• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    মিউনিখে বিবর্ণ বায়ার্ন, রঙিন রিয়াল

    মিউনিখে বিবর্ণ বায়ার্ন, রঙিন রিয়াল    

    প্রথমার্ধের আগে মার্সেলোর গোলে ম্যাচে ফিরেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। পরের অর্ধে বায়ার্ন মিউনিখ করলো বড়সড় একটা ভুল। চ্যাম্পিয়নস লিগের গত দুইবারের চ্যাম্পিয়ন তারা, ইতিহাস ঐতিহ্যে তাদের ধারে কাছে নেই কেউ। নির্ভুল ম্যাচে খেলেও তাদের হারানো যায় না। সেই রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এমন ভুল তো শাস্তিযোগ্যই! মার্কো আসেনসিও শাস্তিটা দিলেনও, আর তাতেই আরও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগের রাতে জয়ী রিয়াল। অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনায় ২-১ গোলে জিতে কিয়েভের ফাইনালে যাওয়ার কাজটা অনেকটাই সেরে রাখল তারা। আর টানা ৬ বারের মতো রিয়ালের কাছে হেরে আরও একটি আফসোসের রাত পার করেছে বায়ার্ন।   

    ঘরের মাঠে শুরুতেই একটা ধাক্কা খেয়ে বসে ইয়ুপ হেইংকেসের দল। খেলার প্রথম ৫ মিনিটেই অ্যারিয়ান রোবেনকে ইনজুরির কারণে হারিয়ে বদলি করতে বাধ্য হন বায়ার্ন ম্যানেজার। থিয়াগোর একাদশে না থাকাটাই অবশ্য একটা চমক ছিল। রোবেনের ইনজুরিতে সুযোগটা পেয়ে যান তিনি। এরপর ম্যাচের আধ ঘন্টা পেরুনোর আগেই আরও একবার একইরকম ঝামেলায় পড়ে বায়ার্ন। এবার ইনজুরিতে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার জেরোম বোয়াটেং। তবে ততোক্ষণে অবশ্য ম্যাচে এগিয়ে গিয়েছিল বায়ার্ন। ২৮ মিনিটে নিজের অর্ধ থেকে দৌড় শুরু করেছিলেন জশুয়া কিমিচ। সেই দৌড় থেমেছিল গোল উদযাপনে। হামেস রদ্রিগেজ প্রথমার্ধ হাল ধরেছিলেন বায়ার্নের মিডফিল্ডে। তিনিই মাঝমাঠ থেকে পাসটা দিয়েছিলেন। সার্জিও রামোস আর কাসেমিরোদের কেউই নাগাল পাননি সেই বলের। পেয়েছিলেন কিমিচ, ডিবক্সের ভেতর ঢুকে গিয়ে অনেকটা আচমকা শটেই কেইলর নাভাসের জালে বল জড়ান কিমিচ।



    এর তিন মিনিট পরই ব্যবধানটা দ্বিগুণ করতে পারতেন ফ্রাঙ্ক রিবেরি। কিন্তু গোলরক্ষকের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতিতে থেকেও একটা হেভি টাচে বল হারান ফ্রেঞ্চ উইঙ্গার। এগিয়ে থাকা অবস্থায় ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন ম্যাটস হামেলসও। দুইবারই অবশ্য কর্নার থেকে পাওয়া বলে কিছু করতে পারেননি। এসব কিছুর আগেই অবশ্য ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল বায়ার্নের আক্রমণ দিয়েই, তখন ফাঁকায় ছিলেন থমাস মুলার। সে দফায় বলের নাগালই পাননি তিনি। রোবেন বদলি হওয়ার নিজের গতানুগতিক খেলার ধরন পালটে রাইট উইংয়ে খেলতে থাকা মুলার  প্রথমার্ধের শেষদিকে এসে আরেকবার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেবার বলের নাগাল পেলেন ঠিকই, শটও নিয়েছিলে ঠিকঠাক কিন্তু রিয়ালের রক্ষণে বাধা পাড়ি দিয়ে জালে জড়ায়নি মুলারের কিক।

