• অ্যাশেজ
  • " />

     

    আধুনিক ছাইভষ্মের গল্প : প্রথম পর্ব

    আধুনিক ছাইভষ্মের গল্প : প্রথম পর্ব    

     


    আরো পড়ুনঃ

    আধুনিক ছাইভষ্মের গল্প (দ্বিতীয় পর্ব)


     

     

    ক'দিন বাদেই শুরু হচ্ছে এক মহারণের। ইতিহাস-ঐতিহ্য বিবেচনায় এটাকেই ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা দ্বৈরথ আখ্যা দেয়া ভুল হবে না। আর অন্য কোন খেলায়ও কোন দ্বিপাক্ষিক দ্বৈরথ নিয়মিতভাবে প্রায় ১৫০ বছর ধরে চলে আসছে কি না জানা নেই। হ্যাঁ, অ্যাশেজ চলছে! ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে ১৮৮২ সাল থেকে শুরু হওয়া ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অ্যাশেজ সিরিজের ১৩৩ বছরের দ্বৈরথের টুকরো টুকরো গল্প বলে শেষ হবে না। তাই বরং লেখাটার ব্যাপ্তি শুধুমাত্র একবিংশ শতাব্দীতেই রাখি। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝে গত এক দশকে কিছুটা কাছাকাছি আসতে পারে; তবুও গত দশ বছরে সম্ভবত অ্যাশেজই টেস্ট ক্রিকেটের সকল সুধা নিয়ে হাজির হয়েছে টেস্টপ্রেমীদের দরবারে।

     

    জয়ের পরিসংখ্যানে অনেক এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ডকে অস্ট্রেলিয়া থামিয়ে রেখেছিলো প্রায় ১৬ বছর। ১৯৮৯ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত টেমস আর ইয়াররা নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে। কিন্তু কোন অ্যাশেজ ঘরে তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড! শুরুটা হয়েছিলো অ্যালেন বোর্ডারের হাতে। তারপর মার্ক টেলরের হাত ঘুরে স্টিভ ওয়াহর দলের সাথে একেবারেই পেরে উঠেনি ইংল্যান্ড দল। বরং একেক মহাকাব্যে ক্রিকেটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে অ্যাশেজ। শেন ওয়ার্নের ১৯৯৩-র বল অফ দ্য সেঞ্চুরি হোক অথবা ২০০১ সালে মার্ক বুচারের অবিশ্বাস্য ১৭৩ রান কিংবা ২০০৩ সালে সিডনিতে শেষ বিকেলে ক্যারিয়ার শেষ হবার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে স্টিভ ওয়াহর চার মেরে ২৯-তম সেঞ্চুরি করে মুষ্টিবদ্ধ হাতে শূন্যে ঘুষি মারা! ক্রিকেট রোমান্টিকদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রমাগত জয়ের এই একঘেয়েমিতেও গল্প করার রসদ কম নেই কিন্তু।

     

     

    যাই হোক, অবস্থার পরিবর্তন শুরু হলো ২০০৫ এর ইংলিশ সামার দিয়ে। তখনো অস্ট্রেলিয়া বিশ্বজয়ী দল। স্টিভ ওয়াহর হাত ঘুরে রিকি পন্টিংয়ের হাতে প্রথমবারের মতো অ্যাশেজের নেতৃত্ব। একটু যোগ করি এই বলে যে, সেবারের ইংলিশ সামারে যে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে তার আগমনী বার্তা কিন্তু প্রথম দিয়েছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল! ২০০৫ সালের ১৮ জুন কার্ডিফে অজেয় অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। বড় এক পরিবর্তনের বার্তাও কি?

     

    সিরিজ শুরু হলো আগের ষোল বছরের মতো করেই। প্রথম টেস্টের আগেই গ্লেন ম্যাকগ্রা তাঁর স্বভাবসুলভ ঘোষণাই দিলেন, “অ্যাশেজটা অস্ট্রেলিয়া ৫-০ তেই জিতবে!” প্রথম টেস্টে কথাটা কাজে প্রমাণ করে নেবার দায়িত্ব নিলেন ম্যাকগ্রা নিজেই। লর্ডসের প্রথম দিনটায় অস্ট্রেলিয়া অল আউট হয়ে গিয়েছিলো ১৯০ রানে। কিন্তু শেষ বিকেলে সুইং বোলিংয়ের চরমতম কারিশমায় ম্যাকগ্রাথের একের পর এক বোল্ডে ইংল্যান্ডের রান ২১/৫! ইংল্যান্ড তখন কাঁপছে।

