'আর খেলবই না!'
‘মানি না, মানবো না’, আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত ক্রিকেটারদের মনে না ধরার ঘটনা তো আর একটি নেই! এর প্রতিবাদ কখনও হয় চিৎকারে, কখনও অবাক হয়ে, কখনও একটা কাষ্ঠ হাসিতে। মাইকেল হোল্ডিংয়ের মতো কেউ কেউ আবার গিয়ে লাথিও মেরে বসেন স্টাম্পে! তবে ক্ষোভটা তখনও যদি না কমে, এরপরের ধাপটা খেলা ছেড়ে উঠে আসা। অথবা এমন পদক্ষেপের আভাস দেওয়া। নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচে সাকিব আল হাসান যেমন করেছেন, দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ ও রুবেল হোসেনকে উঠেই আসতে বলছিলেন আম্পায়ার নো-বল না দেওয়ায়।
ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে সাথে সাথেই টুইট করেছিলেম, ‘সাকিব দলকে মাঠ ছেড়ে আসার জন্য বলছে। অনেকদিন পর এমন কিছু দেখলাম।’ আসলেই তো তাই। কোনও অধিনায়কের দলকে মাঠ ছাড়ার জন্য বলা কিংবা খেলোয়াড়দের মাঠ ছাড়ার ঘটনা শেষবার ঘটেছিল প্রায় ১ যুগ আগে...
আউট? খেলবই না!
সুনীল গাভাস্কার, ১৯৮১
পুরো সিরিজেই রান-খরায় ভোগা সুনীল গাভাস্কার সেদিন পেয়েছিলেন রানের দেখা। ডেনিস লিলির বলটি ব্যাটে লেগে পায়ে লাগতেই এলবিডব্লিউয়ের আবেদন অস্ট্রেলিয়ার, আম্পায়ার দিলেন আউট। বিস্মিত, ক্ষুদ্ধ গাভাস্কার হাত দিয়ে ব্যাট এবং প্যাড দেখিয়ে বোঝাতে চাইলেন বলটি আগে ব্যাটে লেগেছিল। ক্রিজ ছাড়তেই যেন চাচ্ছিলেন না তিনি। অবশেষে যখন ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিলেন, তখন সাথে অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যান চেতন চোহানকেও নিয়ে যাচ্ছিলেন। গাভাস্কার তখন ভারতের অধিনায়ক, তাই প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিলো হয়ত তিনি ইনিংস ঘোষণা করে দিচ্ছেন। তবে ঘটনা যে তা ছিল না, তার প্রমাণ মেলে যখন টিম ম্যানেজার শহিদ দুররানির হস্তক্ষেপে গাভাস্কার একাই ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ম্যাচে এরপর গোলমাল হয়নি আর। তবে গাভাস্কারের প্রতিক্রিয়াটা যতটা না ছিল প্রতিবাদ, তার চেয়ে বেশি ছিল তার ব্যক্তিগত রাগেরই বহিঃপ্রকাশ!
বুঝলামই না!
নো বল? আচ্ছা, চলো...
অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ১৯৯৯
তিন বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলতে গিয়েই প্রথমবারের মত অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগে শিরোনাম হয়েছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। অ্যাকশন শুধরে ফিরলেন, ১৯৯৯ সালে মুরালিধরন খেলতে গেলেন অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ২৮তম ওভারে ঘটল বিপত্তি। ওভারের চতুর্থ বলটিকে নো বলের সংকেত দিলেন স্কয়ার লেগ আম্পায়ার রস এমারসন। সাথে সাথে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা ছুটে যান আম্পায়ারদের কাছে। তিন বছর আগে যা জেনেছিলেন, আবারও বলা হলো সেটাই, মুরালিকে নো ডাকা হয়েছে চাকিংয়ের জন্য! বেশ কিছুক্ষণ আম্পায়ারদের সাথে বাকবিতণ্ডার পর রানাতুঙ্গা পুরো দলকে নিয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ড্রেসিংরুমের প্রায় কাছাকাছি যাওয়ার পর টিম ম্যানেজম্যান্টের পক্ষ থেকে থামানো হয় রানাতুঙ্গা এবং তার দলকে। বোঝানা হয় ম্যাচটি চালিয়ে নেওয়ার জন্য। ১২ মিনিট বিরতির পর শ্রীলংকা দল আবারো মাঠে ফিরে আসে। মুরালি যথারীতি ওভারের বাকি দুটি বল করেন কোন ঝামেলা ছাড়াই। এরপর ক্যারিয়ারজুড়েই চাকিংয়ের অভিযোগ অনেকবার তোলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে, একসময় তো তার 'অস্বাভাবিক শারীরিক গঠন'-এর জন্য নিয়মও বদলাতে হয় আইসিসিকে।
পেনাল্টি : সম্মানের প্রশ্ন!
ইনজামাম-উল-হক, ২০০৬
ওভালে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করছিলো ইংল্যান্ড। ইনিংসের ৫৭তম ওভারে নিয়মিত বল পর্যবেক্ষণের সময় আম্পায়ারদের চোখে বলের আকৃতির ‘অস্বাভাবিক পরিবর্তন’ ধরা পড়ে। বল টেম্পারিংয়ের জন্য ৫ রান পেনাল্টি করা হয় পাকিস্তানকে। নেয়া হয় নতুন বল, যা ঠিক করে দেন দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। তৎক্ষণাৎ পাকিস্তান অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক কিছুটা তর্ক করলেও খেলা চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। চা বিরতির ঠিক আগে আউট হন পিটারসেন। সমস্যার শুরুটা সেখানেই। চা বিরতির পর আম্পায়াররা মাঠে প্রবেশ করলেও পাকিস্তান দল মাঠে নামা থেকে বিরত থাকে। বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষার পর আম্পায়াররা ফিরে যান। ইংল্যান্ড দলকে জানানো হয়, সেদিনের মতো আর খেলা হবেনা। আম্পায়াররা উঠে গেলেন, এরপর নামলেন পাকিস্তানীরা। মিনিট দশেক অপেক্ষার পর আম্পায়ার কিংবা দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানকে না দেখতে পেয়ে ইনজামাম দল নিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। পাকিস্তান দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের বিপক্ষে যে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে, তার প্রতিবাদেই মাঠে না নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। সেই টেস্ট আর হয়নি, প্রথমে ড্র ঘোষণা করা হয়েছিল ফল। এরপর সেটা বদলে যায়। ১২৯ বছরের টেস্ট ইতিহাসে, ১৮১৪তম ম্যাচে এসে এক দলকে জয়ী ঘোষণা করা হয় প্রতিপক্ষ মাঠে উপস্থিত না থাকায়। এবারও বিতর্কে ছিলেন মুরালিধরনকে নো-ডাকা দুই আম্পায়ারের একজন- ড্যারেল হেয়ার। আরেকজন আম্পায়ার ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিলি ডকট্রোভ। ইনজামামকে ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার শাস্তি দেওয়া হয়, আর এর কিছুদিন পরই ‘ইমেইল কেলেঙ্কারিতে’ আইসিসির আম্পায়ার প্যানেল থেকে বাদ পড়েন হেয়ার।