• দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
  • " />

     

    স্টার্ক দাবানলে জ্বলে-পুড়ে ছারখার দক্ষিণ আফ্রিকা

    স্টার্ক দাবানলে জ্বলে-পুড়ে ছারখার দক্ষিণ আফ্রিকা    

    অস্ট্রেলিয়া ৩৫১ অল-আউট (মিচেল মার্শ ৯৬, স্মিথ ৫৬, ওয়ার্নার ৫১, মহারাজ ৫/১২৩) 
    দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬২ অল-আউট (ডি ভিলিয়ার্স ৭১*, মার্করাম ৩২, স্টার্ক ৫/৩৪, লায়ন ৩/৫০)


    পেসারদের নাকি উইকেট লাগে না। পেসার মানে ফাস্ট বোলার, ফাস্ট মানে ফাস্ট, খুব ফাস্ট। ফাস্ট মানে ভয়ঙ্কর, ফাস্ট মানে নতুন বলে যে সুইং-ই হোক, পুরোনো বলে রিভার্স সুইংয়ের ধারালো সব অস্ত্র। ডারবানে দেখা গেল ফাস্ট বোলিংয়ের অনুপম প্রদর্শনী, ৩৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে এক অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার যেন সৃষ্টি করলেন দাবানল। সে দাবানলের নাম? মিচেল স্টার্ক! স্টার্ক দাবানলে জ্বলে-পুড়ে-ছারখার দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন-আপ। এবি ডি ভিলিয়ার্স শুধু একপ্রান্তে অপরাজিত থাকলেন, তিনি যেন সেই দমকল কর্মী, পাইপ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন, শুধু আগুন নেভানোর জন্য পানির সরবরাহটুকুই নেই! 

    প্রথম দিনশেষে বা আজও ডারবানের পিচ নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর, দক্ষিণ আফ্রিকান ইনিংসেও সেরা বোলার একজন স্পিনার! ঘরের মাঠে কেশভ মহারাজ নিলেন ৫ উইকেট, সেটা দেখে হয়তো মুচকি হেসেছিলেন ন্যাথান লায়ন। 

    সিরিজে নিজের প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত হানলেন অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার। ডিন এলগারের ফিরতি ক্যাচ নিয়েছেন বাঁদিকে লাফিয়ে পড়ে, আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে শর্ট লেগ ক্যামেরন ব্যানক্রফটের হাতে ধরা পড়েছেন হাশিম আমলা। কামিন্সের বাউন্সারে বেসামাল হয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েছেন এইডেন মার্করামও, তার উইকেট দিয়েই হয়েছে চা-বিরতি। ফ্যাফ ডু প্লেসি এরপর যোগ দিয়েছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে, তবে দুইজনের জুটি টেকেনি বেশিক্ষণ। 

    ডু প্লেসি, ডি ব্রুইন, ভারনন ফিল্যান্ডার- তিনজনই শিকার স্টার্কের অ্যাঙ্গেলের। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ঠিক জায়গামতো বল ফেলেছেন স্টার্ক, এ তিনজনের ব্যাট ছুঁয়ে ক্যাচ গেছে পেছনে। একটা ডেলিভারি যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছিল আরেকটাকে, ফিল্যান্ডারেরটির তো কোনও জবাবই নেই! 

    টেইল-এন্ডাররা আউট হয়েছেন তাদের মতো করেই, স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরাই যেখানে হাবুডুবু খেলেন, তারা কোন ছার! হ্যাজলউডের বলে বোল্ড মহারাজ, এরপর রাবাদাকে ওভার দ্য উইকেটে এলবিডাব্লিউ করলেন স্টার্ক! এখানেও সেই ‘অ্যাঙ্গেল’ এর খেল! মরনি মরকেলের উইকেটটা ফুটিয়ে তুললো পুরো দিনকে, ফুললেংথে সোজা দ্রুতগতির। মরকেল যতই জানুন, কিছুই করার নেই! 

    তবে অনেক কিছু করলেন শুধু ওই ডি ভিলিয়ার্সই। কাভার ড্রাইভ বলুন, স্ট্রেইট ড্রাইভ বলুন- খেললেন চমৎকার সব শট, মারলেন ১১টি চার। ব্লক করলেন দারুণ আত্মবিশ্বাসে। ওপাশে যখন সঙ্গীরা সঙ্গ দেওয়ার আগেই যাওয়া-আসা করছেন, ডি ভিলিয়ার্স দাঁড়িয়ে থাকলেন একা! শেষ পর্যন্ত ভুগলেন ওই অদ্ভুত সঙ্গীহীনতায়! 

    সকালে পেইনকে নতুন বলের দারুণ প্রদর্শনীতে ধাঁধিয়ে দিয়েছিলেন রাবাদা, তিনি ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। কামিন্স ও স্টার্ক মহারাজের টার্নে ধোঁকা খেয়ে হয়েছেন বোল্ড। আর বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়ে যেন খেলছিলেন মিচেল মার্শ, তবে সেঞ্চুরিটা মিস করলেন ফিল্যান্ডারকে তুলে মারতে গিয়ে। মিড-অনে দুই হাত ওপরে তুলে ধরলেন মরনি মরকেল, দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে লম্বা ক্রিকেটার! মার্শ এটা ভাবতেই পারেন, মরকেল ছাড়া আফ্রিকান অন্য কোনও ফিল্ডার থাকলেই তার সেঞ্চুরির সম্ভাবনাটা বেড়ে যেত! 

    এই মার্শের সঙ্গেই গুরুত্বপূর্ণ এক জুটিতে গুরুত্বপূর্ণ এক ক্যামিও খেলেছিলেন স্টার্ক। করেছিলেন ২৫ বলে ৩৫ রান। তবে দিনশেষে নিজেই তো নিজেকে ভুলিয়ে দিলেন তিনি! ব্যাটসম্যান স্টার্ককে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে নায়ক বোলার স্টার্ক। ফাস্ট বোলার স্টার্ক!