• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    অবশেষে টটেনহামের স্ট্যামফোর্ড দুর্গ জয়

    অবশেষে টটেনহামের স্ট্যামফোর্ড দুর্গ জয়    

    ১৯৯০ সালে ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবলে শেষবার স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে জয়ের মুখ দেখেছিল টটেনহাম হটস্পার। এরপর ২৭ বছরে ২৭ বার চেলসির মাঠ থেকে জয় ছাড়াই ফেরত এসেছে তারা। আজও শুরুতে আবার টটেনহাম  পিছিয়ে পড়ায়  মনে হচ্ছিল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিই হবে। কিন্তু চার মিনিটে দুই গোল দিয়ে ইতিহাসটাই আজ বদলে দিল টটেনহাম হটস্পার। সঙ্গে পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলাটাও প্রায় নিশ্চিত করে ফেলল তারা। আর চেলসির সম্ভাবনা হয়ে গেল আরও ফিকে। চেলসিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার চার নম্বরে টটেনহাম এগিয়ে গেছে  ৮ পয়েন্টে। পাঁচে থাকা চেলসির পয়েন্ট ৫৬।   

    স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে আজ শুরু থেকেই বলের দখল বেশি ছিল টটেনহামের। চেলসিকে অবশ্য সেটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিতও মনে হচ্ছিল না। বল পজেশন না থাকলেও রক্ষণে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করে যাচ্ছিল চেলসি। প্রতি আক্রমণেও টটেনহামের রক্ষণের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন এডেন হ্যাজার্ড, উইলিয়ানরা। দুই উইংব্যাক মার্কোস আলোন্সো আর ভিক্টর মোসেসরাও দুই প্রান্ত দিয়ে টটেনহামের রক্ষণকে তটস্থ করে রেখেছিলেন। চেলসির মাঠ বড় করে খেলার বিপরীতে টটেনহামের খেলার ধরন ছিল মাঝ বরাবর। দুই প্রান্তের চেয়ে চেলসির ডিবক্সের ঠিক সামনেই ভীড় জমাচ্ছিলেন এরিক লামেলা, ড্যালে আলিরা। বলের দখল নিয়েও প্রথমার্ধে তাই চেলসিকে বিপদে ফেলার মতো কিছুই করতে পারেনি টটেনহাম।



    ম্যাচের আধ ঘন্টা না পেরুতেই ডান প্রান্ত দিয়ে মোসেসের এক ক্রসেই কপাল পোড়ে টটেনহামের। অবশ্য ভুলটা করেছিলেন হুগো লরিস। ক্রস ঠেকাতে এগিয়ে এসে লাফ দিয়েছিলেন, নাগাল পাননি। ডেভিডসন সানচেজকে বাতাসে হারিয়ে সেই ক্রসে মাথা ছুঁয়ে চেলসিকে এগিয়ে দেন আলভারো মোরাতা। 

    দলে সুযোগ পেয়েই সেটা লুফে নিয়েছিলেন আজ চেলসির স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। হেড দিয়ে গোল করাটা মোরাতার অভ্যাসই হয়ে গেছে হয়ত, গোল পেতে ভুগতে হলেও হেডে গোল করাটা যেন কোনো ব্যাপারই তার কাছে। এই মৌসুমে একই এই নিয়ে ৭ বার করলেন মোরাতা, প্রমিয়ার লিগে তার চেয়ে বেশি হেডে গোল করেননি আর কেউ। মোরাতার হাসিটা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। নিজেদের অর্ধে বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন মোসেস। সেখান থেকে বল পেয়ে প্রথমার্ধ শেষের কিছুক্ষণ আগে ২৫ গজ থেকে দারুণ এক শট  করেছিলে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। ইনজুরি আক্রান্ত থিবো কোর্তোয়ার জায়গায় খেলতে নামা উইলি ক্যাবেয়ারো শটটা ধরার চেষ্টাও করতে পারেননি, অনেকটা আচমকাই তাই গোল খেয়ে বসে চেলসি। 

    গোল হজমের আগেই চেলসি অবশ্য ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারত। আলোন্সো, কান্তেরা গোলেও শট নিয়েছিলেন ভালো জায়গা থেকে। কিন্তু গোলটা আর করতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও দুই উইং ধরে আক্রমণ করে যাচ্ছিল চেলসি। কিন্তু টটেনহাম নিজেদের বদলে নিল সময়মতো, কিছুটা মাঠ বড় করে খেলার চেষ্টা দেখা গেল মারুসিও পচেত্তিনোর দলের মধ্যেও। এই টোটকাটাই বদলে দিল খেলার ফলও। আধঘন্টা পার হওয়ার পর আক্রমণে ভয়ংকর হয়ে উঠে ক্যাবেয়ারোর পরীক্ষাটা প্রথমে নিয়েছিলেন হিউ মিং সন। সে দফায় অবশ্য ভালো সেভ করে চেলসিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন ক্যাবেয়ারো। 

    কিন্তু এরপর আর বেশিক্ষণ টটেনহামকে আটকে পারলেন না। ৬২ মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে এরিক ডায়ারের মাপা লং বল খুঁজে  পেল অ্যালিকে। এক টাচে বল রিসিভ করলেন, পরের টাচে গোল! টটেনহামকে ইতিহাস গড়া জয়ের স্বপ্নটা তখন থেকেই সত্যি হতে শুরু করল। এর চার মিনিট পর যখন আলি নিজের দ্বিতীয় গোলটা করলেন তখন তো জয়টা প্রাপ্যই হয়ে গেল টটেনহামের জন্য।

    ৬৬ মিনিটে বল নিয়ে চেলসির ডিবক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন সন। তাকে একবার আটকেও দিয়েছিলেন ক্যাবেয়ারো, কিন্তু জটলার ভেতর ফিরতি বল চলে যায় অ্যালির কাছে। সেখান থেকেই নিজের শততম ম্যাচে করেন দ্বিতীয় গোলটি।

    সব পাওয়ার ম্যাচে টটেনহাম ফিরে পেয়েছিল হ্যারি কেইনকেও। প্রায় মাসখানেক মাঠের বাইরে থাকার পর শেষদিকে কেইনকে নামিয়ে দিয়েছিলেন পচেত্তিনো। সব হারানোর ম্যাচে আন্তোনিও কন্তের শুরুর হাসিটা ততোক্ষণে মিলিয়ে গেছে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে। শেষদিকে অলিভিয়ের জিরুকে নামিয়ে সবরকম চেষ্টা করেছিলেন গতবারের শিরোপাজয়ী ম্যানেজার। কিন্তু হারটা ততোক্ষণে নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল তার। ডাগআউটের প্রতিদ্বন্দ্বীই কেড়ে নিয়েছেন সব শিরোনাম।