মার্করাম মহাকাব্যের পর অস্ট্রেলিয়ার ১ উইকেটের অপেক্ষা
ডারবান টেস্ট, চতুর্থ দিনশেষে
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৩৫১ অল-আউট (মিচেল মার্শ ৯৬, স্মিথ ৫৬, ওয়ার্নার ৫১, মহারাজ ৫/১২৩) ও ২য় ইনিংস ২২৭ অল-আউট (ব্যানক্রফট ৫৩, স্মিথ ৩৮, মরকেল ৩/৪৭, মহারাজ ৪/১০২)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস ১৬২ অল-আউট (ডি ভিলিয়ার্স ৭১*, মার্করাম ৩২, স্টার্ক ৫/৩৪, লায়ন ৩/৫০) ও ২য় ইনিংস ২৯৩/৯* (মার্করাম ১৪৩, ডি কক ৮১*, স্টার্ক ৪/৭৪, হ্যাজলউড ২/৫৩)
১ উইকেটে ১২৪ রান প্রয়োজন দক্ষিণ আফ্রিকার
এটা সেই ট্রেনযাত্রার মতো, যে স্টেশনে নামবেন, ঠিক তার আগের সিগন্যালে স্টেশনমাস্টার দিলেন লালবাতি জ্বালিয়ে। আপনি এখন শুধু অপেক্ষায় করবেন। ডারবান টেস্টে অস্ট্রেলিয়া যেমন করছে। এর আগে এইডেন মার্করামের এক মহাকাব্যিক ইনিংসে যাত্রা বেশ বিলম্বিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার, সঙ্গে ছিলেন কুইন্টন ডি কক। শেষ পর্যন্ত আগের দিনগুলোর মতো আলোকস্বল্পতায় খেলা আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় টেস্টটা ৫ম দিনে নিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ৮১ রানে ব্যাটিং করা ডি ককের সঙ্গে অপরাজিত শেষ ব্যাটসম্যান মরনি মরকেল। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন এখনও ১২৪ রান। জয়টা নিশ্চিত হয়েই গেছে অস্ট্রেলিয়ার, বাকি শুধু জয় পাওয়াটাই।
৪১৭ রানের লক্ষ্য, জিততে হলে রান-তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই অ্যান্টিগা রেকর্ডের একদম কাছে যেতে হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অ্যান্টিগা ভুলে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা, মার্করামের সঙ্গে থিউনিস ডি ব্রুইনের ৮৭ রানের জুটিতেও যেন ঠিক হুঁশ ফিরল না তাদের। শুরুটা হয়েছিল ডিন এলগারকে দিয়েই, দ্বিতীয় ইনিংসে যার ব্যাটিং করতে পারার খবরটা সুখবর হয়েই এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। স্টার্কের ব্যাক অব দ্য লেংথ থেকে থেকে বলটা অতিরিক্ত বাউন্স নিয়ে উঠতেই থাকলো, ব্যাট সরিয়ে নিতে চেয়েও পারলেন না এলগার, পেইনের কাছে শুধু ক্যাচটাই দিলেন। হ্যাজলউডের সোজা বলে এলবিডাব্লিউ আমলা, রিভিউও বাঁচাতে পারেনি তাকে। ডু প্লেসি ব্যাট প্যাডে ফাঁক রেখেছিলেন, কামিন্স তাক করেছেন সেটাই। স্টাম্প সেই প্রথম গোত্তা খেয়েছে আফ্রিকান ইনিংসে, শেষবেলায় স্টার্ক আরেকবার স্টাম্পের স্বাদ পাওয়ার আগে।
এরপর যা ঘটলো, সেটা মার্করামের চাপটা বাড়িয়ে দিল বহুগুণ। সিঙ্গেলে ডি ভিলিয়ার্সের ডাকে সাড়া দিয়েও শেষ মুহুর্তে আপত্তি করলেন, ততক্ষণে ডি ভিলিয়ার্স পৌঁছে গেছেন ক্রিজের মাঝামাঝি! ফিরতে পারলেন না আর, প্রথম ইনিংসে আফ্রিকার সেরা ব্যাটসম্যানের শেষটা হলো ভুল বুঝাবুঝিতে। হ্যাজলউডের বলে এরপর ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙেছে ডি ব্রুইনের, পেইনকে তিনিও দিয়েছেন ক্যাচ।
