শেষ বলে চার মেরে রেলিগেশন বাঁচালো ব্রাদার্স
অগ্রণী ব্যাংক ৩৩৪, ৪৯.১ ওভার (সৌম্য ১৫৪, ধাওয়ান ৮০*, ধীমান ২৫, সাখাওয়াত ৩/৪৩, সোহরাওয়ার্দি ৩/৪৮)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৩৩৫/৬, ৫০ ওভার (জুনাইদ ৮৩, মাইশুকুর ৮২, দেবব্রত ৭৩, মিজানুর ৬২, ধাওয়ান ৩/৭১)
ফল- ব্রাদার্স ৪ উইকেটে জয়ী
রেলিগেশন লিগের শেষ ম্যাচ, কার্যত প্লে-অফ। যে জিতবে, তারা টিকে থাকবে প্রিমিয়ার লিগে, আর হারলেই অবনমন। সেই প্লে-অফে অগ্রণী ব্যাংক ও ব্রাদার্স যা করলো, এর চেয়ে বেশি রোমাঞ্চ আর কিইবা হতে পারে! শেষ বলে চার মেরে ব্রাদার্সকে জিতিয়েছেন নাজমুস সাদাত, যা আবার লিস্ট ‘এ’ হওয়ার পর প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান-তাড়ার রেকর্ড। ৩৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্রাদার্সের টপ অর্ডারের চার ফিফটি, বা তারও আগে মৌসুম-রেকর্ড সৌম্য সরকারের ১৫৪ রানের ইনিংস ছাপিয়ে তাই শেষ নায়ক ৭ বলে ১০ রানের ইনিংস খেলা সাদাতই। পরের মৌসুমে টিকে থাকলো ব্রাদার্স, আর এবারই প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পেয়ে আবার প্রথম বিভাগে ফিরে যাচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক।
৩৩৫ রানের লক্ষ্য, ব্রাদার্সের দুই ওপেনার মিজানুর রহমান ও জুনাইদ সিদ্দিক করলেন স্বপ্নের মতো শুরু। ১৩.৪ ওভারেই দুইজন তুলেছেন ১২১ রান, ইসলামুল আহসানের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে মিজানুর ৬২ রান করতে খেলেছেন মাত্র ৪৫ বল, ৯টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছয়। এরপর অবশ্য ধীরগতিতে এগিয়েছেন জুনাইদ ও মাইশুকুর রহমান। ১৪.৫ ওভারে দুইজন মিলে তুলেছেন ৭৭ রান, ৭৭ বলে ৮৩ করে প্রথমে আউট হয়েছেন জুনাইদ।
মাইশুকুরের সঙ্গে এবার জুটি ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান দেবব্রত দাসের, ১৫ ওভারে তারা তুলেছেন ৮৮ রান। মাইশুকুরও আউট হয়েছেন আশির ঘরেই, ধাওয়ানের বলে শাহরিয়ার নাফিসকে ক্যাচ দেওয়ার আগে তার রান ৮২, ৯৫ বলে। তবে ছিলেন দেবব্রত, শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে গিয়ে আউট হয়েছেন ৬২ বলে ৭৩ রান করে।
শেষ ওভারে ব্রাদার্সের প্রয়োজন ছিল ৯ রান, ঋষি ধাওয়ানের প্রথম বলে সাদাত নিয়েছিলেন সিঙ্গেল, পরের বলেই আউট দেবব্রত। পরের ৩ বলে সাদাত ও সোহরাওয়ার্দি শুভ নিতে পারলেন মাত্র ৪ রান, শেষ বলে তাই সাদাতের সামনে খোলা ছিল শুধুই বাউন্ডারির দরজা, আর নাহলেই রেলিগেশনের খাঁড়া। সেই খাঁড়া মাথায় নিয়েই চার মেরে দিলেন তিনি! গত মৌসুমে মোহামেডানের ৩৩৯ রান ১ উইকেট বাকি রেখে তাড়া করেছিল শেখ জামাল, প্রিমিয়ার লিগে লিস্ট 'এ' মর্যাদা পাওয়ার পর রেকর্ড সেটিই।
এর আগে অগ্রণী ব্যাংকের ইনিংস ছিল সৌম্যময়, সঙ্গে ছিলেন ঋষি ধাওয়ান। প্রিমিয়ার লিগের এ মৌসুমে এর আগে সাতটি ম্যাচ খেলেছিলেন সৌম্য, সর্বোচ্চ ছিল ৮৯ রান। আজ শুধু প্রথম সেঞ্চুরি নয়, গড়লেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসই। ৪৪ রানে শাহরিয়ার নাফিসের সঙ্গে ওপেনিং জুটি ভাঙলেও সৌম্য ছিলেন ৪৬তম ওভার পর্যন্ত।
৬৭ বলে ফিফটি করেছেন, সেঞ্চুরি করতে লেগেছে ১০৭ বল। এরপরই ঝড় শুরু করেছেন এই বাঁহাতি, অলক কাপালিকে এক ওভারেই টানা তিন ছয়ের পর মেরেছেন একটি চারও। মাইশুকুর রহমানের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৭ বলে করেছেন ১৫৪ রান, ৯টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১১টি ছয়। প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরে এটিই সর্বোচ্চ ইনিংস। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাজিত ১৫০ রান। আর সৌম্যর লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ১২৭ রান। সৌম্যর ১১টি ছয়ও এ মৌসুমের রেকর্ড।
৫ম উইকেটে ভারতীয় ব্যাটসম্যান ঋষি ধাওয়ানের সঙ্গে সৌম্যর জুটি ১৭১ রানের, যা এ উইকেটে সর্বোচ্চ। ধাওয়ান শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৮০ রানে, ৬৫ বলের ইনিংসে ৯টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছয়। তবে অগ্রণী ব্যাংকের লোয়ার অর্ডার সঙ্গই দিতে পারেনি তাকে, ১২ বলে ৮ রান তুলতেই তারা হারিয়েছে শেষ ৫ উইকেট। ৫ বল বাকি থাকতেই তাই ৩৩৪ রানে থামতে হয়েছে তাদের।
তবে সৌম্যর সেই ইনিংস বা ধাওয়ানের অল-রাউন্ড পারফরম্যান্সের পরও প্রিমিয়ার লিগে থেমে যেতে হলো অগ্রণী ব্যাংককে। শুধু থেমে যেতে হলো কেন, নিচেই তো নেমে যেতে হলো।
আর সাদাতে ভর করে ব্রাদার্স রইল প্রিমিয়ার লিগেই।