     

    সেদিনই টেস্টে অভিষেক ঘটেছিলো কেভিন পিটারসেন নামের এক আনন্দদায়ীর। অভিষেকেই দলকে একটু ভদ্রস্থ চেহারা দিলেন কেপি। দুই ইনিংসেই ফিফটি ছিল। তবু শেষ রক্ষা হয়নি। ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট হারে বড় ব্যবধানেই।

     

    তারপরই বিখ্যাত এজবাস্টন টেস্ট! সকালে প্র্যাকটিস করতে গিয়ে আঘাত পেলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। খেলতে পারলেন না। তবে একবিংশ শতাব্দীর সেরা বল বলে বিবেচিত ওয়ার্নের “দ্যাট বল টু স্ট্রাউস”-ও এই টেস্টেরই। স্ট্রাউসের জন্য অফ স্টাম্পের প্রায় দুই বিঘত সামনে বল পড়ে পায়ের পিছন দিয়ে বোল্ড হবার সেই অবিশ্বাস্য বল।

     

     

     

    নানা ঘটনাপ্রবাহে ২৮২ রানের টার্গেট পায় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ১৭৫ রানে ৮ উইকেট পড়ে গিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়ার। টেস্টটা তখন শেষ ধরে নিয়েছিলো সবাই। কিন্তু ব্রেট লি আর শেন ওয়ার্ন দাঁড়িয়ে গেলেন। ২২০ রানে যখন অস্ট্রেলিয়ার নবম উইকেট পতনে ওয়ার্ন বিদায় নিলেন, তখনো অস্ট্রেলিয়া জয় থেকে ৬২ রান দূরে। ক্যাসপ্রোভিচকে সঙ্গী করে অবিশ্বাস্য এক জয়ের পথে ছুটলেন ব্রেট লি!

     

    উত্তেজনার পারদ এতোটাই উঁচু ছিল যে রিচি বেনোর মতো ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব পর্যন্ত তার দেখা সর্বকালের সেরা টেস্ট মোমেন্টের তালিকায় এজবাস্টনের ওই সময়টাকেই একেবারেই উপরের দিকে রাখেন। অস্ট্রেলিয়ার জয় থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থাকতে হার্মিসনের লাফিয়ে ওঠা বল ক্যাসপ্রোভিচের গ্লাভস ছুঁয়ে কিপার জোন্সের কাছে চলে গেলো। ইংল্যান্ড জয়ী মাত্র ২ রানে! হ্যাট খুলে দুহাত মেলে অধিনায়ক মাইকেল ভনের সেই পাগলাটে দৌড়, আর মাথা নিচু করে বসে থাকা ব্রেট লির পাশে গিয়ে ফ্লিনটফের হাত মিলিয়ে সান্ত্বনা দেয়া। ক্রিকেট ইতিহাসেরই শ্রেষ্ঠতম ছবিগুলোর একটা! অ্যাশেজ ইতিহাসে এটাই সর্বনিম্ন ব্যবধানের জয়। সিরিজে সমতা আসলো।

     

     

    তৃতীয় টেস্টের সকালটা এসেছিলো আরও উত্তেজনা নিয়ে। মাত্রই সকালে ফিটনেস টেস্ট দিয়ে ফিরে আসা ম্যাকগ্রার নো বলে ভনের বোল্ড হওয়াটাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগালেন ভন। ‘রিভার্স সুইং’-কে আজীবন 'বল টেম্পারিং' বলে আসা নাকউঁচু ইংলিশরা সাইমন জোন্সের বদৌলতে রিভার্স সুইং নামক ‘শিল্প’-রই আশ্রয় নিলো! ঘটনা প্রবাহ শেষদিনে পন্টিংকে দাঁড় করালো ৪২৩ রানের বিশাল টার্গেটের সামনে। একা হাতে ১৫৬ রানের অবিশ্বাস্য ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেললেন পন্টিং। তবু নাটকীয়তার চূড়ান্ত রূপটা দেখাতে দিনশেষের কিছুক্ষণ আগে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে গেলেন পন্টিং। শেষ দুই ব্যাটসম্যান ম্যাকগ্রা আর লির হাতে দায়িত্ব ছিল শেষ ৪ ওভার সামলানোর। এবারে অবশ্য ট্র্যাজেডির কুশীলব হওয়া থেকে বাঁচলেন ব্রেট লি। কোনভাবে সম্মান বাঁচালো অস্ট্রেলিয়া।

