ব্রাজিলের কাছে পাত্তাই পেল না রাশিয়া
প্রীতি ম্যাচ, প্রতিপক্ষ রাশিয়া। বাছাইর্পবে দারুণ ছন্দে থাকা ব্রাজিলের ম্যাচটা জেতারই কথা ছিল। কিন্তু নেইমার না থাকায় কিছুটা শঙ্কাও হয়ত ছিল ব্রাজিল সমর্থকদের মনে। ‘সেলেসাও’ সমর্থকদের সেই আশঙ্কা তুড়ি মেরে রাশিয়াকে তাদেরই মাঠে ৩-০ গোলে হারিয়েছে তিতের দল। মিরান্ডা, ফিলিপ কুতিনিয়ো এবং পাওলিনিয়োর গোলে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা যেন প্রমাণই করল, নেইমারের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয় তারা।
ব্রাজিল সমর্থকদের উৎকণ্ঠা যে একেবারেই অহেতুক নয়, তার অবশ্য কিছুটা প্রমাণ মিলছিল প্রথমার্ধে। শুরু থেকেই আক্রমণভাগে ডগলাস কস্তা-হেসুস-উইলিয়ানদের মাঝে বোঝাপড়ার অভাবটা ছিল স্পষ্ট। মাঝমাঠে ফিলিপ কুতিনিয়ো ছিলেন নিজের ছায়া হয়েই। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে একেবারেই নিজেদের মেলে ধরতে পারছিল না 'সেলেসাও'রা। তবে এই ছন্দহীনতার মাঝে ম্যাচের শুরুতেই দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। ম্যাচে ‘সেলেসাও’দের প্রথম আক্রমণের মূল কারিগর ছিলেন নেইমারের জায়গায় নামা ডগলাস কস্তা। এই উইঙ্গারের ডিফেন্সচেরা পাসে ডিবক্সে বল পান গ্যাব্রিয়েল হেসুস। কিন্তু গোলের গজ আটেক দূর থেকে ম্যানচেস্টার সিটির এই স্ট্রাইকারের শট ফিরিয়ে দেন রাশিয়ার গোলরক্ষক ইগর আকিনফেভ। ছন্দহীন ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রায় পুরোটা সময়ই প্রতি আক্রমণে খেলা রাশিয়াকেই উলটো মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর। গোলের সুযোগও তৈরি করেছিল আসন্ন বিশ্বকাপের স্বাগতিকরা। ম্যাচের ৩১ এবং ৩৩ মিনিটে স্ট্রাইকার অ্যালেক্সি মিরাঞ্চুকের দুটি প্রচেষ্টা দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। আজকের ম্যাচে ব্রাজিলের অন্যতম সেরা পারফরমার অ্যালিসন যেন জানিয়েই রাখলেন, বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গোলরক্ষকের স্থানটা নিজের দখলেই রাখতে চান তিনি।
প্রথমার্ধের ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে ঠিক কাজ হচ্ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধে ফর্মেশন বদলে ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে খেলান তিতে। আর তাতেই স্বরুপে ফেরে ব্রাজিল। গোলটাও পেতে দেরী হয়নি তিতের দলের। ৫৪ মিনিটে উইলিয়ানের কর্নার থেকে ব্রাজিল অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার হেড দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন আকিনফেভ। কিন্তু ফিরতি বলে গোলের মাত্র গজ দুয়েক দূর থেকে দলকে লিড এনে দেন ডিফেন্ডার মিরান্ডা। লিড নেওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ব্রাজিলকে। মাঠে উপস্থিত ব্রাজিল সমর্থকদের মূহূর্মূহূ ‘ওলে! ওলে!!” চিৎকারে মুখর তখন সমগ্র লুঝনিকি স্টেডিয়াম। প্রথম গোলের মিনিট পাঁচেক পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন পাওলিনিয়ো। রাশিয়ার দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়েন কুতিনিয়ো। তার পাস থেকে ফাঁকা গোলপোস্ট পেয়েও আকিনফেভকে পরাস্ত করতে পারেননি পাওলিনিয়ো। অবশ্য এই মিসের জন্য তেমন একটা ভুগতে হয়নি ব্রাজিলকে। কারণ ৬৩ মিনিটে পেনাল্টি আদায় করে নেন পাওলিনিয়োই। নেইমারের অনুপস্থিতিতে ১২ গজ থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কুতিনিয়ো। এর মিনিট দুয়েক পর মিসের শাপমোচনটাও করে ফেলেন পাওলিনিয়ো। ৬৫ মিনিটে উইলিয়ানের ক্রসে হেড করে ব্যবধান ৩-০ করেন এই মিডফিল্ডার।
দ্বিতীয়ার্ধের বিধ্বংসী ব্রাজিলে রীতিমত দিশেহারা রাশিয়া ৭৭ মিনিটে পেয়েছিলে সান্ত্বনাসূচক গোলের সুযোগ। কিন্তু মিরাঞ্চুক এবং জোবোলটনির দুটি প্রচেষ্টা লাইন থেকে ক্লিয়ার করে নিজেদের মাঠ থেকে রাশিয়ানদের খালি হাতেই ফেরান মিরান্ডা। এই লুঝনিকি স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল। ওই ম্যাচটাতেও তো এই মাঠেই থাকবে চাইবে ব্রাজিল!