মেসিকে ছাড়াই ইতালিকে হারিয়ে দিল আর্জেন্টিনা
শেষ মুহুর্তে ট্রেনিংয়ে চোট পাওয়া একাদশে ছিলেন না লিওনেল মেসি। পরে আর নামাই হয়নি তার। কিন্তু অধিনায়কের অনুপস্থিতিতেও ইতালিকে হারাতে সমস্যা হয়নি আর্জেন্টিনার। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ইতালিকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশনের প্রস্তুতিটা ঠিকঠাকভাবেই শুরু করল আর্জেন্টিনা।
মেসি ছিলেন না, তবে অবসর কাটিয়ে ইতালি দলে ফিরেছিলেন জিয়ানলুইজি বুফন। প্রথমার্ধে গোল আর আর্জেন্টিনার মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনিই। ৪০ বছর বয়সেও যে এখনও ফুরিয়ে যাননি সেই প্রমাণ রেখেছেন আজ। ১৭ মিনিটে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কর্নার থেকে করা হেড ঠেকিয়ে দিয়ে নিকোলাস অটামেন্ডিকে প্রথম গোলবঞ্চিত করেন বুফন। প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময় ইতালির রক্ষণ নিজেদের কাজটা করে গেলেও বাঁ প্রান্ত দিয়ে অ্যানহেল ডি মারিয়া দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন। ৩৬ মিনিটে অবশ্য লিওনার্দো বনুচ্চি একটা ভুল করে বসেছিলেন, কিন্তু তাকে শাস্তিটা দিতে পারেনি আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ। প্রথমার্ধে রক্ষণটা ঠিকঠাক ভাবে করলেও ইতালির আক্রমণভাগ ছিল একেবারেই নিষ্প্রভ। সার্জিও রোমেরোর জায়গায় নামা উইলি ক্যাবেয়ারোর পরীক্ষাটা প্রথমার্ধে নিতেই পারেননি তারা।
বিরতির আগে ইতালির রক্ষণের ওপর দিয়ে ছোটখাটো একটা ঝড়ই বয়ে গিয়েছিল। ৩৯ মিনিটে শুরুটা করেছিলেন লিওনার্দো পারেদেস। দুরপাল্লার শটে অবশ্য জালের ঠিকানা খুঁজে পাননি তিনি। এর ৫ মিনিট পরই সাজানো এক আক্রমণ থেকে টালিয়াফিকোর শট আরও একবার ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে গোলবঞ্চিত করেন বুফন। কিছুক্ষণ পর সেই সেভও ছাপিয়ে যান তিনি। ডি মারিয়ার থ্রু বল ডিবক্সের ভেতর খুঁজে পেয়েছিল হিগুয়াইনকে, ওয়ান অন ওয়ানে জুভেন্টাস সতীর্থের নেওয়া শট দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিয়ে প্রথমার্ধ গোলশুন্যই রাখেন বুফন।
বিরতির ঠিক পরই ইতালিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার পারেদেস! তার দেওয়া 'উদ্ভট' এক ব্যাক পাস থেকে বল পেয়েছিলেন ইনিসিনিয়ে। তারপর তিনি যা করলেন সেটা বোধ হয় পারেদেসের পাসের চেয়েও অদ্ভুত কিছু ছিল! ১২ গজ দূর থেকে গোলেই শট করতে পারেননি ইনসিনিয়ে। মিনিট খানেক পর আর্জেন্টিনাও পেয়েছিল গোলের সুযোগ, ম্যানুয়েল লানজিনির হেড অবশ্য চলে গিয়েছিল ওপর দিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য নিজেদের রক্ষণাত্মক খোলস ছেড়ে কিছুটা আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে ইতালি। ১৫ মিনিট না পেরুতেই আরও একবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল তারা। এবার ইম্মোবিলে গোলবঞ্চিত করেন ক্যাবেয়ারো। আর্জেন্টাইন গোলরক্ষককে দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকবারই বিপদে ফেলেছিল ইতালি। ৬৮ মিনিটে ইনসিনিয়ে আর জর্গিনহোর শট দু'বার ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন ক্যাবেয়ারো। আর সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার মাসুল ইতালিকে দিতে হয় ম্যাচ হেরে।
এসবের আগেই অবশ্য দুইজন বদলি করে ডি মারিয়া ও পারেদেসকে বসিয়ে এভার বানেগা ও ডিয়েগো পেরোত্তিকে নামিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ। হোর্হে সাম্পাওলির ওই সিদ্ধান্তই পরে বদলে দিয়েছে খেলার ফল। পেরোত্তি নামার পরই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজটা করেছেন বানেগাই। ৭৫ মিনিটে নিজের অর্ধে বল হারিয়েছিলেন জর্গিনহো, সেখান থেকে ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে গ্রাউন্ড শটে গোল করেন বানেগা। ডাগ আউটে সাম্পাওলির সাথে স্ট্যান্ডে বসে থাকা মেসি আর সার্জিও আগুয়েরোকেও স্বস্তি এনে দেন সেভিয়া মিডফিল্ডার।
এর ১০ মিনিট পরই কাউন্টার অ্যাটাক থেকে হিগুয়াইনের পাসে গোল করে আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত করেন লানজিনি। সাথে রাশিয়া যাওয়ার দাবিটাও বোধ হয় দিয়ে রাখলেন সাম্পাওলির কাছে।