     

    ট্রেন্টব্রিজে চতুর্থ টেস্ট। আবারও ইনজুরির কারণে ম্যাকগ্রা দলের বাইরে আর আবারও জোন্স আর ফ্লিনটফের রিভার্স সুইংয়ের এক অনুপম মিলিত প্রদর্শনী! সাথে ছিল ফ্লিনটফের সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের নতুন ইয়ান বোথামের পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হবার টেস্ট ছিল সেটি। বিগত ১৯১ টেস্টের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফলোঅনে পড়ল অস্ট্রেলিয়া। শেষ ইনিংসে ইংল্যান্ডকে টার্গেট দিয়েছিলো মাত্র ১২৯ রানের। তাতেই চেপে ধরা গিয়েছিলো তাদের।

     

    ১১৬ রানে ইংল্যান্ডের সাত উইকেট পড়বার সময় অসিদের সেলিব্রেশনটা ছিলো দেখার মতোন। শেন ওয়ার্ন দৌড়ে যাচ্ছেন ক্যাসপ্রোভিচের দিকে। পুরো মাঠ দৌড়াচ্ছে। স্বল্প পুঁজি নিয়েও কিভাবে আক্রমণ করা যায় সেটা যেন শিখাচ্ছিলো অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু শেষে ইংল্যান্ডকে আর বিপদ ঘটতে দেননি জাইলস-হগার্ডরা। ইংল্যান্ডের জয়ের মুহূর্তটা আসতেই ধাক্কা খেয়ে ড্রেসিংরুমে পড়ে গেলেন মাইকেল ভন! হ্যাঁ, অতি উত্তেজনায়!

     

    তবে অন্য বিতর্কের উত্তেজনাও প্রচুর ছিল! দ্বিতীয় ইনিংসে পন্টিং রান আউট হয়েছিলেন গ্যারি প্র্যাট নামের অখ্যাত এক ফিল্ডারের সরাসরি থ্রোতে। উত্তেজনার আগুনে পারদ ঢালতেই যেন সেই বিতর্ক। ইংল্যান্ড এক অভিনব স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলো সে সিরিজে। মাঠে বোলারদের চাঙ্গা রাখতে কিছুক্ষণ পরপরই মূল বোলারদের মাঠের বাইরে বিশ্রামে পাঠিয়ে অতিরিক্ত খেলোয়াড় এমনকি ট্রেনারদের দিয়েও ফিল্ডিং করিয়েছে তারা। প্র্যাট ছিলেন দলের ট্রেনারদের একজন! তার সরাসরি থ্রোতেই রান আউট হয়ে যান পন্টিং। সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন পন্টিং।

     

     

    ওভালে পঞ্চম টেস্ট এসেছিলো অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ বাঁচানোর টেস্ট হিসেবে। জিততেই হবে অসিদের এই পণে পানি ঢাললেন কেভিন পিটারসেন! সেটাই সত্যিকার অর্থে টেস্টে তাঁর আগমনী বার্তা। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ধ্বসের সময়ে (১৯৯/৭) নয় নম্বর ব্যাটসম্যান অ্যাশলে জাইলসকে নিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে নামলেন কেপি। ত্রিশের ঘরে থাকতেই স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন একবার। ধরতে পারেননি শেন ওয়ার্ন! ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে কেপি আউট হলেন ১৫৮ রান করে। রানের চেয়েও বড় ছিল ওয়ার্ন, ম্যাকগ্রাকে 'ডমিনেট' করে খেলার মানসিকতা। ওয়ার্ন বলেছিলেন যে, এতো বছরে লারা আর টেন্ডুলকার বাদে তার বোলিংকে এতোটা হেলা করে খেলেনি আর কেউই! সুইপ করে ওয়ার্নকে উড়িয়ে মারছিলেন গ্যালারিতে।

     

     

