লিভারপুলের হেভি মেটাল ফুটবলে অসহায় সিটি
কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে লিভারপুল ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ বলেছিলেন, অ্যানফিল্ডে আজ আগুন জ্বলবে। অ্যানফিল্ডে আগুনই জ্বলল, আর তাতে পুড়ে ছাড়খার সিটিজেনরা। প্রথম ৩০ মিনিটে ৩ গোল দিয়ে ম্যাচে সিটিকে কোনো সুযোগই দিলনা লিভারপুল। শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলের জয় দিয়ে অ্যানফিল্ডে মনে রাখার মতো এক রাত কেটেছে কপদের। প্রথম লেগে বড় জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ওঠার পথেও বড় সড় এক পা দিয়ে রাখল ক্লপের দল। এখান থেকে পরের রাউন্ডে যেতে হলে সিটিকে করতে প্রায় অসম্ভব কিছু।
দুই দলের ম্যাচে গোলের আশা করেছিলেন সবাই। যাদের ধর্মই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা, তারাই যখন প্রতিপক্ষ তখন গোলের আশা করাটা তো স্বাভাবিকই। সেই তুলনায় খেলার প্রথম ১০ মিনিটে কোনো শট অন টার্গেট না দেখে অনেকে হয়ত হতাশ হয়েও পড়েছিলেন। এরপর নিজেদের বদলে নিল লিভারপুলই। পরের সময়টায় চললো কপদের হেভি মেটাল ফুটবল। আর সিটি খেলোয়াড়দের ভুলের স্রোত। ১২ মিনিটে আক্রমণে উঠে একটা ভুল পাস দিয়েছিলেন রাহিম স্টার্লিংয়ের জায়গায় খেলতে নামা লিরয় সানে। সেখান থেকে বল গেল জেমস মিলনারের পায়ে, লম্বা পাসে খুঁজে পেলেন মোহাম্মহদ সালাহকে। বলটা এরপর রবার্তো ফিরমিনোকে দিয়েছিলেন সালাহ। কিন্তু বলও বোধ হয় জানত গোল হতে হলে কার পায়ে যেতে হয়! কাইল ওয়াকার বলটা ক্লিয়ার করতে পারলেন না, ফিরমিনোই আবার পাস দিলেন সালাহকে। ছয় গজ বক্সের ভেতর থেকে গোল দিয়ে অ্যানফিল্ডকে নাচিয়ে তুললেন মিশরীয় উইঙ্গার।
এরপর প্রথমার্ধের বাকি সময়ে লিভারপুল আসলে নাচিয়ে ছেড়েছে সিটিকেই। পুরো মৌসুমে সিটি খেলোয়াড়েরা কয়টি ভুল করেছেন সেটা আঙুল দিয়ে গোণা যেত এতোদিন, আজ এক ম্যাচেই ছাড়িয়ে গেলেন আগের সবকিছু। ২১ মিনিটে সিটির অর্ধে বল আদায় করে অক্সলেড চেম্বারলাইনের কাছে দিলেন মিলনার। ২৫ গজ দূর থেকে এডারসন মোরায়েসকে কোনো সুযোগই দিলেন না চেম্বারলাইন। জানুয়ারিতে প্রিমিয়ার লিগে এই দুই দলের ম্যাচের মতোই, সেবার কোণাকুনি শটে করেছিলেন গোল, এবার ডিবক্সের সামনে মাঝামাঝি জায়গা থেকে মারলেন উড়িয়ে, ঠিকানা একই।
