'নিজেকে মেলে ধরেই' মাশরাফির ইতিহাস
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পেয়েছে ২০১৩-১৪ মৌসুমে। সেবার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন আরাফাত সানি, ২৯ উইকেট নিয়ে। পরের মৌসুমে ৩১ উইকেট নিয়েছিলেন ইলিয়াস সানি, ২০১৫-১৬ মৌসুমে ৩০ উইকেট নিয়ে উইকেটশিকারিদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন শ্রীলঙ্কান বোলার চতুরঙ্গ ডি সিলভা। গত মৌসুমে সবাইক ছাড়িয়ে গিয়ে আবু হায়দার রনি নিয়েছিলেন ৩৫ উইকেট। এবার নতুন ইতিহাস গড়লেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, এক ম্যাচ বাকি থাকতেই এ মৌসুমে আবাহনীর পেসারের উইকেট হয়ে গেছে ৩৮।
টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন, নিদাহাস ট্রফিতে তাই খেলার সুযোগ ছিল না। টেস্টও খেলেন না, সম্বল বলতে জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ম্যাচই, ত্রিদেশীয় সিরিজে তাই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মাশরাফি। প্রিমিয়ার লিগকেই তাই পাখির চোখ করেছিলেন, সুফল পাচ্ছেন সেটারই, ‘লিগের শুরুতে জানতাম এ মৌসুমে পুরোটা খেলার সুযোগ আছে। যেহেতু টি-টোয়েন্টি খেলছি না। নিদাহাস ট্রফিতে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। মানসিকতাটা ওইরকম ছিল না হয়তো (শুরুর সময়), তবে প্রস্তুতি যেন ঠিকঠাক হয় পরের ওয়ানডে সিরিজ আসার আগে। এই লিগ তাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখনো পর্যন্ত সব ভালো যাচ্ছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।’
সেই গুরুত্বটা মাশরাফি দিয়েছিলেন মূলত নিজেকে ‘শেপ’-এ রাখার জন্য, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে। উইকেটসংখ্যার চেয়ে মাশরাফির কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে এটাই, ‘আমার জন্য ভালো সুযোগ ছিল নিজেকে মেলে ধরার। আমি যেটা চেয়েছিলাম সেটা করতে পেরেছি। অনেক কিছুই আমি নতুন করে করতে পেরেছি লিগে, যেটা আমার হচ্ছে। যেটা হয়তো প্রত্যাশা করিনি, শুরুতে প্রথম শ্রেণির জন্য বিশ্রাম নিব কি না। কিন্তু আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেই ঝুঁকিটা নেওয়া কাজে এসেছে।’
মাশরাফি শুধু নতুন করে লিগে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডই গড়েননি, টানা চার বলে চার উইকেট নেওয়া প্রথম বাংলাদেশী বোলারও হয়েছেন লিস্ট ‘এ’-তে। এ লিগটাই বাড়িয়ে দিয়েছে মাশরাফির আত্মবিশ্বাস, ‘আন্তর্জাতিক মানের না হলেও আমার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজে এসেছে। অফ-সিজনে অনুশীলনে কোচদের সাথে আলোচনা করে জিনিসটা তৈরি করা যায় কি না, যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও কাজে লাগাতে পারি। আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য ছিল আমি যেন ভালো শেপ-এ থাকি, প্রস্তুতি যেন ভালো থাকে। উইকেটের ব্যাপার না আসলে। যেটা আমার লক্ষ্য ছিল আমি এখন পর্যন্ত সেটা পেরেছি, এটাই বড় ব্যাপার।’
২০০১-০২ মৌসুম থেকে ঘরোয়া লিগে সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলছেন, অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও তো কম পূর্ণ হলো না মাশরাফির। তবে মাঠের পারফরম্যান্সে নয়, মূলত সব মিলিয়েই এর সুফলটা পাচ্ছেন তিনি বলে জানালেন, ‘না, যদি আমার খেলার কথা বলেন, মাঠে আমার পারফরম্যান্সের কথা বলেন- সে জায়গায় পার্থক্য তৈরি হয়নি। একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে ম্যানেজিং ক্ষমতাটা। এটা মাঠের বাইরেও হতে পারে। জিম, রানিং হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে হবে। এটা অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে হবে। আপনি যখন দীর্ঘদিন খেলবেন, আপনাকে মাঠে সেটা সহায়তা করবে।’
তবে সবকিছুর সঙ্গে ভাগ্যের ছোঁয়ারও গুরুত্ব আছে মাশরাফির কাছে, ‘পরিশ্রম তো করতেই হবে। আমি ভাগ্যে অনেক বিশ্বাসী, এটাও গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হলে। তাপরও একটার পর একটা সিরিজ আসবে। চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে, কষ্টও করতে হবে। যতদিন খেলব। তারপর কিছু পেলে তো ভালোই লাগে। সেটা হলে ভালো লাগে, না হলেও পরের দিনে আবার উঠে একই কাজ করতে হয়। (শুধুই) ওটা ধরে চলা খুব কঠিন।’
গত বছর জাতীয় লিগে খেলেছিলেন, প্রিমিয়ার লিগে বিরতি শেষে শুরু হচ্ছে বিসিএল, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ। সেখানে খেলবেন কিনা, সেটা নিশ্চিত করেননি মাশরাফি, আপাতত এক ম্যাচ বিশ্রাম নেবেন। ভেবে দেখবেন তারপরই।