    বায়ার্নের গোল মিসের আফসোসটা বিরতির আগেই বাড়িয়ে দিয়ে ৪৪ মিনিটে গুরুত্বপুর্ণ অ্যাওয়ে গোলটা করেন মার্সেলো। ডিবক্সের বাইরে থেকে করা শটে গোল করে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন দলকেও। চ্যাম্পিয়নস লিগের সবগুলো ম্যাচে গোল করা রোনালদোর রেকর্ডে আজ থেমেছে, গোল পাননি তিনি। কিন্তু মার্সেলো ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন আজও, পিএসজি, জুভেন্টাসের পর গোল করলেন বায়ার্নের বিপক্ষেও। অবশ্য হারিয়ে ফেলা লিডটা প্রথমার্ধেই ফেরত পেতে পারত বায়ার্ন। এবারও বলের জোগান দিয়েছিলেন সাবেক রিয়াল মিডফিল্ডার হামেসই। রবার্ট লেভানডফস্কিও ছিলেন ভালো জায়গায়, কিন্তু তার নেওয়া হেড সরাসরি চলে যায় নাভাসের হাতে।   

    প্রথমার্ধে রিয়ালের রক্ষণে ইস্কো, রোনালদোরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাই ছক বদলে ফেলেন জিনেদিন জিদান। ইস্কোকে বসিয়ে মার্কো আসেনসিওকে নামিয়ে দেন রিয়াল ম্যানেজার।  সেই 'সুপার সাব' আসেনসিওই ব্যবধান গড়ে দেন ম্যাচে। সবকিছুর শুরু ৫৭ মিনিটে বায়ার্নের একটা কর্নার থেকে। সেখান থেকেই বল পেয়েছিলেন রাফিনহা। মাঝমাঠে ভুল পাস দিয়ে বায়ার্নের বিপদটা ডেকে আনলেন তিনিই। ওই ভুলের শাস্তিটা শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হেরেই দিতে হয়েছে বায়ার্নকে। লুকাস ভাসকেজের পাস থেকে এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে কোনো সুযোগ না দিয়েই গোল করেন আসেনসিও। 

    পিছিয়ে পড়ার পর অনুমিতভাবেই ম্যাচে ফেরার সবরকম চেষ্টা চালাতে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে বায়ার্ন। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও ডানদিক দিয়ে রিবেরি বারবার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন। ৩৪ মিনিটের সেই গোল মিসের ক্ষতিটা অবশ্য আজ আর পোষাতে পারেননি রিবেরি। দ্বিতীয়ার্ধে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন, দানি কারভাহালকে বোকা বানিয়ে বেশ কয়েকবার ডিবক্সের ভেতর ঢুকে গিয়েও শট করেছিলেন। প্রথম গোলে নেয়ার পোস্টে হার মানলেও, রিবেরির কাছে হার মানেননি নাভাস। সবগুলো শটই ঠেকিয়ে দিয়েছেন দৃঢ় হাতে। গোল করতে না পারার হতাশাটা রিবেরি ভুলতে পারতেন অ্যাসিস্ট দিয়েও। বিরতির ঠিক পরপর রিবেরির ক্রসে মুলার পা ছোঁয়ালেই এগিয়ে যেত বায়ার্নই, কিন্তু রাফায়েল ভারানের সময়মতো টোকা দিয়ে বলের গতি বদলে দেন, মুলারের কাছে বল পৌঁছানোর আগেই। 

    বায়ার্নের আক্রমণে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা চিন্তায় ফেলেনি রিয়ালের রক্ষণকে। ভারান, রামোস, কাসেমিরোরা নিজেদের কাজটা করে গেছেন ঠিকমতোই। জিদানও খেলে গেছেন আক্রমণাত্মক। দুই গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচে ইনজুরি আক্রান্ত দানি কারভাহালকে বসিয়ে করিম বেনজেমাকে নামিয়ে ব্যবধান আরও বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন জিদান। রাইটব্যাকের দায়িত্ব তখন ছিল ভাসকেজের ওপর! আক্রমণটা যে সেরা রক্ষণ সেটাই যেন আজ আরও একবার দেখাতে চাইলেন জিদান। মাঠে নামার পর বেনজেমা অবশ্য জিদানের লক্ষ্যটা প্রায় পূরণ করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ডিবক্সের ভেতর ঢুকে সভেন উলরেখকে আর ফাঁকি দিতে পারেননি।

    ঘরের মাঠে রিয়ালের কাছে আরও একটি হারের ক্ষণ গুণছিলেন বায়ার্ন সমর্থকেরা। তখনই দলের ভাগ্য বদলে দেওয়ার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন লেভানডফস্কি। কিন্তু ৮৮ মিনিটে যা করলেন সেটা হয়ে থাকল পুরো ম্যাচে তার আর তার দলের প্রতিচ্ছবি। এগিয়ে আসা নাভাসের মাথার ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে অন টার্গেটেও থাকল না তার শট। বাকি সবদিনে ১০ বারের ভেতর ৯ বারই অমন পাস গোলে পরিণত করেন লেভানডনফস্কি।