সব হারালেও চ্যাম্পিয়নস লিগ হারায় না রিয়াল!
লা লিগায় অনেক আগেই ছিটকে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। পয়েন্ট তালিকায় বর্তমান অবস্থান চারে! কোপা ডেল রে তেও যাত্রা থেমেছে অনেক আগেই। সব হারিয়ে বাকি ছিল কেবল চ্যাম্পিয়নস লিগ। ইউরোপিয়ান ফুটবলের এই টুর্নামেন্টটা যেন নিজেদেরই করে নিয়েছে জিনেদিন জিদানের দল। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্যারিস সেন্ট জার্মেই; এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে জুভেন্টাসকে হারিয়ে টানা ৮ বারের মতো এই প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে উঠে গেছে রিয়াল। গতবার লিগ জিতলেও, আগের দুইবার চ্যাম্পিয়নস লিগ দিয়েই মৌসুম বাঁচিয়েছিল লস ব্লাংকোসরা। এবার তারা ছুটছে টানা তৃতীয়বার ইউরোপ সেরা হওয়ার জন্য। সেমিফাইনালে ওঠা চার দলের ভেতরও তারাই ফেভারিট। সবকিছু হারিয়েও শেষ মুহুর্তে চ্যাম্পিয়ন লিগ জেতাটা তো অভ্যাসই বানিয়ে ফেলেছে তারা।
ইউরোপিয়ান কাপের রিয়াল, রিয়ালের ইউরোপিয়ান কাপ (১৯৫৫-৫৬)
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের প্রথম আসর! রিয়ালের সঙ্গে ইউরোপিয়ান ফুটবলের ভালোবাসার গল্পটাও শুরু তখন থেকে। পুরো মৌসুম জুড়ে লিগ আর কাপে ধুঁকতে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপিয়ান কাপেই করল বাজিমাত। প্যারিসে স্টাডে রেইমসকে ফাইনালে ৪-৩ গোলে হারিয়ে ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপা ঘরে তুলল। অথচ সেবার লা লিগায় ৩ নম্বরে থেকে শেষ করেছিল তারা; শীর্ষে থাকা অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের চেয়ে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে। এই বিলবাওয়ের কাছেই কোপা ডেল রে-র সেমিফাইনাল থেকেও বিদায় নিতে হয়েছিল রিয়ালকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান কাপ জিতে মৌসুমের শিরোপা খরা কাটিয়েছিল ডি স্টেফানোর দল।
৫ বছর অপেক্ষার পর! (১৯৬৫-৬৬)
ব্রাসেলস, ১৯৬৬। ফাইনাল শুরুর আগেই চমক দেখালেন রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানেজার মিগুয়েল মুনোজ। ফেরেংক পুসকাসকে বেঞ্চে রেখেই দল নামিয়ে দিলেন পার্টিজান বেলগ্রেডের বিপক্ষে। শেষ পর্যন্ত আর ওই ম্যাচে তাকে মাঠেই নামাননি রিয়ালের তখকনার ম্যানেজার। দলের সবচেয়ে বড় তারকাকে বসিয়ে রেখেই অবশ্য ২-১ গোলের জয় তুলে নিয়েছিল রিয়াল। প্রথমে পিছিয়ে পড়ার পর ৬ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে ম্যাচটা নিজেদের করে নিয়েছিল তারা।
ফাইনালের ওই জয়টাই রঙ বদলে দিয়েছিল রিয়ালের। ইউরোপিয়ান কাপ শুরুর পর টানা ৫ আসরে জয়ী হলেও, পরের ৫ বছরে আর সেই শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের। স্টেফানোরাও ততোদিনে অতীত হয়ে গেছেন রিয়ালের জন্য। আর ওই ফাইনালের পর ক্লাবকে বিদায় বলেছিলেন পুসকাসও। ফাইনালে মাঠে না নামতে পারলেও শেষটা শিরোপা দিয়ে করতে পারার জন্য মিগুয়েলকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন তিনি! না হলে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে লিগ হারানোর আর কোপা ডেল রেতে রিয়াল বেটিসের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়ার ক্ষত নিয়েই শেষ করতে হত তাকে!
চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেও ছাঁটাই! (১৯৯৭-৯৮)
লা লিগা জয়ী বার্সেলোনার চেয়ে ১১ পয়েন্টে পিছিয়ে ৪ নম্বরে থেকে সেবার লা লিগা শেষ করেছিল ইয়ুপ হেইংকেসের রিয়াল। আর কোপা ডেল রে-এর যাত্রা থেমেছিল সেকেন্ড ডিভিশনের ক্লাব আলাভেসের কাছে শেষ-১৬ তে হেরে। কিন্তু চ্যম্পিয়নস লিগের রিয়াল যেন একেবারেই আলাদা! কোনো ম্যাচ না হেরেই উঠে গেল ফাইনালে। মৌসুমের শিরোপা খরা কাটানোর ওই একটাই রাস্তা খোলা ছিল রিয়ালের সামনে। সাথে হেইংকেসের চাকরি বাঁচানোরও একমাত্র উপায়, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা! ফাইনালে পেড্রাগ মিজাতোভিচের করা একমাত্র গোলে জুভেন্টাসকে হারিয়ে ৩২ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে রিয়াল। তবে এই সাফল্যও যথেষ্ট ছিল না হেইংকেসের জন্য। দলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর ৮ দিনের মাথায় ছাঁটাই হন জার্মান ম্যানেজার, লিগে ব্যর্থতার দায়ে!
দেল বস্কের হাত ধরে লা অক্টাভা! (১৯৯৯-২০০০)
জন তোশাক ছাঁটাই হওয়ার পর মৌসুমের মাঝপথে রিয়ালের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ভিসেন্তে বেল বস্কে। সেমিফাইনালে এস্পানিওলের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল কোপা ডেল রে থেকে। লা লিগায় অবস্থা ছিল আরও খারাপ। লিগের পাঁচ নম্বরে শেষ করে পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলার জায়গাটাও হারিয়েছিল রিয়াল! অবশ্য লা লিগা জয়ী দেপোর্তিভো লা করুনার সাথে রিয়ালের পয়েন্ট ব্যবধান ছিল মাত্র ৭।
স্পেনে সুবিধা করতে না পারলেও ইউরোপে দুর্দান্তই ছিল রিয়াল। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে প্রতিপক্ষও ছিল আরেক স্প্যানিশ ক্লাব। লিগে রিয়ালের আগে শেষ করলেও ভ্যালেন্সিয়া পাত্তাই পায়নি ফাইনালে। ৩-০ গোলে ভ্যালেন্সিয়াকে হারিয়ে লা অক্টাভা জেতে দেল বস্কের রিয়াল।
পনের বছর পর পুনরাবৃত্তি (২০১৫-১৬)
দেল বস্কের জায়গায় এবার জিনেদিন জিদান। তিনিও রিয়ালের দায়িত্ব নেওয়ার সময় ছিলেন বয়সভিত্তিক দলের কোচ। দেল বস্কের মতো মৌসুমের মাঝপথেই পেয়ে যান রিয়াল ম্যানেজারের দায়িত্বটা। জিদান রিয়ালের হাল ধরার আগেই অবশ্য কোপা ডেল রে থেকে রিয়ালের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়। লা লিগার শিরোপা ছুঁতে না পারলেও দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম মৌসুমেই রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতান জিদান। অথচ ছয় মাস আগেও এমন সাফল্যের কথা চিন্তা করতে পারতেন না খোদ রিয়াল সমর্থকেরাও! আরও একবার শিরোপাশুন্য থাকার বদলে রিয়াল মৌসুম শেষ করেছিল ইউরোপ সেরা হয়ে।