• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ঘরের মাঠেও লিভারপুলের কাছে হারল সিটি

    ঘরের মাঠেও লিভারপুলের কাছে হারল সিটি    

    ম্যানচেস্টার সিটির দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে গিয়েছিলেন সাদিও মানে। এগিয়ে এসে গোলরক্ষক এডারসন মোরায়েস বলটা ঠিকমতো ধরতে পারলেন না। পেছন থেকে দৌঁড়ে এসে মোহাম্মদ সালাহ ততোক্ষণে পৌঁছে গেছেন সেই বলের কাছে। আরেকটু কোণাকুণি গিয়ে করলেন চিপ, বল জড়াল সোজা জালে। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন সালাহ, সেটাই তার উদযাপন। ঠায় দাঁড়িয়ে গেল গোটা ইতিহাদ স্টেডিয়াম। সালাহর মুখোমুখি দাঁড়ানো লিভারপুল সমর্থকদের লাল রঙের আনন্দে ততোক্ষণে ম্লান হয়ে গেছে সিটির অসম্ভবকে সম্ভব করার মিশন। দরকার ছিল একটা অ্যাওয়ে গোল, সেটাই পেয়ে গেল লিভারপুল ৫৬ মিনিটে। ম্যাচের শুরুতেই গোল করলেও পাহাড়সম বাধা আর পেরুনো হয়নি সিটির। সালাহর পর ফিরমিনোর কাছেও গোল খেয়ে দ্বিতীয় লেগটাও শেষ পর্যন্ত হেরেই শেষ হয়েছে পেপ গার্দিওলার দলের। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলে জিতে সেমিফাইনালে উঠে গেছে লিভারপুল। 

    অ্যানফিল্ডে পুরো ম্যাচে সিটির শট অন টার্গেট ছিল শূন্য। আজ সিটি সময় নিয়েছিল মাত্র দুই মিনিট। আগের ম্যাচে মাত্র কয়েকবার বলের দেখা পাওয়া গ্যাব্রিয়েল হেসুসই অতি আকাঙ্ক্ষিত সেই দ্রুত গোলটা পাইয়ে দিয়েছিলেন সিটিকে। ভুলটা করেছিলেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক। ফাউলের আশা খেলা থামিয়ে পরে প্রতিপক্ষকে উপহার দিয়েছিলেন পজেশন। সেখান থেকেই বল পেয়ে রাহিম স্টার্লিংয়ের পাস থেকে গোল করেন হেসুস।



    শুরুতেই গোল পেয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার মিশনে আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে সিটি। ঘরের মাঠে বারবার আক্রমণ করে লিভারপুলকে কোনঠাসাই করে রেখেছিল গার্দিওলার দল। তবে তিনজনের রক্ষণ নিয়ে নামার সিটির গোল হজমের ভয়ও ছিল। রক্ষণে কাজটা নির্ভুলভাবে পার করে প্রথমার্ধে অবশ্য লিভারপুলকে তেমন একটা সুযোগই দেয়নি সিটিজেনরা। বল পজেশন বজায় রেখে প্রথমার্ধে লিভারপুলের অর্ধেই বেশি সময় পার করলেও নিশ্চিত গোলের সুযোগটা তৈরি করতে প্রথমার্ধের শেষপর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল সিটিকে। ৪১ মিনিটে বার্নার্দো সিলভার শট বারপোস্টে লেগে ফেরত আসলে গোলবঞ্চিত হয়ে সিটি, আর হাফ ছেড়ে বাঁচে লিভারপুল। কিন্তু মিনিট খানেক পরই বল জালে জড়িয়েও গোল না পেয়ে আরও একবার খালি হাতে ফিরতে হয় সিটিকে।

    স্প্যানিশ রেফারি আন্তোনিও মাতেউকে নিয়ে শুরু থেকেই অযিযোগ ছিল পেপ গার্দিওলার। লিরয় সানে বল জালে ঢোকালেও রেফারি দিয়েছিলেন ফাউলের সিদ্ধান্ত। স্টার্লিংয়ের বিরুদ্ধে দেওয়া ফাউলের সিদ্ধান্তটাই পছন্দ হয়নি গার্দিওলার। টিভি রিপ্লেতে দেখেও মনে হয়নি ফাউল। কিন্তু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গার্দিওলার আচরণ সমীচিন মনে হয়নি রেফারির কাছে। বিরতির সময়ই তাই ডাগআউট থেকে গার্দিওলাকে বহিষ্কার করে ম্যাচের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেন রেফারিও।   

    ইতিহাদের উত্তেজনায় প্রথমার্ধে দর্শকই বনে ছিল লিভারপুল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে খোলস ছেড়ে বেরুতে থাকে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। আর ডাগ আউটে গার্দিওলাকে হারিয়ে যেন দিশেহারা পড়ে সিটিও। বলের দখল সিটিজেনদের পায়ে থাকলেও সুযোগের স্বদব্যবহারটা করতে ভুল করেনি লিভারপুল। ৫৬ মিনিটে সালাহর গোলের পর অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচের ফল। 

    গোল হজমের পরও অবশ্য চিত্র খুব একটা বদলায়নি ম্যাচের। সিটিই আক্রমণে উঠছিল বারবার, কিন্তু লিভারপুলের রক্ষণ তখন আরও বেশি দৃঢ়, আরও প্রত্যয়ী। ৬৬ মিনিটে সার্জিও আগুয়েরো মাঠে নেমেও ঘটাতে পারেননি মিরাকেল। সিনেমার মতো কিছু করতে পারেনি সিটিও। সেই হতাশাতেই বোধহয় ৭৭ মিনিটে রক্ষণে ভুল করে বসলেন নিকোলাস অটামেন্ডি। বল দিয়ে দিয়েছিলেন রবার্তো ফিরমিনোকে। প্রথম লেগে আক্রমণভাগের সহযোগী সবাই  গোল পেলেও ফিরমিনোর পাওয়া হয়নি। ৭৭ মিনিটে নিজের না পাওয়াটাও পূরণ করেছেন আজ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। সঙ্গে বাড়িয়ে দিয়েছেন সিটির গ্লানিও।