রিয়ালকে আরও একবার টেনে তুললেন রোনালদো
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে শেষ ১২ ম্যাচের প্রতিটিই হেরেছিল অ্যাথলেটিক বিলবাও। গত মৌসুমেও রিয়ালের মাঠে অন্তিম মুহূর্তের গোলে হেরে যায় ‘বাস্ক’ অঞ্চলের দলটি। এজন্যই আজ ইনাকি উইলিয়ামসের গোলে বিলবাও লিড নিলেও জয়ের স্বপ্নে হয়ত বুঁদ হচ্ছিলেন না বিলবাওয়ের কট্টর সমর্থকেরাও। ৮৭ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সমতাসূচক গোলের পর আবারও বিলবাওকে চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছিল গত মৌসুমের ম্যাচটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই করেই রিয়ালের সাথে ড্র করেছে তারা। ১-১ গোলের ড্রয়ে টেবিলের দুই নম্বরে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে পয়েন্টের ব্যবধানটা কমিয়ে আনার সুযোগ হারাল রিয়াল।
গত সপ্তাহে মালাগার বিপক্ষে মূল একাদশের অনেককেই বিশ্রাম দিয়েছিলেন জিদান। আজ বার্নাব্যুতে পূর্ণশক্তির দলই খেলিয়েছেন তিনি। ম্যাচের শুরু থেকেই স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ফুটবলটাই খেলছিল রিয়াল। প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন রোনালদোই। ৯ মিনিটে রাইটব্যাক দানি কারভাহালের ক্রসে তার জোরাল হেড ক্রসবারে প্রতিহত না হলে লিডটা তখনই নিয়ে নিতে পারত রিয়াল। পজেশন ধরে রাখা, গোলের সুযোগ তৈরি- প্রথমার্ধে সব দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা। কিন্তু গোলটাই আর পাওয়া হয়নি। বিলবাওয়ের রক্ষণভাগকে পুরোটা প্রথমার্ধ তটস্থ রাখলেও গোলমুখে কিছুটা নেতিয়েই পড়ছিলেন রোনালদো, বেনজেমারা। এই সুযোগেই ১৪ মিনিটে লিড নেয় বিলবাও। মিডফিল্ডার ইনিগো কর্দোবার থ্রু পাস থেকে দারুণ এক চিপে কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করেন বিলবাও স্ট্রাইকার ইনাকি উইলিয়ামস।
গোল হজম করলেও রিয়ালের খেলায় ছন্দপতন হয়নি একেবারেই। তবে গোলের আর দেখা পাওয়া হয়নি। এজন্য মূল কৃতিত্বটা অবশ্যই বিলবাও গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগার। প্রথমার্ধে অন্তত পাঁচ-ছ’টি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন এই তরুণ গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে ডিবক্সের বাইরে থেকে রোনালদোর দুটি জোরাল শট, টনি ক্রুসের ফ্রিকিক থেকে রাফায়েল ভারানের হেড, মার্কো আসেন্সিওর চমৎকার একক প্রচেষ্টা- প্রতিবারই রিয়ালের খেলোয়াড়দের খালি হাতেই ফিরিয়েছেন কেপা। গত বছরের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের একটা সময় কেপার রিয়ালে পাড়ি জমানোটা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত শৈশবের ক্লাব বিলবাওয়েই থেকে গেছেন। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আজ কেপা যেন প্রমাণ করেই ছাড়লেন, কেন তাকে দলে ভেড়াতে এতটা উঠে পড়ে লেগেছিল রিয়াল।
প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও বল দখলের লড়াই, গোলের সুযোগ তৈরিতে এগিয়ে ছিল রিয়াল। কিন্তু আবারও বিলবাও রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিতে রীতিমত গলদঘর্ম হচ্ছিল জিদানের দলের। অবশ্য সমতায় না ফেরার কারণ হিসেবে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তকেও দুষতেই পারে রিয়াল। ৬১ মিনিটে বিলবাও ডিফেন্ডার মার্টিনেজ, রোনালদোকে ডিবক্সে ফেলে দিলেও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। ওদিকে বিলবাও দুষতে পারে ভাগ্যকে। প্রথমার্ধের মতই দ্বিতীয়ার্ধেও প্রতি আক্রমণে খেলা বিলবাও ব্যবধান দ্বিগুণের দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল ৬৪ মিনিটে। অস্কার ডি মার্কোসের ক্রস থেকে কর্দোবার শট দুর্দান্তভাবে লাইন থেকে ফিরিয়ে দেন কারভাহাল। ফিরতি বলে গোলের মাত্র গজ ছয়েক দূর থেকে রাউল গার্সিয়ার শট প্রতিহত হয় ক্রসবারে।
গোলের আশায় বেনজেমা-আসেন্সিওকে উঠিয়ে গ্যারেথ বেল, ইস্কোকে নামিয়ে দেন জিদান। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রায় ৬০ হাজার সমর্থকের উৎসাহ-উদ্দীপনায় স্বরূপে ফিরতে থাকে রিয়াল। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে ঠিকই সমতায় ফেরে জিদানের দল। ভাজকেজের পাস থেকে মদ্রিচের জোরাল শটে রোনালদোর পায়ে লেগে জড়ায় বিলবাওয়ের জালে। আজকের ম্যাচ নিয়ে টানা ১২ ম্যাচে গোল করলেন ‘সিআর৭’। যোগ করা সময়সহ তখনও প্রায় মিনিট ছয়েকের খেলা বাকি। সমতায় ফেরার পর হাজারও চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত আর জয়ের দেখা পায়নি রিয়াল। সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ড্র নিয়েই। ওদিকে আজ গেটাফের কাছে ভ্যালেন্সিয়া হেরে যাওয়ায় ৩ পয়েন্টের লিড নিয়ে টেবিলের তিন নম্বর স্থানটা ধরে রেখেছে রিয়াল। ৩৩ ম্যাচ শেষে রিয়ালের সংগ্রহ ৬৮ পয়েন্ট। ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে যথারীতি টেবিলের শীর্ষেই আছে বার্সেলোনা।