প্রায়শ্চিত্ত করলেন তেভেজ
নিয়তিই ঠিক করে রেখেছিল হয়তো গল্পটা। চার বছর আগের কোপা আমেরিকায় কার্লোস তেভেজ পেনাল্টি মিস করেছিলেন উরুগুয়ের সঙ্গে। সেটাও সেই কোয়ার্টার ফাইনালেই। সে কারণেই কি এবার প্রথম পাঁচজনের মধ্যেই নেই তেভেজ? ষষ্ঠ পেনাল্টিও যখন রোহো এলেন নিতে, তখন অনেকেই ভুরু কুঁচকে ফেলেছিলেন। কিন্তু রোহোও মিস করায় শেষ পর্যন্ত সুযোগ এলো ম্যাচের মধ্যেই জুভেন্টাস থেকে বোকা জুনিয়র্সে যাওয়া নিশ্চিত হওয়া তেভেজের সামনে। এবার আর ভুল করলেন না তেভেজ, গোল করে চার বছর আগের সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন। কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে চলে গেল আর্জেন্টিনা।
অথচ গল্পটা হতে পারত স্বপ্নভঙ্গের। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশুন্য ড্র হওয়ার পর কাকে দোষ দেবে আর্জেন্টিনা? বাজে রেফারিং নাকি একজন ডেভিড ওসপিনার অতিমানব হয়ে দাঁড়ানো ?
প্রথম থেকেই কলম্বিয়া নিজেদের রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিল। রদ্রিগেজরা অনেক নিচে নেমে খেলেছেন, উইং থেকে রাইট ব্যাকে এসে খেলেছেন কুয়াদ্রাদো। বল তাই আর্জেন্টিনার দখলেই ছিল, প্রথমার্ধেই এগিয়ে যেতে পারত তারা। কিন্তু ২৬ মিনিটের সময় আগুয়েরোর শট বাঁ পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়ার পরপরই মেসির হেডও অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন ওসপিনা। কর্ণার থেকে সুযোগ পেয়েছিলেন রোহো, ফাঁকায় হেড করতে পেরেছিলেন আগুয়েরোও। কিন্তু সুযোগ কেউ কাজে লাগাতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধে কলম্বিয়া সেই আগের মতোই ঢুকে থাকে খোলসে। ডি মারিয়া, পাস্তোরেরা এই অর্ধে যেন ভুল পাসের মহড়ায় মেতে ওঠেন। আগুয়েরোকেও সেভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু কর্ণার থেকে ওটামেন্ডি তারপরও গোল করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু আরও একটি অসাধারণ সেভে বাঁচিয়ে দেন ওসপিনা। মুরিলো গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে বাঁচিয়েছেন দলকে ম্যাচের শেষদিকে। কৃতিত্ব দিতে হবে কলম্বিয়া রক্ষণকেও, বিশ্বের সেরা আক্রমণভাগকে অনেকটা সময় ঠেকিয়ে রেখেছিল তারা।
কিন্তু মেক্সিকান রেফারি রবার্তো গার্সিয়া দায়মুক্ত হতে পারবেন না। প্রথমার্ধে ৪০ মিনিটের মধ্যেই ছয়টি হলুদ কার্ড দিয়েছেন, বারবারই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছুটে গেছে তাঁর হাত থেকে। কুয়াদ্রাদো প্রথম হলুদ কার্ড দেখার পর রোহোকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডও দেখতে পারতেন, কিন্তু কোনো এক বিচিত্র কারণে রেফারি লাল কার্ড দেখাননি। বক্সের আশেপাশে মেসি, পাস্তোরেদের বেশ কয়েকবার ফাউল করা হলেও সেটা রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত রেফারি অবশ্য মেসিদের কাছে খলনায়ক হয়ে ওঠেননি।
দু'দলের ১৪টি পেনাল্টি শটের শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারের পরে শেষ চারে গেলো আর্জেন্টিনা। টাইব্রেকারে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক রোমেরো ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়েছেন একটি শট, পোস্টের উপরে কলম্বিয়ান খেলোয়াড়েরা বল মেরেছেন দুইটি। আর অন্যদিকে আর্জেন্টিনার মিস করা দুইটি শটের একটি লেগেছিলো ক্রসবারে, আর অন্যটি চলে গিয়েছিল বাইরে।