পেরেরার হামলায় অসহায় ভারত
ভারত ১৭৪/৫, ২০ ওভার (ধাওয়ান ৯০, পান্ডে ৩৭, চামিরা ২/৩৩, গুণাথিলাকা ১/১৬)
শ্রীলঙ্কা ১৭৫/৫, ১৮.৩ ওভার (মেন্ডিস ৬৬, পেরেরা ২২*, সুন্দর ২/২৮, চাহাল ২/৩৮)
ফল- শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী
আর প্রেমাদাসার উল্লাসটা স্পষ্ট। শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তি নয় শুধু, এটা যে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটেরও ৭০ বছর পূরণের উদযাপন! সে উদযাপন উৎসবের শুরুতেই স্বাগতিকরা দর্শকদের এনে দিলেন উল্লাসে মাতার সুযোগ। কুশাল মেন্ডিসের ধ্বংসাত্মক ইনিংসে বাধার দেয়াল তুলতে পারেনি ভারত, ৯ বল বাকি থাকতে শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৫ উইকেটে। ব্যাটিংয়ে ধীরগতির শুরুর ক্ষতটাই পূরণ করতে পারেনি ভারত।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের ইনিংসে দুইটি ভাগ। একটি শিখর ধাওয়ান, আরেকটি সবাই যারা ব্যাটিং করেছেন। উত্থান-পতন ছিল পুরো ইনিংসেই, বলে ঠিক সেভাবে ঘা লাগাতে পারেননি কেউ। দাঁড়িয়ে ছিলেন ধাওয়ানই, আউট হয়েছেন ১৮তম ওভারে গিয়ে। ৪ ওভারে ১৮ রান তুলতে ২ উইকেট হারিয়েছিল ভারত, টানা দুই চারে সে বাঁধটা ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন তিনিই। এরপর প্রায় প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি মেরেছেন, ৬টি ছয়ের সঙ্গে মেরেছেন ৬টি চারও।
ভারতের শুরুটা হয়েছিল বাজে। মিড-অফ থেকে বাঁদিকে অনেকখানি দৌড়ে রোহিত শর্মার ক্যাচ নিয়েছেন জীবন মেন্ডিস, লেগসাইডে অনেকখানি সরে যাওয়া সুরেশ রায়নাকে বোল্ড করেছেন নুয়ান প্রদীপ। ৯ রানেই ২ উইকেট হারিয়েছিল ভারত।
মনীশ পান্ডেকে নিয়ে এরপর ৯৫ রানের জুটি ধাওয়ানের, সেটা এসেছে ৬৪ বলে। মেন্ডিসকে লং-অনে তুলে মারতে গিয়ে মিড-উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন মনীশ পান্ডে। ঋশাভ পান্টের সঙ্গে এরপর ৪৯ রানের জুটি ধাওয়ানের, তবে পান্ট এবারও ভুগেছেন মিসটাইমিংয়ে। টি-টোয়েন্টি এই তরুণের ঠিক কতোখানি ধাতের জিনিস, সে প্রশ্নটা উঠলো আরেকবার। পান্টের ইনিংস শেষ হয়েছে চামিরার বলে ক্যাচ দিয়ে। এরপর গুণাথিলাকার বলে মিসটাইমিংয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ধাওয়ান। তবে দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর ভারত যে ১৭৪ রানে পৌঁছেছে, সেখানে সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ প্রাপ্য ওই ধাওয়ানেরই।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ঠিক দুই ভাগ নয়, কুশাল মেন্ডিসের ঝড়ে হাওয়া-বাতাস লাগিয়েছেন প্রায় সবাই। তবুও তার ইনিংসটি আলাদা, তার ৬ চার ও ৪ ছয়ে ৩৭ বলে ৬৬ রানের ইনিংসেই তো শ্রীলঙ্কা চলে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
১২ রানে ১ম উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, ওয়াশিংটন সুন্দরকে স্লগ সুইপের চেষ্টারত কুশাল মেন্ডিস ক্যাচ দিয়েছেন মিড-অফ থেকে ছুটে যাওয়া ধাওয়ানের হাতে। সে ওভারেই পেরেরা মেরেছিলেন একটি ছয়। সেটা যে শারদুল ঠাকুরের ওপর নিদারুণ অত্যাচারের পূর্বাভাস, সেটা তখন কে জানতো! পরের ওভারে ঠাকুরের ওভারের খেরোখাতাটা এমন- চার, চার, চার, ছয়, নো বলে চার, নো বলে চার সমান ২৭ রান! কুশাল মেন্ডিস উড়ছিলেন, পুড়ছিলেন ঠাকুর!
উনাডকটের স্লোয়ার আর কাটারের মিশেলে নিয়ন্ত্রণ না আনতে পেরে ক্যাচ দিয়েছেন গুণাথিলাকা, মেন্ডিসের সঙ্গে তার জুটি ৫৮ রানের। চান্ডিমাল ও থারাঙ্গা বোল্ড হয়েছেন যুঝভেন্দ্র চাহালের বলে, মেন্ডিসকে কিছুক্ষণ করে সঙ্গ দেওয়ার পর। সুন্দরের ফ্লাইটে সামনে এসে স্টাম্পড হয়ে শেষ হয়েছে কুশাল পেরেরার স্টিমরোলারসম ইনিংস, তবে সে ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রানরেট ছিল ৯.৭৬ করে!
১৫তম ওভারে চাহালের বলে স্লগ সুইপের ব্যর্থ চেষ্টায় বোল্ড হয়েছেন থারাঙ্গা, ভারত মেন্ডিসের উইকেটের পর হালে যে পানি পেয়েছিল, সেটাকেই জোয়ারে রুপ দেওয়ার চেষ্টায়। শেষ ৪ ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান, যদিও একটু শঙ্কা জেগে থাকে, সেটা উড়িয়ে দিয়েছেন থিসারা পেরেরা।
উনাডকটের ১ ওভারে ১৬ রান নেওয়ার পরের ওভারেই জয় নিশ্চিত করেছেন তিনি, ১০ বলে ২২ রানে ছিলেন অপরাজিত। নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার দারুণ শুরুটাও নিশ্চিত হলো তাতেই!