• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    লিভারপুলকে হারিয়ে আশা জিইয়ে রাখল চেলসি

    লিভারপুলকে হারিয়ে আশা জিইয়ে রাখল চেলসি    

    ৯২ মিনিটে চেলসি ডিবক্সের বাঁ-প্রান্তে বল পেলেন সাদিও মানে। বল নিয়ন্ত্রণে এনেই ক্রস করলেন। লাফিয়ে উঠলেন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামা ডমিনিক সোলাঙ্কে। তবে বল দখলের লড়াইয়ে তরুণ ইংলিশ স্ট্রাইকারের সাথে লাফিয়ে উঠলেন আন্তোনিও রুডিগারও। জার্মান ডিফেন্ডারের চাপে হেডটা গোলে রাখতে পারলেন না সোলাঙ্কে। দ্বিতীয়ার্ধে বলতে গেলে এটিই ছিল লিভারপুলের বলার মত গোলের সুযোগ। পারলেন না সোলাঙ্কে, পারল না লিভারপুলও। ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে এবারই প্রথম প্রিমিয়ার লিগে টানা দুই ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হল 'অল রেড'রা। ১৩-১৪ মৌসুমের পর এবারই প্রথম স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে লিভারপুলকে হারাল চেলসি, জিইয়ে রাখল আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার আশা। অলিভিয়ের জিরুর একমাত্র গোলে ক্লপের দলকে ১-০ গোলে হারিয়েছে চেলসি। 

     

     

    স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ক্লপের মূল একাদশে ছিল চমকের ছোয়াঁ। মৌসুমে এবারই প্রথম একাদশে রাইটব্যাক নাথানিয়াল ক্লাইন। অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসনের বদলে মাঝমাঠে জেমস মিলনার এবং জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডামের সাথে নেমেছিলেন তরুণ ট্রেন্ট অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড। কিছুটা রক্ষণাত্মক মনে হলেও চেলসির বিপক্ষে আক্রমণাত্মক শুরুটা করেছিল লিভারপুলই। ম্যাচের মাত্র ৩ মিনিটে সেই আর্নল্ডের পাস থেকে স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোর শট চেলসি গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া রুখে না দিলে হয়ত তখনই লিডটা নিয়ে নিত ক্লপের দল। আজ যেন গোল না খাওয়ার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়েই নেমেছিলেন দীর্ঘদেহী এই বেলজিয়ান গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে আক্রমণভাগে ফিরমিনোর দুই সতীর্থ সাদিও মানে এবং মোহাম্মদ সালাহকে ফিরিয়ে দিয়েছেন বেশ কয়েকবার।

    ওদিকে আন্তোনিও কন্তের 'ট্রেডমার্ক' ৩-৫-২ ফর্মেশনে চেলসির খেলাটা ছিল মূল ক্রস নির্ভর। মাঝমাঠে সেস্ক ফ্যাব্রেগাস, এন'গোলো কান্তেদের চেয়ে জিরু-হ্যাজার্ডদের বল যোগানে ব্যস্ত ছিলেন দুই উইংব্যাক ভিক্টর মোজেস এবং মার্কোস আলোন্সো। চেলসি লিডটাও আসে এই ক্রস থেকেই। ৩২ মিনিটে মোজেসের ক্রসে হেড করে লরিস কারিওসকে পরাস্ত করেন জিরু। গোলের পরই সতীর্থদের আলিঙ্গন উপেক্ষা করে ছুটে যান ডাগআউটের ওপরের দর্শকসারিতে, আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেন চেলসি ডিফেন্ডার ডেভিড লুইজকে। হয়ত অনুশীলনে হেড করার তালিমটা তার থেকেই নিয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার।

