• কোপা আমেরিকা
  • " />

     

    ২২ বছরের অপেক্ষা ঘুচবে আর্জেন্টিনার?

    ২২ বছরের অপেক্ষা ঘুচবে আর্জেন্টিনার?    

    কোপার গ্রুপ পর্যালোচনার আজকের পর্বে থাকছে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে আর জ্যামাইকাকে নিয়ে গড়া ‘গ্রুপ অব ডেথ’ হিসেবে খ্যাত গ্রুপ 'বি'।

     

    গ্রুপ অব ডেথ। সোজা বাংলায় 'মৃত্যুকূপ'। এই টার্মটা বিশ্বকাপ বা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে যতটা প্রচলিত, কোপা আমেরিকাতে ততটা নয়। কারণ বিশ্বকাপ বা ইউরোতে প্রত্যেকটা দলের পার্থক্য থাকে খুব কম। কোপাতে এই ‘সমস্যা’ ছিল না এতোদিন।

     

    দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ‘কনমেবল’এর সদস্য সংখ্যা ১০ হলেও ‘সিরিয়াস’ ফুটবল খেলতো এতোদিন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়েই। শুনতে খারাপ শোনাবে হয়তো, তবে সত্যি কথা এটাই। এখন পর্যন্ত যে ২০ বার বিশ্বকাপ হয়েছে তার মধ্যে ৯ বারই শিরোপা জিতেছে এই ৩ দল মিলে। একটা বৈশ্বিক টুর্নামেন্টেই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে কোপার মতো একটা আন্তঃমহাদেশীয় টুর্নামেন্টে কি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ৪৩ বারের মধ্যে ৩৭ বারই কোপার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই ‘ট্রায়ো’। মাঝে মাঝে প্যারাগুয়ে বা কলম্বিয়ার মতো দলগুলো ঝলক দেখালেও সমীহ জাগানো শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি কখনোই। তবে ফুটবলের বিশ্বায়নের কারণে কোপাতেও দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য কমে আসছে। সাম্প্রতিককালে ইকুয়েডর বা পেরুর উঠে আসা তারই প্রমাণ বহন করে। গ্রুপ অব ডেথ’এর দেখা এখন থেকে নিয়মিতই কোপাতে মিলবে এই আশা তাই করা যেতেই পারে।

     

    জ্যামাইকাঃ

     

    কনমেবলের বাইরে থেকে যে দুটি দলকে এবার কোপাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তার মধ্যে একটি জ্যামাইকা। ২০১৪ সালের ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন জ্যামাইকার এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ এবারই প্রথম। দৌড়ের জন্য জ্যামাইকার যতটা খ্যাতি আছে, ফুটবলের জন্য তার ছিটেফোঁটাও নেই। তার উপরে পড়েছেও কঠিন এক গ্রুপে। সাদা চোখে দেখলে তাই জ্যামাইকার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে যেহেতু ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন, তাই তাদেরকে হালকাভাবে নিলে ভুল করতে পারে অন্য দলগুলো।

     

    জ্যামাইকার সাম্প্রতিক ফর্মও বেশ ভালো। শেষ ৫টা আন্তর্জাতিক ম্যাচের সব কটিতেই তারা জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। অন্য কোন গ্রুপে পড়লে হয়তো জ্যামাইকা হয়তো ভালো করার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু এই গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরণ জ্যামাইকার জন্য ‘মিশন ইম্পসিবল।’ সেই মিশনের স্বপ্নসারথি হতে পারেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৩ ম্যাচ খেলা রুডলফ অস্টিন।

     

    প্যারাগুয়েঃ

     

    কোপার ২ বারের চ্যাম্পিয়ন এবং বর্তমান রানার্সআপ প্যারাগুয়ে। বরাবরই মধ্যম মানের দল ছিল তারা। তবে সম্প্রতি সময়টা ভীষণই খারাপ যাচ্ছে প্যারাগুয়ের। শেষ ৭ ম্যাচে কোন জয় নেই, ৫ হারের সাথে ২ ড্র। কোপাতে তাই কঠিন এক সময়ই অপেক্ষা করছে প্যারাগুয়ের জন্য। 'লা আলবিওরোজা'-রা পরের পর্বে উঠতে চাইলে প্রধান দায়িত্ব থাকবে ডিফেন্ডার পাওলো ডা সিলভার উপরে। আগুয়েরো এবং কাভানিকে সামলানোর মতো কঠিন কাজ  করতে হবে তাকে। মাঝমাঠে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন মিডফিল্ডার ক্যাসেরেস। গোল করার দায়িত্ব থাকবে প্যারাগুয়ের বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞ সেনানী রক সান্তা ক্রুজের উপরে। গত কোপার সুখস্মৃতি নিশ্চয়ই ফিরিয়ে আনতে চাইবেন তিনি আবারো। চোখ রাখতে পারেন স্ট্রাইকার নেলসন ভালদেজের উপরে।  

