লিভারপুলকে ডোবালেন র্যাশফোর্ড
প্রিমিয়ার লিগে শিরোপাদৌড় নিয়ে তেমন উত্তাপ নেই। শীর্ষে ম্যানচেস্টার সিটি শাসন করছে অনেক দিন ধরে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লিভারপুল ম্যাচটা তাই ধরা হচ্ছিল ‘দুইয়ে’ থাকার লড়াই হিসেবে। শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচে লিভারপুলকে ২-১ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার দুই নম্বরেই থাকল ইউনাইটেড। ঘরের মাঠে লিভারপুলকে হারানোর নায়ক মার্কোস র্যাশফোর্ড। জোড়া গোল করে ইউনাইটেডকে জিতিয়েছেন ইংলিশ ফরোয়ার্ডই।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে লিভারপুলের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক দলই নামিয়েছিলেন হোসে মরিনহো। ইনজুরির কারণে পল পগবা না থাকলেও প্রথমার্ধে তার অনুপস্থিতি বুঝতেই দেননি স্কট ম্যাকটমিনে আর নেমানিয়া মাতিচ। মরিনহোর অধীনে শুরুর একাদশে এতোদিন খুব বেশি সুযোগ মেলেনি র্যাশফোর্ডের। আজ সুযোগ পেয়েই নিজের দাবিটা জানিয়ে রাখলেন ২০ বছর বয়সী ইংলিশ ফরোয়ার্ড। মাত্র ১৪ মিনিটেই ডিবক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ এক শটে গোল করে এগিয়ে দিয়েছিলেন ইউনাইটেডকে। গোলের উৎস ছিল ডেভিড ডি গিয়ার বাড়ানো লং বল। লিভারপুল ডিফেন্ডার ডেয়ান লভ্রেনকে বোকা বানিয়ে সেই বলে হেড করেছিলেন রোমেলু লুকাকু। সেখান থেকেই বল পেয়ে গিয়েছিলেন র্যাশফোর্ড। এর ১০ মিনিট পর র্যাশফোর্ডের দ্বিতীয় গোলের গল্পটাও অনেকটা একইরকম। ডি গিয়ার বাড়ানো লম্বা বল, আবারও লুকাকুর কাছে মাঝমাঠে পরাস্ত লভ্রেন। এবার অবশ্য লুকাকু বলটা বাড়িয়েছিলেন হুয়ান মাতার দিকে। কিন্তু তিনি না পারলে আবার বল পেয়ে যান র্যাশফোর্ড, প্রায় একই জায়গা থেকে। কেবল দূরত্বটা কমে গেল ৮ গজ। ২৪ মিনিটে প্রায় একই রকম শটে আবারও গোল করে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইউনাইটেডকে জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে দেন র্যাশফোর্ড।
এর মিনিট খানেক আগেই অবশ্য ম্যাচে ফেরার দারুণ এক সুযোগ হারিয়েছিল লিভারপুল। কর্নার থেকে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থেকেও ভার্জিল ভ্যান ডাইক হেড করেছিলেন বাইরে থেকে। প্রথমার্ধে এ ছাড়া তেমন কোনো নিশ্চিত গোলের সুযোগ পায়নি লিভারপুল। কিন্তু বিরতির আগেই খেলাটা শেষ করে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ইউনাইটেড। ৩৮ মিনিটে অ্যালেক্সিস সানচেজের ক্রস খুঁজে পেয়েছিল মাতাকে। উড়ে আসা বল বুক দিয়ে নামিয়ে শট করার পরিবর্তে ওভারহেড কিক মারার চেষ্টা করেছিলেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার, পরে অবশ্য আফসোসেই পুড়তে হয়েছে তাকে।
দুই গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে অনুমিতভাবেই কিছুটা আক্রমণাত্মক শুরু করেছিল লিভারপুল। কিন্তু অ্যালেক্সান্ডার আর্নোল্ড, মোহাম্মদ সালাহদের কড়া পাহারায় রেখে লিভারপুলকে অনেকটাই কোনঠাসা করে রেখেছিলেন অ্যাশলি ইয়াং। ডান প্রান্ত দিয়েও রবার্টসন, সাদিও মানেরা ছিলেন নিষ্প্রভ। ৬২ মিনিটে অ্যাডাম লালানা নেমেও করতে পারেননি তেমন কিছুই। তবে লালানা মাঠে নামার কিছুক্ষণ পরই ‘লাইফলাইন’ গোলটা পেয়ে যায় লিভারপুল। সেটাও অবশ্য ছিল ইউনাইটেডের ‘উপহার’। সাদিও মানের ডান দিক থেকে করা ক্রসটা নিজের জালে ঢুকিয়ে দিয়ে লিভারপুলকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ এনে দেন এরিক বায়ি।
এরপর ম্যাচে আধিপত্য ছিল লিভারপুলেরই, কিন্তু গোলটা আর পাওয়া হয়নি তাদের। ৭০ মিনিটে মারুয়ন ফেলাইনিকে মাঠে নামিয়ে অবশ্য লিভারপুলের জন্য কাজটা আরও কঠিন করে দেন মরিনহো। ৮২ মিনিটে মানে-ফির্মিনো ওয়ান-টু করে ঢুকে গিয়েছিলেন বক্সের ভেতর, সেখান থেকে ফির্মিনোকে আটকে দিয়ে অবশ্য কোচের দেওয়া কাজটা ভালোভাবেই করেছেন ফেলাইনি। কিন্তু লিভারপুল সমর্থকেরা চাইলে নিজেদের দুর্ভাগাও ভাবতে পারেন, রেফারির পেনাল্টির বাঁশিটাই তো শুনতে চেয়েছিলেন তারা।
শেষদিকে যোগ করা সময়ের ৬ মিনিটও লিভারপুলকে আটকে দিয়ে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ইউনাইটেড। আজকের পর ৩০ ম্যাচ শেষে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে থাকল ইউনাইটেড, আর ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে তিনে লিভারপুল।