া সিটির বিপক্ষে আশাবাদীই থাকছেন আর্সেনাল ওয়েঙ্গার, “সবাই জানে সিটি এই মৌসুমে ঠিক কতটা দুর্দান্ত খেলছে। কিন্তু আগামীকালের ম্যাচটা একটি ফাইনাল। ম্যাচের ৯০ মিনিট যে ভাল খেলবে, দিনশেষে সে-ই শিরোপা ঘরে তুলবে। ওয়েম্বলিতে আমরা বরাবরই ভাল খেলি। সিটিকে হারাতে হলে আমাদের পুরোটা ম্যাচই আমাদের ভাল করতে হবে, বিশেষ করে রক্ষণভাগে।"


    জিততে হলে শিরোপা....

    ফাইনালে 'আন্ডারডগ' হিসেবেই মাঠে নামবে আর্সেনাল। সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে সিটিজেনরা তাদের প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে আছে অনেকটাই। তবে ফাইনাল বলে কথা! সিটিকে হারাতে তাই সবরকম চেষ্টাই চালাবেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। মৌসুমের প্রথম ফাইনালের আগে আর্সেনাল দলে ফিরছেন অ্যারন রামসে এবং মেসুত ওজিল। গত তিন সপ্তাহ ধরে মাঠের বাইরে থাকা দলের অন্যতম দুই তারকাকে এমন ম্যাচের আগে ফিরে পাওয়াটা আর্সেনালের জন্য বিশাল বড় পাওয়া। তবে ইনজুরির কারণে থাকছেন না আলেকজান্ডার লাকাজেত এবং সান্তি কাজোরলা। এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে কারাবাও কাপে খেলায় ফাইনালে থাকছেন না হেনরিখ মিখিতারিয়ানও। ওদিকে বাসেলের সাথে ইনজুরিতে পড়ায় রাহিম স্টার্লিং-এর খেলা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। তবে স্টার্লিং না থাকলেও এই ম্যাচ দিয়েই প্রায় মাস দুয়েক পর মাঠে ফিরবেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল হেসুস। সিটিকে আটকাতে হলে অবশ্যই দুই উইঙ্গার বার্নার্দো সিলভা এবং লিরয় সানেকে দমিয়ে রাখতে হবে আর্সেনালের। সেক্ষেত্রে মূল দায়িত্বটা আসবে দুই ফুলব্যাক হেক্টর বেয়ারিন এবং সিড কোলাসিনাচের কাঁধে। এই মৌসুমে সিটির সাফল্যের সবচেয়ে বড় ভাগীদার  কেভিন ডি ব্রুইনের দিকে আর্সেনালকে রাখতে হবে আলাদা নজর। দায়িত্বটা পড়ার কথা গ্রানিত শাকার ওপরই। সিটির অন্যতম এই তিন ফরওয়ার্ডকে আটকিয়েই জয় ছিনিয়ে এনেছিল উইগান। সিলভা-সানে-ডি ব্রুইনরা নিজেদের মেলে ধরতে না পারায় সার্জিও আগুয়েরোও ছিলেন নিষ্প্রভ। আর্সেনালের স্ট্রাইকার পিয়ের-এমেরিক অবামেয়াং-এর সাথে ওজিলের বোঝাপড়াই হয়ত গড় ফলাফল নিয়ে আসতে পারে আর্সেনালের পক্ষে। সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে দুই সেন্টারব্যাক জন স্টোনস এবং নিকোলাস ওতামেন্ডিকে। মধ্যমাঠে জ্যাক উইলশেয়ার -শাকা বনাম ফার্নান্দিনহো-গুন্ডোয়ানের লড়াইটাও হবে দেখার মত।

     

    সম্ভাব্য একাদশঃ

    ম্যানচেস্টার সিটি (৪-২-৩-১): এডারসন; ওয়াকার, স্টোন্স, ওতামেন্ডি, ডেলফ; ফার্নান্দিনহো, গুন্ডোয়ান; সিলভা, ডি ব্রুইন, সানে; আগুয়েরো

    আর্সেনাল (৪-২-৩-১): চেক; বেলেরিন, কসিয়েলনি, মুস্তাফি, কোলাসিনাচ; শাকা, উইলশেয়ার; ইওবি, ওজিল, ওয়েলবেক; অবামেয়াং

     

    দু’দলের সর্বশেষ ৫ দেখায় সিটি জিতেছে ২ বার, আর্সেনালের জয় ১টিতে। অন্য দুটি ম্যাচ হয়েছে ড্র। ম্যানেজার হিসেবে এটি গার্দিওলার অষ্টম ফাইনাল, ২০১১ সালে বার্সেলোনার হয়ে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হার বাদে বাকি ৭টিতেই জিতেছেন তিনি। ওয়েঙ্গারের রেকর্ডটাও ফেলনা নয় একেবারেই। ১০ ফাইনালের ৭টিতেই জিতেছেন তিনি। গার্দিওলা কি পারবেন ইংল্যান্ডে নিজের প্রথম শিরোপা জিততে? নাকি প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ এবং লিগ কাপ জেতা ম্যানেজারদের সংক্ষিপ্ত সাতজনের তালিকায় নাম লেখাবেন ওয়েঙ্গার?