     

    উরুগুয়েঃ 

     

     

    কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ ১৫ বারের এবং বর্তমান চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে এবার বেশ খানিকটা ব্যাকফুটে থেকেই টুর্নামেন্ট শুরু করবে। ডিয়েগো ফোরলান ছিলেন না আগে থেকেই; তার উপরে ‘কামড়কাণ্ডে’র কারণে নিষিদ্ধ অবস্থায় আছেন গত আসরের সেরা খেলোয়াড় লুইস সুয়ারেজ। স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানির উপরে দায়িত্ব তাই একটু বেশিই থাকবে। তবে সম্প্রতি লুইস সুয়ারেজকে ছাড়াই বেশ ভালো খেলছে উরুগুয়ে। কোচ অস্কার তাবারেজ সুয়ারেজের অভাব পূরণের জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না।

     

    রক্ষণে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে আছেন ডিয়েগো গডিন। সাথে আরও আছেন শত ম্যাচের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ম্যাক্সিমিলিয়ানো পেরেইরা। ফোরলান এবং সুয়ারেজের অনুপস্থিতিতে কাভানির উপরেই লাইমলাইট থাকবে আশা করা যায়। তবে এর বাইরে দুই ক্রিস্টিয়ান, স্টুয়ানি এবং রড্রিগুয়েজ যদি সব আলো নিজের দিকে টেনে নেন, তাহলে উরুগুয়ের ১৬তম শিরোপা মিশন সফলভাবে শেষ হতে পারে। 

     

    আর্জেন্টিনাঃ 

     

     

    এ মুহূর্তে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সেরা দল সম্ভবত আর্জেন্টিনাই। তবে নিন্দুকদের মতে, “সেরা দল তো প্রত্যেকবার আর্জেন্টিনারই থাকে, তা সত্ত্বেও শিরোপা জিতে নেয় অন্য কোন দল।” তাদের কথা যে একেবারে ভুল তাও না। কোপাতে শিরোপাখরা চলছে প্রায় ২২ বছর। ইতিহাসের একটা দায় তাই মেটাতেই হবে মেসিবাহিনীকে। আর তা করতে হলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে মেসিকেই। এই মুহূর্তে দুর্দান্ত ফর্মে আছে আর্জেন্টিনা। তার প্রমাণ মিলেছে বলিভিয়াকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ায়।

     

    মেসি যদি হন ‘অর্জুন’ তবে তাঁর সারথি ‘কৃষ্ণ’ হবেন অবশ্যই অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। সাথে নাপোলির হিগুয়েন এবং ম্যানচেস্টার সিটির আগুয়েরো যদি আর্জেন্টিনার আকাশী-সাদা জার্সিতে দেখা দেন তাহলে ২২ বছরের অপেক্ষা এবারই ফুরাবে ‘আলবিসেলেস্তে’দের। পাস্তোরে আর তেভেজ এই দুইজনের উপরে চোখ রাখতে পারেন। এদের কেউ 'ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট' হয়ে গেলে বিস্মিত হবেন না মোটেই।

     

    একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়। ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে আর্জেন্টিনার বৈরীতা ছিল ব্রাজিলের সাথে নয়, বরং উরুগুয়ের সাথে। ভারত - পাকিস্তান কিংবা অ্যাশেজের অস্ট্রেলিয়া - ইংল্যান্ডের চেয়ে কোন অংশে কম রোমাঞ্চকর ছিল না আর্জেন্টিনা - উরুগুয়ের দ্বৈরথ। উরুগুয়ের কারণে টানা ৬ বছর কোপা বর্জনের রেকর্ডও আছে আর্জেন্টিনার। সেই দুই চিরশত্রু এবার একই গ্রুপে। জিভে পানি আনা একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে ১৭ জুন সেটা বলা লাগবে কি? উরুগুয়ে এবং আর্জেন্টিনার ক্লাসিকো তো আছেই, আরও আছে গতবারের দুই ফাইনালিস্ট উরুগুয়ে আর প্যারাগুয়ের ম্যাচ (২১ জুন)। সব মিলিয়ে দারুণ উত্তেজনাময় কয়েকটা ম্যাচ উপহার দিতে চলেছে 'বি' গ্রুপ।

     

     


     

    আরো পড়ুনঃ

     

    প্রিভিউঃ গ্রুপ 'এ' - অনেক দূর যেতে পারে চিলি 

    ফিক্সচারঃ কোপা আমেরিকা ২০১৫ (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী)