কোয়ার্টার ফাইনাল দেখছে আর্জেন্টিনা
ফুটবলে আর্জেন্টিনা আর উরুগুয়ের বৈরীতা অনেক পুরানো। একসময় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বলে বোঝানো হতো এ দুটি দলকে। সেইসব সোনালী দিন অনেক আগেই পার করে এসেছে তাঁরা। তবুও উরুগুয়ে আর আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হলে এখনো বাজে যুদ্ধের দামামা। তাই কোপা আমেরিকাতে এই দুই দল একই গ্রুপে পড়ায় এক আগুনঝরা ম্যাচের প্রত্যাশা করেছিলো সবাই। তা আগুন ঝরলো বটে। কিন্তু ফুটবলীয় দক্ষতার চেয়ে, শারীরিক শক্তির প্রদর্শনীই বেশি দেখা গেলো আজকের ম্যাচে। তা এমন পর্যায়ে গেলো যে এমনিতে ঠাণ্ডা মাথার মানুষ মেসি পর্যন্ত একবার মেজাজ হারালেন।
ম্যাচের প্রথম থেকেই উরুগুয়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়া আর পাস্তরে বারবার উরুগুয়ের ডিফেন্স ভেঙ্গে ঢুকে যাচ্ছিলেন ভিতরে। মাঝে মাঝে কাউন্টার অ্যাটাকে যাচ্ছিলো উরুগুয়েও। গোল বাদে হচ্ছিলো আর সবকিছুই।
ম্যাচের বয়স তখন ৩২ মিনিট। এই সময়ে রেফারী আর্জেন্টিনার কোচ টাটা মার্টিনোকে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। টাটা মার্টিনো মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এমন একটা ভঙ্গি করলেন যার মানে হতে পারে, “আমার কি দোষ? আমি কি জানি?”
মার্টিনো কিছুই করেন নি। শুধু রেফারীর সিদ্ধান্তের একটু ‘সমালোচনা’ করেছেন। উরুগুয়ের নিকোলাস লোদেইরো অযথাই ফাউল করে বসলেন জাবালেতাকে। সঙ্গে সঙ্গে রেফারীর হলুদ কার্ড। কিন্তু হলুদ কার্ডও পছন্দ হয়নি মার্টিনোর। আরও বেশি কিছু চাচ্ছিলেন তিনি। ফুটবল মাঠে রেফারীর কথাই শেষ কথা। টাটার এতো ‘স্পর্ধা’ রেফারীর সহ্য করার কোন কারণ ছিল না। বাকবিতন্ডা অতঃপর ডাগআউট থেকে বিদায়।
বারুদে যেন আগুন পড়লো। কোচকে হারিয়ে ফুঁসে উঠলো আর্জেন্টিনা। ফলও পেয়ে গেলো হাতেনাতে। বিরতির ১০ মিনিটের মাথায় জাবালেতার অ্যাসিস্টে গোল করে দলকে এগিয়ে নিলেন আগুয়েরো। পিছিয়ে পড়ে খেলায় ফেরার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে উরুগুয়ে। কামড়কান্ডের নায়ক লুইস সুয়ারেজের অভাব তাঁরা অনুভব করছিল প্রচন্ডভাবে। এর মধ্যেই চলে শারীরিক ফুটবল। দুই দলেরই কয়েকজন ফুটবলার মাঠে জড়িয়ে পড়েন তর্ক বিতর্কে। হস্তক্ষেপ করতে হয় রেফারীকে। শেষ পর্যন্ত উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতায়, আর রোমেরোর দৃঢ়তায় কোপার গত আসরের প্রতিশোধ নিয়েই মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টাইন সমর্থকরা ৩ পয়েন্ট নিয়েই খুশি থাকতে পারেন। কিন্তু এরকম একটা হাইভোল্টেজ ম্যাচ নিয়ে প্রত্যাশার পারদ যেভাবে চড়েছিলো তা পূরণ হয় নি একেবারেই। এর চেয়ে বরং চিলি-মেক্সিকো ম্যাচটা অনেক রোমাঞ্চকর ছিল।
উরুগুয়ের পরের ম্যাচ প্যারাগুয়ের সাথে। এই আসরে যেরকম গতিময় ফুটবল খেলছে প্যারাগুয়ে তাতে উরুগুয়ে বিপদে পড়তে পারে। প্যারাগুয়ের কাছে হারলে তাকিয়ে থাকতে হবে প্লেঅফের দিকে।
আর্জেন্টিনার পরের ম্যাচ জ্যামাইকার সাথে। জিতলেই কোয়ার্টার ফাইনাল। আর দলটার নাম যেহেতু জ্যামাইকা, সহজ জয় আশা করতেই পারে তাঁরা।
আলবিসেলেস্তেদের মনের কথা এখন বোধহয় এটাই, “ঐ দেখা যায় কোয়ার্টার ফাইনাল।”