নো-বল 'বিতর্ক' থেকে ড্রেসিংরুমের ভাঙা কাচ
অর্জুনা রানাতুঙ্গা। অ্যাডিলেড ওভাল, ১৯৯৯। ইনজামাম-উল-হক, ওভাল, ২০০৬। সাকিব আল হাসান, আর প্রেমাদাসা, ২০১৮। প্রথম দুইজনের সঙ্গে তৃতীয়জনের একটু পার্থক্য আছে। মুত্তিয়া মুরালিধরনের ‘নো-বল’ এর প্রতিবাদে যেমন মাঠ ছেড়ে গিয়েছিলেন রানাতুঙ্গা, দল সহ, ইনজামামও বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে আম্পায়ার ৫ রানের পেনাল্টি দেওয়ায় উঠে গিয়েছিলেন। সাকিব ‘নো-বল’ না দেওয়াতে উঠে আসতে বলেছিলেন ব্যাটসম্যানদের, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
প্রথম দুই দলই ফিল্ডিং করছিল, মাঠেই ছিলেন তাই অধিনায়করা। পরের দল ছিল ব্যাটিংয়ে, মাঠে ঢুকতে পারেননি সাকিব। নো-বল বিতর্ক নিয়ে উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচে ‘আপাতত’ শেষটা হয়েছে ড্রেসিংরুমের দরজার কাচ ভাঙা দিয়ে। কলম্বোতে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের দরজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- এমন ছবি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। ইএসপিএন ক্রিকইনফো বলছে, জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ড্রেসিংরুমের সিঁড়ি দিয়ে ছুটে নামার সময়ই সিঁড়িতে বিক্ষিপ্ত কাচ দেখতে পাওয়া গেছে। ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড এই ছবি দেখেছেন, ড্রেসিংরুমে খাবারের দায়িত্বে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তারা ব্রডকে এর জন্য দায়ী কয়েকজন ক্রিকেটারের নাম বললেও তিনি বলেছেন, এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়, বরং বাইরে থেকে দেখা যায় এমন ফুটেজ দরকার তার।
ঘটনার শুরু কার্যত সেমিফাইনাল বনে যাওয়া বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের শেষ ওভারে। ইসুরু উদানার প্রথম বলটা ছিল শর্ট, মুস্তাফিজ মিস করে গেছেন। যেটাতে রিভিউও নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এরপর আবার শর্ট বল, যেটাতে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান-আউট হয়ে গেছেন মুস্তাফিজ। এরপর আম্পায়ারের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন মাহমুদউল্লাহ, নিয়মানুযায়ী কাঁধের ওপরে শর্ট পিচ ডেলিভারির ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি থেকে ডাকার কথা নো বল। মাহমুদউল্লাহকে পানি দিতে এসময় মাঠে ঢোকেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত ফিল্ডার, তিনিই বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন শ্রীলঙ্কান ফিল্ডারদের সঙ্গে। শ্রীলঙ্কান ফিল্ডাররা তাকে ‘ধাক্কা’ দিয়ে সরিয়ে দেন- ক্রিকইনফোর মতে- যেটা খুব আস্তে বা খুব জোরে- কোনটিই ছিল না। তবে সেই অতিরিক্ত ক্রিকেটারকে অনুসরণ করে বাউন্ডারির কাছে এসেছিলেন তারা।
তবে এরপরই সেটা জড়িয়ে গেছে নো-বল বিতর্কে। সাকিবের ভাষ্যমতে, দ্বিতীয় বাউন্সারে নো-বল ডেকেছিলেন আম্পায়াররা, তবে পরে সেটা বাতিল করেছেন।
‘আমি বলতে চাই না (ওই ঘটনা নিয়ে)। স্কয়ার লেগ আম্পায়ার নো বল কল করেছিলেন। এরপর আলোচনা করে বাতিল করেছেন। আমার মনে হয় না এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। আমি জানি না প্রথমটা বাউন্সার কল করেছিল কিনা। তবে পরেরটা নো দিয়েছিল। তবে সবাই মানুষ। ভুল হতেই পারে।’
নো-বল দিয়েও কেন বাতিল করলেন, এ প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেছেন, ‘আমি তো তখন মাঠে যাইনি, আম্পায়ার বলতে পারবে কেন তুলে নিল। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আর কথা হয়নি। কারণ আমি মাঠে যাইনি। আম্পায়াররা কেন সিদ্ধান্ত বদলালেন, তারাই বলতে পারবেন। ম্যাচের পর আর ওটা নিয়ে কথা বলতে চাইনি।’
তবে মাঠের সবকিছু মাঠের ভেতরেই রেখে আসার পক্ষে তিনি, ‘মাঠের ভেতরের ব্যাপার ওখানেই রেখে আসা উচিৎ। আমরা (বাংলাদেশী ও শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা) সত্যি বলতে খুবই ভাল বন্ধু। শুধু মাঠে ক্রিকেটাররা না, বোর্ডের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক। শ্রীলঙ্কান কতো প্লেয়ার বিপিএল, আমাদের লিগে খেলে। কিন্তু মাঠে ক্রিকেটার হিসেবে চাব, দল জিততে যেটা প্রয়োজন সেটাই করতে। সেটাই হয়েছে। ওরাও এটাই চেয়েছে। দুইটি দলই এভাবে নিবে, মাঠের ভিতরে থাকবে। মাঠের বাইরে আসবে না।’
তবে, ‘যা হয়েছিল, তা হওয়া উচিত হয়নি। আমার শান্ত থাকা উচিৎ ছিল। আমি উদ্বেলিত ছিলাম। উত্তেজনা ছিল, আবেগ, উত্তেজনার সমন্বয়ে এটা হতে পারে। তবে এমন হলে আমি সতর্ক থাকব কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয়।’
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম ম্যাচেও এমন ঠোকাঠুকি লেগেছিল বাংলাদেশী ফিল্ডারদের। এই যে উত্তাপ, উত্তেজনা, সাকিব এসবকে মোটা দাগে ভাল হিসেবেই দেখছেন, ‘ এটা ভাল। দর্শকদের জন্য, সাংবাদিকদের জন্য, ক্রিকেটারদের জন্য। আমরা তো শুধু যেতে আর আসতে পারি না। তাহলে তো মশলা থাকলো না। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশে আমরা খাবারে প্রচুর মশলা খাই। তো মশলা থাকা ভাল, তবে এটা মাঠের ভেতরে, বাইরে না।’