    লিড নেওয়ার পর থেকেই খেলা চলে আসে চেলসির নিয়ন্ত্রণে। কন্তে-ফ্যাব্রেগাসদের সাথে জিরু-হ্যাজার্ডের বোঝাপড়া সামলাতে রীতিমত হিমশিমই খেতে হয় লিভারপুলকে। তবে পজেশন ধরে রেখে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও লিডটা আর বাড়াতে পারেনি চেলসি। ওদিকে আক্রমণে নিজেদের ছায়া হয়ে থাকা লিভারপুল প্রাণপণ চেষ্টা করেও ফিরতে পারেনি সমতায়। উল্টো প্রথমার্ধের শেষদিকে চেলসি ডিবক্সের সামনে ডাইভ দেওয়ায় হলুদ কার্ড দেখতে হয় সালাহকে। জোর দুয়োধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ। আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার কথা চিন্তা করেই দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফেরার জন্য রীতিমত ঝাঁপিয়ে পড়ে লিভারপুল। কিন্তু কাজের কাজটা আর করতে পারেনি। প্রতিবারই 'অল রেড'দের গোছানো আক্রমণগুলো দারুণ দক্ষতার সাথে রুখে দিচ্ছিলেন অ্যাজপিলিকুয়েতা-কাহিলরা। ওদিকে লিভারপুলের আক্রমণাত্মক ভঙ্গির বিপরীতে প্রতি আক্রমণে চেলসিকেই মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর। ৫৭ মিনিটে আবারও জাল খুঁজে পেয়েছিল চেলসি। ফ্যাব্রেগাসের কর্ণার থেকে কাহিল হেড করে পাস বাড়ান আন্তোনিও রুডিগারের দিকে। গোলের একেবারে সামনে থেকে লক্ষ্যভেদ করলেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোলটি।

     

     

    গোলের আশায় অধিনায়ক হেন্ডারসনকে নামিয়ে আরও আক্রমণাত্মক ফর্মেশনে খেলানো শুরু করেন ক্লপ। কিন্তু কন্তের 'ইতালিয়ান' রক্ষণভাগকে আর ফাঁকি দেওয়া হয়নি। সালাহ-মানে-ফিরমিনোদের আটকাতে চেলসির তেমন সমস্যা না হলেও এক হ্যাজার্ডকে থামাতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছিল ভ্যান ডাইকদের। ড্রিবলিংয়ের শৈল্পিক প্রদর্শনীর এক পসরাই যেন সাজিয়ে বসেছিলেন বেলজিয়ান উইঙ্গার। তবে হ্যাজার্ডের অবস্থাও হয়েছিল কিছুটা লিভারপুল আক্রমণভাগের মত। গোলের সামনে গিয়ে কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেলছিলেন। চকিত গতি, নিখুঁত ড্রিবলিং দিয়ে লিভারপুল রক্ষণভাগকে পুরো দ্বিতোয়ার্ধ তটস্থ রেখেছিলেন। কিন্তু দূরপাল্লার দুটি শট বাদে গোলমুখে তেমন কিছুই দেখাতে পারেননি তিনি। ম্যাচের ৫ মিনিট বাকি থাকতে যখন বদলি হয়ে উঠে যাচ্ছিলেন, সমগ্র স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে দাঁড়িয়ে জোর করতালিতে বরণ করে নিচ্ছিল হ্যাজার্ডকে। বলাই বাহুল্য, আজকের ম্যাচে চেলসির সেরা খেলোয়াড় ছিলেন তিনিই। গোলের সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছে লিভারপুল। তবে দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে সোলাঙ্কের হেড চেলসি গোলের উপর দিয়ে চলে গেলে খালি হাতেই মাঠ ছাড়তে হয় ।

    লিভারপুলের আজকের হারে জমে উঠল আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার লড়াই। ৩৭ ম্যাচে লিভারপুলের সংগ্রহ ৭২ পয়েন্ট। ওদিকে ৩৬ ম্যাচে চেলসির সংগ্রহ ৬৯ পয়েন্ট। চেলসির সমানসংখ্যক ম্যাচে টটেনহাম হটস্পার্সের সংগ্রহ ৭১ পয়েন্ট। চেলসি এবং স্পার্স নিজেদের বাকি দুই ম্যাচ জিতে গেলে এবং লিভারপুল নিজেদের শেষ ম্যাচে পয়েন্ট হারালে ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাবের সাথে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবে চেলসি এবং স্পার্সই।