সিটির আক্রমণভাগে ছিলেন না সার্জিও আগুয়েরো, একা ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল হেসুস ওপরে পড়ে থাকলেন একাই। প্রথমার্ধে মোট ছয়বার বলের নাগাল পেয়েছিলেন হেসুস, এর মধ্যে তিনবারই সেন্টার থেকে বলে টাচ করেছেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার মতোও ছিলেন না কেউই। সানে, সিলভা, গুন্ডোয়ানরা তখনও লিভারপুলকে আটকাতেই ব্যস্ত। আর লিভারপুলের প্রেসিং ততোক্ষণে পৌঁছে গেছে সিটির ডিবক্সের ভেতরও। একটা সময় গোলকিক থেকেও নিজেদের ডিবক্সের ভেতর অবস্থান করছিলেন সিটির তিন ডিফেন্ডার। সিটিকে আক্ষরিক অর্থেই গলা চেপে ধরেছিল লিভারপুল।
সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৩১ মিনিটে আরও একবার গোল করল সিটি। ডান দিক থেকে প্রথমে শটই করেছেন সালাহ, ব্লকড হয়ে সেই বল ফেরত আসল তার পায়েই। এবার করলেন ক্রস, ডিবক্সের ভেতর লাফিয়ে উঠে হেডে বল জালে জড়ালেন সাদিও মানে। ডাগ আউটে তখন পেপ গার্দিওলা মাথা নাড়াচ্ছেন অবিশ্বাসে। আর প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আরও বেশ কয়েকবার দারুণ সুযোগ তৈরি করেও লিডটা বাড়িয়ে নিতে না পারায় কিছুটা অবিশ্বাস জমলো বোধ হয় ক্লপের মনেও!
দলটা সিটি না হলে হয়ত প্রথমার্ধ শেষেই সংবাদের শিরোনাম ঠিক হয়ে যেত। প্রিমিয়ার লিগের ওই ম্যাচে তো ৪ গোল হজম করেও পরে ৩ গোল শোধ দিয়েছিল সিটি। তেমন কিছু হবে না সেটা কে জানত? দ্বিতীয়ার্ধে সিটির খেলায় সেই ইঙ্গিতও পাওয়া গিয়েছিল। ৫১ মিনিটেই সানে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু শটই করতে পারেননি গোলে। এরপরে কিছুটা পজেশন বজায় রেখে খেলার চেষ্টা করছিল সিটি। ৫২ মিনিটে সালাহ ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর কিছুটা চাপও কমেছিল সিটির রক্ষণে। কিন্তু দুই ফুলব্যাক আয়মেরিক লাপোর্তে আর ওয়াকাররা তেমন কিছুই করতে পারেননি আক্রমণে উঠে। জর্জিনিয়ো ওয়ানাইল্ডামকে নামিয়ে মাঝমাঠে আরও মানুষ বাড়িয়ে ক্লপই কাজটা কঠিন বানিয়ে দিয়েছিলেন।
লিভারপুল- সিটির আগের ম্যাচে সালাহ, মানে, চেম্বারলাইনদের সঙ্গে গোল করেছিলেন ফিরমিনোও। ৭১ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে তুলে নেওয়ায় সেই পুনরাবৃত্তি আর হয়নি আজ। তবে তার জায়গায় নেমেই ডমিনিক সোলাংকে গোলের দারুণ এক সুযোগ করে দিয়েছিলেন লিভারপুলকে। কিন্তু মানে সে দফায় হলেন ব্যর্থ। দ্বিতীয়ার্ধে এর বাইরে আক্রমণে কমই দেখা গেছে লিভারপুলকে, বরং নিজেদের জালে গোল ঢুকতে না দেওয়ার দিকেই মন ছিল বেশি তাদের।
লিভারপুলকে নিজেদের রক্ষণ নিয়ে আজ দুশ্চিন্তা যা করতে হয়েছে সব ম্যাচের আগেই। পুরো ৯০ মিনিটেও লিভারপুলের গোলে একবারও শট করতে পারেননি সিটির কেউ। শেষদিকে ডেভিড সিলভা একবার জালে বল জড়িয়েছিলেন, সেটাও বাতিল হয়েছে রেফারির অফসাইড সিদ্ধান্তে। পরে নেমে রাহিম স্টার্লিংও সাবেক দলের বিপক্ষে মাঠ থেকে হারের স্বাদটাই নিতে পেরেছেন কেবল।