লেগানেসের বিপক্ষে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল রিয়াল
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এই লেগানেসের বিপক্ষে হেরেই কোপা ডেল রে থেকে বাদ পড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। আজ নিজেদের মাঠে লেগানেসের বিজক্ষে প্রতিশোধের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়েই যেন মাঠে নেমেছিল জিনেদিন জিদানের দল। সে মিশনে সফলও হয়েছে তারা। লেগানেসকে ২-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল। 'লস ব্লাঙ্কোস'দের হয়ে গোল করেছেন গ্যারেথ বেল এবং বোরহা মায়োরাল। দীর্ঘদিন পর মূল একাদশে সুযোগ পেয়েই জিদানকে যেন নিজ সামর্থ্যের জানানটা আরও একবার দিয়ে রাখলেন বেল।
এই মঙ্গলবার বার্নাব্যুতে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগ। সে চিন্তা মাথায় রেখেই রীতিমত দ্বিতীয় সারির দলই নামিয়ে দিয়েছিলেন জিদান। গোলরক্ষক থেকে স্ট্রাইকার- সবখানেই ছিলেন 'অপরিচিত' মুখরা। জায়গা পেয়েছিলেন হেসুস ভায়েহো, মার্কোস ইয়োরেন্তে, থিও হার্নান্দেজ, বোর্হা মায়োরালের মত তরুণেরা। তবে জিদানের মূল একাদশে সবচেয়ে বড় চমক ছিল প্রায় মাস ছয়েক পর দানি সেবায়োসের অন্তর্ভুক্তি। পরিচিতদের মধ্যে ছিলেন কেবল কাসেমিরো, করিম বেনজেমা এবং গ্যারেথ বেল। লেগানেসের বিপক্ষে রিয়ালকে লিড এনে দিয়েছিলেন 'কার্ডিফ এক্সপ্রেস'ই। ৮ মিনিটে মাতেও কোভাচিচের পাস থেকে ডিবক্সে বল পান বেনজেমা। ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকারের ডানপায়ের জোরাল শট প্রতিহত হয় লেগানেস ডিফেন্ডার উনাই বুস্তিঞ্জার গায়ে। গোলরক্ষক পিচু কুইয়ার এগিয়ে এসে বল নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই শরীর বাঁকিয়ে দর্শনীয় এক শটে বল জালে জড়ান বেল। রিয়ালের প্রথম গোলকে ঘিরে আছে বিতর্কের ছায়া। বেনজেমা শট নেওয়ার সময় রিপ্লেতে দেখা গেছে, অফসাইডে ছিলেন বেল। সেটা নিয়ে লেগানেস ফুটবলারদের জোর আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি। গোলের পর তার উদযাপনই জানান দিচ্ছিল, আজ নিজেকে প্রমাণ করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন তিনি।
গোলের পর থেকে লেগানেসকে আরও ভালভাবে চেপে ধরে রিয়াল। কিন্তু অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক লেগানেসের বিপক্ষে গোলের সামনে বারবার খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছিল তাদের। ধারার বিপরীতে সমতায় ফেরার বেশকিছু সুযোগ পেয়েছিল লেগানেস। ২৪ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে রিকোর ক্রস কাসেমিরোর পায়ে লেগে গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে গেলে সে যাত্রায় বেঁচে যায় রিয়াল। ২৮ মিনিটে গোলের একেবারে সামনে থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন নাবিল এল ঝার। অবশ্য ভাগ্য যে পুরোপুরি রিয়ালের পক্ষে ছিল, এমনটাও নয়। এর মিনিটখানেক পরই কুইয়ারকে কাটিয়ে মায়োরালের শট লাইন থেকে ফিরিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে দেননি বুস্তিঞ্জা। প্রথমার্ধে রিয়াল মুদ্রার দুপিঠ দেখলেও লেগানেসের ভাগ্যে জুটেছে কেবল দুর্ভাগ্যই। ৩৭ মিনিটে নর্ডিন আম্রাবাটের আগুনে শট প্রতিহত হয় ক্রসবারে। প্রথমার্ধে একেবারে শেষদিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করে রিয়াল। ৪৪ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে কোভাচিচের ক্রস দখলে আনতে লাফিয়ে উঠেন কুইয়ার। কিন্তু ডিফেন্ডারদের সাথে তার ভুল বোঝাবুঝিতে বল চলে যায় মায়োরালের পায়ে। ফাঁকা গোলের একেবারে সামনে থেকে আলতো টাচে বল জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে গোল বাতিল করেন রেফারি। লেগানেসও গোলকিক নিয়ে নিয়েছে ততক্ষণে। কিন্তু তখনই ঘটল বিপত্তি! হঠাৎই পতাকা নাড়িয়ে রেফারিকে গোলের ইশারা দিতে বলেন লাইন্সম্যান। গোল বাতিল করেও রেফারির এমন সিদ্ধান্তে ফুঁসে উঠে লেগানেস। মাঠের ফুটবলাররা ছাড়াও ডাগআউটে ওয়ার্ম আপ করতে থাকা বদলি খেলোয়াড়, এমনকি কোচিং স্টাফের সবাই-ই জোর বিরোধিতা করতে থাকেন গোলের, লেগানেস সমর্থকদের জোর দুয়োধ্বনির মাঝে শেষ হয় বিতর্কিত এক প্রথমার্ধ।
বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণেই হয়ত দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছিল লেগানেস। মাঝমাঠে তাদের সাথে কোনোভাবেই পেরে উঠছিলেন না কোভাচিচরা। লেগানেসের গোছানো ফুটবলের ধারাবাহিকতায়ই এক গোল শোধ করে লেগানেস। ৬৬ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে আম্রাবাতের নিচু ক্রস রিয়ালের জালে জড়ান গোলের গজ দুয়েক দূরে দাঁড়ানো ডার্কো ব্রাসানাচ। ব্যবধান বাড়ানোর আশায় টনি ক্রুস, মার্কো আসেন্সিওদের নামিয়ে দিয়েও লাভ হয়নি জিদানের। উল্টো ৭৭ মিনিটে রিয়াল গোলরক্ষক কিকো কাসিয়া দুর্দান্ত এক সেভ না করলে হয়ত সমতায়ই ফিরতে পারত লেগানেস। রিয়ালের পুরো দ্বিতীয়ার্ধ কেটেছে লেগানেসের আক্রমণ সামাল দিতেই, প্রতিপক্ষের ডিবক্সে একেবারেই ত্রাস ছড়াতে পারেননি বেলরা। ওদিকে শেষদিকে অনেক চেষ্টা করেও সমতায় আর ফেরা হয়নি লেগানেসের। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে এল ঝার যখন রিয়ালের ডিবক্সের সামনে শট নিতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই শেষ বাঁশি বাজান রেফারি। পুরো ম্যাচে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিজেদের বিপক্ষ গেলেও এবার আর মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেননি লেগানেস অধিনায়ক গ্যাব্রিয়েক। রেফারি সাথে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের কারণে ম্যাচ শেষ হলেও সরাসরি লাল কার্ড দেখেই খালি হাতে মাঠ ছাড়তে হয়েছে গ্যাব্রিয়েল এবং লেগানেসকে।