• কোপা আমেরিকা
  • " />

     

    গতির খেলায় জিতলো ব্রাজিল

    গতির খেলায় জিতলো ব্রাজিল    

    গত বিশ্বকাপের সেই বৃদ্ধ লোকটার কথা মনে আছে আপনাদের? যিনি জার্মানির কাছে ৭ গোল খাওয়ার পরে বিশ্বকাপের একটা রেপ্লিকা ট্রফি বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। যেন ওটাই আসল ট্রফি! জার্মানি হারুক বা জিতুক, কিচ্ছু আসে যায় না। কাপ ব্রাজিলেরই।

     

    আজ ব্রাজিলের ২য় গোলের পরে সেই বৃদ্ধকে আবার দেখালো। চোখে মুখে তাঁর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। যেন বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছেন আবার!!!

     

    অথচ ব্রাজিল জিতেছে শুধুই একটা ম্যাচ! কোপা আমেরিকার একটা ম্যাচ। তাও সেই ম্যাচ যে ম্যাচ ব্রাজিলেরই জেতার কথা ছিল। পেরুর কখনোই নয়। তবুও ঐ উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছে কি দুঃসহ দিনই না তিনি পার করেছেন এতোদিন। ঐ উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছে একদল তরুণের হাত ধরে সোনালী দিন আবার ফিরছে ব্রাজিলে।

     

    ‘মর্নিং শো’জ দ্য ডে’ কথাটা সবসময় ঠিক হয় না। তবে ম্যাচের ৩য় মিনিটেই পেরুর গোল দেখে যদি কেউ ভেবে থাকেন চরম উত্তেজনাপূর্ণ একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে তবে তার ভাবনা মিথ্যে হয়নি। দর্শকরা মাঠে তখনো সবকিছু গুছিয়ে বসতেও পারেননি। এর মাঝেই পেরুর গোল। ব্রাজিলের গোলকিপার জেফারসন বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ভুলে তুলে দেন পেরুর কুয়েভা’র পায়ে। জেফারসনের এই ভুলের মাশুল ব্রাজিল দেয় ১-০ তে পিছিয়ে পড়ে। তবে সমতায় ফিরতে একেবারেই সময় নেয়নি তাঁরা। ৫ম মিনিটে দানি আলভেজ দেখালেন কেন বার্সা তাঁর সাথে চুক্তি আরও দুই বছর বাড়িয়েছে। তাঁর মাপা ক্রসে নেইমার লাফিয়ে উঠে যে হেডটা করলেন তার কোন জবাব ছিল না পেরুর গোলকিপারের কাছে।

     

     

    ব্রাজিলের এই দলে প্রতিভার অভাব নেই। পেরুর আবার উল্টো। তারকা তো পরের ব্যাপার, তেমন কোন প্রতিভাও নেই দলে। তা সত্ত্বেও জয়ের তৃষ্ণাতে তাঁদের কোন কমতি ছিল না। প্রতিভার অভাব তাঁরা ঢেকে দিচ্ছিলো প্রচণ্ড গতি দিয়ে। গতি দিয়েই ব্রাজিলকে তাঁরা সমস্যায় ফেলছিল বারবার। শেষ পর্যন্ত পেরে উঠলো না ব্রাজিলের সাথে। আসলে বলা ভালো, পারলো না নেইমারের কাছে। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন, এক গোল করেছেন, করিয়েছেন আরও এক গোল। একবার জোরালো শট ফিরলো বারে লেগে। এর সাথে যতগুলো সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সতীর্থরা কিছু অংশ কাজে লাগাতে পারলেও ব্রাজিল আজ জিততো বড় ব্যবধানেই।

     

     

     

    ব্রাজিল মানেই ‘জোগো বোনিতো’। ব্রাজিল মানেই ছোট ছোট পাসে ছন্দময় ফুটবল। তবে আজ ব্রাজিলের খেলায় ছোট পাসের চাইতে বেশী দেখা গেছে লং পাস। আর সেই সাথে ছিল প্রচন্ড গতি।  কার্লোস দুঙ্গা সম্ভবত পরপর তিনবার ইউরোপিয়ান দলের সাথে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ায় ইউরোপিয়ান স্টাইলে খেলাতে চাচ্ছেন দলকে। ব্রাজিল সমর্থকরা মন খারাপ করতে পারেন। কিন্তু এখনকার ফুটবলে ফলটাই আগে। সুন্দর ফুটবল খেলেও শিরোপাহীন থাকার চেয়ে ‘কুৎসিত’ ফুটবল খেলে শিরোপা জেতায় আপত্তি থাকার কথা নয় তাদের।

     

    ব্রাজিলের পরের ম্যাচ কলম্বিয়ার সাথে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ায় এই ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প নেই কলম্বিয়ার। তাই মরিয়া হয়েই খেলবে তাঁরা। গত বিশ্বকাপের হিসাব নিকাশও বাকি আছে যে এখনো। অন্যদিকে ব্রাজিলের এতো চিন্তা নেই। জিতলে তো বটেই, হারলেও কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার ভালো সুযোগ থাকবে। 

     

    সন্দেহ নেই, অত্যন্ত উপাদেয় এক ম্যাচ হতে যাচ্ছে আগামী ১৮ই জুন।