এরপরই অসম্ভবের পথে যাত্রা মার্করাম- ডি ককে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকার। মার্করাম সেখানে প্রধান চালক, ডি কক সহকারি। তাদের ট্রেনকে জায়গা করে দিতেই দাঁড়িয়ে থাকলো অস্ট্রেলিয়া।
লাঞ্চের পর ফিফটি করলেন মার্করাম, দ্বিতীয় সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা উইকেট হারালো শুধু ১টি। চা-বিরতির পর পরপর দুইবলে উল্লাসে ফাটলো ডারবান, মার্করামের সেঞ্চুরির পরই ফিফটি করলেন ডি কক। ড্রেসিংরুমে উদযাপনে মত্ত আফ্রিকানরা, অন্য ড্রেসিংরুম থেকেও অভিবাদন জানাচ্ছিলেন ড্যারেন লেম্যান। ১৯৯২ সালের পর ডারবানে চতুর্থ ইনিংসে এটি মাত্র ২য় সেঞ্চুরি। মার্করাম এতোটাই প্রভাববিস্তারি ছিলেন, তাকে আউট করতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া খরচ করে ফেলেছে তাদের বরাদ্দ দুইটি রিভিউই।
মার্করাম কাভার থেকেই করেছেন নিজের ইনিংসের ৫০ শতাংশের বেশি রান, এই অঞ্চলে তার স্ট্রাইক রেটও ১০০-এর বেশ ওপরে। ১৯টি চার মেরেছেন, যে স্পিন নিয়ে এতো কথা হয়েছে এই টেস্টে- সেই স্পিনের বিপক্ষেই নিজের গড় নিয়ে গেছেন ২০০ এর ওপরে এ ইনিংস দিয়ে। ইনিংসের শুরুর দিকেও ছিলেন বেশ দৃঢ়, আলগা শট খেলেছেন খুবই কম। তার ১৪৩ রানের ইনিংসটি ১৯৯৫ সালে মাইক আথারটনের অপরাজিত ১৯৫ রানের ইনিংসের পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ।
তবে মার্করামের এতো কিছু শেষ হয়ে গেছে এ ম্যাচে ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার নায়ক মিচেল মার্শের বলে। গ্লাইড করতে গিয়ে এজড হয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের ওপরে এসে দাঁড়ানো টিম পেইনকে। ডি ককের সঙ্গে ১৪৭ রানের জুটি ওখানেই শেষ, শেষ দক্ষিণ আফ্রিকার আশাও। ডি কককে এরপর সঙ্গ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে যদি আফ্রিকান টেইল-এন্ডাররা নেমেও থাকেন, তা শেষ হয়ে গেছে স্টার্কের এক ওভারের তিনটি গোলায়।
ফিল্যান্ডার স্টার্কের পেসের জবাব দিতে পারেননি, মহারাজ-রাবাদার সঙ্গে তার পার্থক্য, তিনি ব্যাটে লাগিয়ে হয়েছেন এজড। সেই ওভারে প্রথমে মহারাজ, ঠিক পরের বলেই রাবাদার স্টাম্প উড়ে গেছে- স্টার্ক ছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে। সেই ওভারের শেষেই নতুন বল পাওয়ার কথা অস্ট্রেলিয়ার, তবে স্টার্কের তো আর সেটা ঠিক দরকার পড়ছে না এই টেস্টে!
এরপরই বাগড়া বাঁধালো আলো। স্টার্ক বা আর কোনও পেসারকে বল করতে দিলেন না আম্পায়াররা, খেলা চালিয়ে যেতে অস্ট্রেলিয়ানদের বোলিং করাতে হবে স্পিনারদের দিয়ে। ন্যাথান লায়নের সঙ্গে আরেকপ্রান্তে এলেন স্টিভেন স্মিথ নিজে- তবে দুইজন মিলে ৯ ওভার করেও টলাতে পারলেন না ডি কক আর মরকেলকে।
৯ উইকেটে ২১৩ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া, হ্যাজলউড-কামিন্স মিলে এরপর যোগ করেছেন ১৪ রান। মহারাজকে তুলে মারগে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনেছেন কামিন্স, ম্যাচে নয় উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন মহারাজ।