পরাজয়ের পর নেইমার-বিতর্ক
এর নাম ফুটবল????
হওয়ার কথা ছিল ধ্রুপদী এক লড়াই। কিন্তু আদতে হলটা কি? কুৎসিত এক ফুটবল ম্যাচ। মারামারি, ধাক্কাধাক্কি, হলুদ কার্ড, লাল কার্ড কোনকিছুই বাদ গেলো না যার তালিকা থেকে।
এমনিতে কলম্বিয়া, ব্রাজিলের এমন কোন আহামরি প্রতিপক্ষ ছিল না কোনদিনই। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ব্রাজিল-কলম্বিয়া ম্যাচ মানেই উত্তেজনার ঝাঁজ। সেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। নেইমারের শিরদাঁড়ায় আঘাত করে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দেন কলম্বিয়ার জুনিগা। নেইমারবিহীন ব্রাজিলই পরে ছিটকে যায় টুর্নামেন্ট থেকে।
সেই রাগ এখনো মনের মধ্যে পুষে রেখেছেন নেইমার। মুখে যতই বলুন না কেন, তিনি যে কিছুই ভোলেন নি তার প্রমাণ আজকের ম্যাচ।
আগে থেকে জানা না থাকলে আজ খেলা দেখে ভুল করতে পারতেন যেকেউ। ব্রাজিলের সাথে কি ইটালির খেলা হচ্ছে নাকি? কলম্বিয়া হলুদ জার্সি পরে নামায় ব্রাজিল মাঠে নেমেছিল ঐতিহ্যবাহী হলুদ জার্সি বাদ দিয়ে নীল জার্সিতে। জার্সি বদলের সাথে সাথে কি খেলাও চেঞ্জ হয়ে গেলো ব্রাজিলের? নাহলে যে দল পেরুর সাথে এতো অ্যাটাকিং খেলা খেলে, আজ তাঁরাই ইটালির মতো এতো রক্ষণাত্মক খেলা খেলে কিভাবে?
ম্যাচের প্রথম থেকেই ব্রাজিলকে চেপে ধরে কলম্বিয়া। ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা তখন নিজেদেরকে হারিয়ে খুঁজছেন। ৩৬ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্সের ভুলে গোল করে কলম্বিয়াকে এগিয়ে নেন হেইসান মুরিলো। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে ‘ম্যারাডোনা’ হওয়ার চেষ্টা করলেন নেইমার। হতে তো পারলেনই না, উল্টো হাত দিয়ে গোল দেওয়ার চেষ্টা করার অপরাধে খেয়ে গেলেন হলুদ কার্ড।
দ্বিতীয়ার্ধে দুঙ্গা আক্রমণের ধার বাড়ানোর জন্য নামান কৌটিনহোকে। আক্রমণের ধার বাড়লেও তা অকার্যকর হয়ে পড়ছিল কলম্বিয়ার রক্ষণে এসে। এর মাঝেই এক অমার্জনীয় ভুল করে বসেন রবার্টো ফিরমিনো। গোলকিপারবিহীন ফাঁকা পোস্টে বল বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন। এই ধরণের ভুল করার পরে ম্যাচে ফেরা সম্ভব ছিল না।
ব্রাজিলের প্রাণ যে নেইমার নামক পাখির মধ্যে লুকায়িত সেটি ভালোই বুঝেছিলেন কলম্বিয়ার কোচ পেকারম্যান। তাই নেইমারকে রীতিমতো বোতলবন্দী করে রাখা হয়েছিলো। ফাউলও চলছিল সমানে। মেজাজ হারাতে থাকেন নেইমার। ব্রাজিলের টানা ১১ ম্যাচের জয়রথ থামে তাই কলম্বিয়াতে এসে।
খেলা শেষে মাঠ হয়ে যায় রণক্ষেত্র। দুই দলের খেলোয়াড়রাই জড়িয়ে পড়ে হাতাহাতিতে। নেইমার আর কলম্বিয়ার বাক্কা খান লাল কার্ড।
এই ব্রাজিলের সমস্যা কি? এই প্রশ্ন করা হলে অনেক উত্তর পাওয়া যাবে। কিন্তু মোটাদাগে বলতে গেলে, এই ব্রাজিলের সমস্যার নাম অতিরিক্ত নেইমারনির্ভরশীলতা। আগামী ম্যাচে খেলতে হবে ভেনেজুয়েলার সাথে। যারা প্রথম ম্যাচেই হারিয়েছে কলম্বিয়াকে। থাকবেন না নেইমার। কঠিন এক ম্যাচই অপেক্ষা করছে তাই ব্রাজিলের জন্য। তবে এর ভালো দিকও আছে। নেইমারবিহীন ব্রাজিল কি করতে পারে তা দেখে নিতে পারবেন দুঙ্গা।
প্রথম ম্যাচ হেরে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলো কলম্বিয়া। আজ জয়ের বিকল্প ছিল না তাঁদের। ব্রাজিলকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে টিকে রইলো তাঁরা। শেষ ম্যাচে তাঁদের প্রতিপক্ষ পেরু।
আজ যা হল তাতে ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ শব্দটা এখন থেকে আর্জেন্টিনার সাথে কলম্বিয়ার জন্যেও ব্যবহার করতেই পারে ব্রাজিল।