চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল : কার চেয়ে কে এগিয়ে?
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে খেলবে রিয়াল মাদ্রিদ। আর লিভারপুলের প্রতিপক্ষ রোমা। দুই ম্যাচে কে এগিয়ে? ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনাই বা কার বেশি?
বায়ার্ন মিউনিখ- রিয়াল মাদ্রিদ
দুই দলের খেলা যেন নিয়মিত ঘটনাই হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগে। ইউয়েফার ক্লাব প্রতিযোগিতায় অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিয়ানার প্রথম লেগ হবে দুই দলের ২৫তম ম্যাচ! এর মধ্যে সাতবারই সেমিফাইনাল। আগের ৬ দফায় বায়ার্ন ফাইনালে উঠেছে ৪ বার, আর রিয়াল দুইবার। কিন্তু সবমিলিয়ে আগের ২৪ বারের দেখায় দুইদলই জিতেছে ১১ বার করে।
বায়ার্ন-রিয়ালের লড়াইটা তাই চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্ল্যাসিকই। গত বছরও এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে, তবে কোয়ার্টার ফাইনালে। গতবারের সেই ম্যাচ অবশ্য বিতর্কই ছড়িয়েছিল বেশি। দ্বিতীয় লেগে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আর্তুরো ভিদাল লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন। আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর করা ৩ গোলের দুইটিই হতে পারত অফসাইড। অতিরিক্ত সময়ে পরে ১০ জনের বায়ার্নের বিপক্ষে ৬-৩ গোলে (দুই লেগ মিলিয়ে) জিতে সেমিতে উঠেছিল রিয়াল।
বিতর্ক যতই থাক, সাম্প্রতিক রেকর্ড বলছে এই ম্যাচে কিছুটা এগিয়েই আছে জিনেদিন জিদানের দল। বায়ার্নের সঙ্গে শেষ ৫ ম্যাচে একবারও হারেনি রিয়াল। আর রোনালদোর অতিমানবীয় ফর্ম আরও এগিয়ে রাখছে গত দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের।
চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ অপরিচিত নয় বায়ার্ন ম্যানেজার ইয়ুপ হেইংকেসের কাছেও। ১৯৯৮ সালে রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লিগে বাজে ফর্মের কারণে ছাঁটাই হয়েছিলেন ইউরোপ সেরার মুকুট জেতার কয়দিন পরই! প্রায় একই রকম অবস্থায় আছেন জিদানও, তবে ইউরোপে দলকে নিয়ে যেভাবে ছুটছেন তিনি, তার ক্ষেত্রে একই পরিণতি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। জিদানের ভাগ্যে কী ঘটবে সেটা অনুমান করা মুশকিল। তবে রিয়ালকে হারাতে না পারলে এই ম্যাচটাই চ্যাম্পিয়নস লিগে হবে হেইংকেসের শেষ। বায়ার্নকে নিয়ে ট্রেবল জেতার পর অবসরে গিয়েছিলেন তিনি। পরে কার্লো আনচেলত্তিকে ছাঁটাই করার পর বায়ার্নের দুঃসময়ে অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন। ৭২ বছর বয়সী ফিরেই আবারও জিতেছেন বুন্দেসলিগা, তার দল টিকে আছে জার্মান কাপেও। অর্থাৎ ট্রেবল জিতেই আরও একবার অবসরে যাওয়ার সুযোগটা পাচ্ছেন হেইংকেস।
লিভারপুল-রোমা
চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্রয়ের আগে এই দুই দলের সমর্থকদের পছন্দের প্রতিপক্ষ বাছাই করতে দেওয়া হলে হয়ত এই ম্যাচটাই বেছে নিতেন তারা। তবে সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর অবশ্য খুব বেশি স্বস্তিতে থাকতে পারছে না দুই দলের কেউই।
রোমার ভয় তাদের সাবেক খেলোয়াড় মোহাম্মদ সালাহ। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে লিভারপুলের ৫-১ গোলের জয়ে সালাহর অবদানটাই ছিল বেশি। আক্রমণভাগে লিভারপুল ত্রয়ী মানে-ফিরিমিনো-সালাহ ইউরোপের যে কোনো দলের রক্ষণের জন্যই ভয়ঙ্কর। কিন্তু মাঝমাঠে রোমার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে লিভারপুল। ডি রসি, ফ্লোরেঞ্জি, নাইঙ্গোলানদের বার্সেলোনার বিপক্ষে পারফর্যান্স কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখছে রোমাকেই। আর আগের ম্যাচে বার্সেলোনাকে হারিয়ে সেমিতে ওঠা রোমার আত্মবিশ্বাসও থাকার কথা তুঙ্গে। বিশেষ করে রোমার মাঠ স্টাডিও অলিম্পিকোতে বড়সড় একটা পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে লিভারপুলের জন্য। এই মৌসুমে এখনও চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘরের মাঠে অপরাজিত রোমা, সমর্থকেরা তো আছেই, তাদের সঙ্গে আছে আগের ম্যাচের সুখস্মৃতিও।
তবে রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে লিভারপুলের সুখস্মৃতিও কম নয়। ৫ বারের ইউরোপজয়ী লিভারপুল এই মাঠেই দুইবার ফাইনাল জিতে ইউরোপিয়ান কাপ ঘরে তুলেছিল। এর মধ্যে ১৯৮৪ সালে রোমাকেই পেনাল্টিতে হারিয়ে ফাইনাল জিতেছিল লিভারপুল। গত কয়েকদিনে ইউরোপিয়ান ফুটবলের রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা যদি কিছু শিখিয়ে থাকে, তাহলে এই ম্যাচ নিয়ে আগে থেকে ফল অনুমান করা থেকে বিরত থাকাই ভালো!