আর্সেনালকে হারিয়ে গার্দিওলার প্রথম শিরোপা
স্পেন, জার্মানির কাপ প্রতিযোগিতা গুলোয় ৮ বার ফাইনাল খেলেছিল তার দল। এর মধ্যে ৭ বারই শিরোপা ঘরে তুলেছিলেন পেপ গার্দিওলা। কিন্তু ভেন্যু যখন ওয়েম্বলি, তখন প্রতিপক্ষ আর্সেনালকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই একেবারেই। কারণ? এই স্টেডিয়ামে নিজেদের শেষ সাত ম্যাচের প্রতিটিতেই যে জিতেছে আর্সেনাল! তবে টানা জয়ের রেকর্ডটা আজ আর ৮-এ নিয়ে যাওয়া হল না আর্সেন ওয়েঙ্গারের, হল না ইংলিশ ফুটবলের সবগুলো শিরোপা জেতা হাতে গোণা কয়েকজন ম্যানেজারদের তালিকায় নাম লেখানোও। ক্যারাবাও কাপের ফাইনালে ‘গানার’দের ৩-০ গোলে হারিয়ে ইংল্যান্ডে নিজের প্রথম শিরোপা জিতে নিলেন গার্দিওলা। আর্সেনালের হয়ে ২২ বছরের ক্যারিয়ারে এখনও লিগ কাপের শিরোপাটা তাই অধরাই রয়ে গেল ওয়েঙ্গারের। এও প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল হারা দলও আর্সেনাল! ফাইনালে সিটির হয়ে গোল তিনটি করেছেন সার্জিও আগুয়েরো, ভিনসেন্ট কম্পানি এবং ডেভিড সিলভা।
ওয়েম্বলিতে অবশ্য গোলের প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল আর্সেনালই। ৮ মিনিটে মেসুত ওজিলের পাস থেকে শট করেন স্ট্রাইকার পিয়ের-এমেরিক অবামেয়াং। কিন্তু গোলের মাত্র গজ তিনেক দূর থেকে দারুণভাবে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দেন সিটি গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো। ম্যাচের প্রথম দিকে বল দখল, গোলের সুযোগ তৈরি- সব দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল ‘গানার’রাই। মাঝমাঠে অ্যারন রামসে, জ্যাক উইলশেয়ারদের সাথে পেরে উঠছিলেন না ফার্নান্দিনহো, ইয়াকি গুন্ডোয়ানরা। কিন্তু এক মূহূর্তের মনঃসংযোগের ব্যাঘাতই কাল হয়ে দাঁড়ায় ওয়েঙ্গারের দলের। ১৯ মিনিটে ব্রাভোর গোলকিক থেকে লাফিয়ে হেড করতে গিয়ে বল মিস করেন ডিফেন্ডার স্কোদরান মুস্তাফি। জার্মান এই ডিফেন্ডারের ভুলে বল পেয়ে যান আগুয়েরো। আর্সেনাল গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনাকে এগিয়ে আসতে দেখে ডিবক্সের বাইরে থেকেই চিপ করেন এই আর্জেন্টাইন। ওসপিনার মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ালে উল্লাসে ফেটে পড়ে ওয়েম্বলিতে উপস্থিত প্রায় হাজার চল্লিশেক সিটি সমর্থক। আগুয়েরোর গোলের পর থেকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি সিটিকে। আগুয়েরো-ডি ব্রুইন-সানেদের একের পর আক্রমণে ম্যাচের বাকিটা সময় রীতিমত তটস্থ ছিল আর্সেনালের রক্ষণভাগ।
এক গোলে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করলেও আর্সেনালকে তখনও আশা দেখাচ্ছিল ইতিহাস। ‘৮৭ সালের পর ‘৯৩-এ শেষবার ইএফএল কাপ ঘরে তুলেছিল আর্সেনাল। এই দুই ফাইনালেই পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি হেসেছিল ‘গানার’রাই। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮ মিনিটেই আর্সেনালের আশায় গুঁড়েবালি করে দেন কম্পানি। কর্নার থেকে গুন্ডোয়ানের নেওয়া শটে পা ছুঁয়ে ওসপিনাকে পরাস্ত করেন সিটির বেলজিয়ান অধিনায়ক। গত চার বছরে তার অধিনায়কত্বেই দু’বার ইএফএল কাপ জিতেছিল ‘সিটিজেন’রা। গোলের পর সিটি সমর্থকদের সাথে তার উদযাপনই বলে দেয়, আরও এক ইনজুরি জর্জরিত মৌসুমে দলের জয়ে অবদান রাখতে ঠিক কতটা মুখিয়ে ছিলেন তিনি। কম্পানির গোলের পর ম্যাচ থেকে ছিটকেই পড়ে আর্সেনাল। ৬৫ মিনিটে ‘গানার’দের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন সিলভা। দানিলোর পাস নিয়ন্ত্রণে এনে বাঁ-পায়ের জোরাল শটে ব্যবধান ৩-০ করেন এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। সিলভার গোলের কিছুক্ষণ পরই ওয়েম্বলি ছাড়তে থাকেন আর্সেনাল সমর্থকেরা। যাওয়ার সময় ওয়েঙ্গারকে উদ্দেশ্য করে ‘গানার’ সমর্থকদের দুয়োধ্বনিতে ভারী হয়ে ওঠে ওয়েম্বলির বাতাস। রেফারির শেষ বাঁশির পরপরই সিটির ফুটবলার এবং সমর্থকদের বুনো উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা ওয়েম্বলি।
ইংল্যান্ডে নিজের প্রথম ফাইনালেই শিরোপার স্বাদ পেলেন গার্দিওলা। ওদিকে টানা তিনবার ইএফএল কাপের ফাইনাল হারার ‘রেকর্ড’ নিয়েই মাঠ ছাড়ল আর্সেনাল। গার্দিওলার প্রথম হলেও এটি ম্যানচেস্টার সিটির পঞ্চম লিগ কাপ শিরোপা। সিটির চেয়ে বেশি এই লিগ কাপের শিরোপা আছে কেবল লিভারপুলের, ৮ বার।