    কেপি যখন আউট হচ্ছেন তখন পঞ্চম দিনের শেষ বিকেল। ড্র নিশ্চিত হয়ে গেছে। নিশ্চিত হয়ে গেছে ১৬ বছর পরে ইংল্যান্ডের হাতে অ্যাশেজ ফিরে আসাটা! ২-১ এ সিরিজ হেরে শুরু হলো রিকি পন্টিং-র অ্যাশেজ যাত্রা! সিরিজটার আকর্ষণে আরও দুইটা ব্যাপার ছিল। শেন ওয়ার্ন আর অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স। সিরিজে ৪০২ রানের সাথে ২৪ উইকেটে ''ফ্রেডি'' ফ্লিনটফেই নতুন বোথাম খুঁজে পেলো ইংলিশরা। আর এক সিরিজে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৪০ উইকেটের সাথে ২৪৯ রান করেও ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে রইলেন শেন ওয়ার্ন! দুইজনের মধ্যে সেরা কে তুলনা করতে না পেরে ফ্লিনটফ আর শেন ওয়ার্ন দুইজনকেই যৌথভাবে 'ম্যান অফ দ্য সিরিজ'-এর পুরষ্কার দেয়া হয়েছিল সেবার। 

     

     

    ২০০৬-০৭ সালে অ্যাশেজ বসলো অস্ট্রেলিয়ায়! আগের সিরিজে হারের প্রতিশোধ নেবার জন্য অসিরা তখন মরিয়া। সিরিজটা শুরু হয়েছিলো হার্মিসনের প্রথম স্লিপে করা ওয়াইড বল দিয়ে। সেটাই হয়তো সিরিজের প্রতীক ছিল। ক্রিকেটীয় উত্তেজনা না থাকলেও গল্প করার রসদ ঠিকই আছে সিরিজে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ১৯৬ রান করে দলকে বার্তা দিয়েছিলেন অধিনায়ক রিকি পন্টিং। দলের জয় শুরু হলো ২৭৭ রানের বিশাল ব্যবধানে।

     

    দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে একটা গল্প আছে। সিরিজ শুরুর আগেই অসিরা এই অ্যাশেজকে শুধুমাত্র জয়ের টার্গেট হিসেবে নেয়নি। তারা চেয়েছিলো ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিতে। দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ৫৫১ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়ার রান ৫১৩! অলৌকিক কিছু না ঘটলে এই টেস্টে ড্র ছাড়া কিছু সম্ভব না। পঞ্চম দিন সকালে পন্টিং দলের সবাইকে ডেকে বললেন, “আমরা এখনও জিততে পারি। সকালের মধ্যেই ওদের অলআউট করে দাও!” পন্টিং এর ভাগ্য ভালো; তাঁর দলে ওয়ার্ন, ম্যাকগ্রা, লি নামের বোলাররা ছিলেন। তাই হয়তো এমনটা বলা যেতো। ইংল্যান্ড সত্যিই লাঞ্চের কিছু পরেই গুঁড়িয়ে গেলো ১২৯ রানে। অস্ট্রেলিয়ার জয় এলো ৬ উইকেটে। জয়গুলো খুব সহজেই আসছিলো। তবে দ্বিতীয় টেস্ট শেষেই টেস্টকে বিদায় বলে দিলেন ডেমিয়েন মার্টিন।

     

     

    তবে তৃতীয় টেস্টের বিজ্ঞাপন শুধুই অ্যাডাম গিলক্রিস্ট! ভিভ রিচার্ডসের ৫৬ বলে টেস্ট সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড থেকে মাত্র এক বল বেশি নিয়ে ৫৭ বলে সেঞ্চুরি করেন গিলি! মন্টি পানেসারকে যেভাবে একের পর এক গ্যালারিতে আছড়ে ফেলছিলেন, তাতে মন্টির ক্যারিয়ারটাই প্রায় শেষ করে দেন তিনি। হয়তো ভিভের রেকর্ডটা ভাঙতেই পারতেন। কিন্তু মুখোমুখি হওয়া ৫৬তম বলটি হগার্ড অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করেন। ব্যাট বাড়িয়েও নাগাল পাননি গিলি। তৃতীয় টেস্ট জয়ের পরে অস্ট্রেলিয়ার যে বাঁধনহারা আনন্দ উদযাপন দেখা গিয়েছিলো, সেটা এখন পর্যন্ত কোন বিশ্বকাপ জয়ের পরেও তাদের করতে দেখা যায়নি! ২০০৫ এর অ্যাশেজ হারানোর জ্বালা মিটিয়েছিলো তারা ’০৬-‘০৭ এর প্রথম ৩ টেস্টেই।

     

     

    তবে টেস্ট শেষেই হঠাৎ বিদায়ের কথা বলতে এলেন শেন ওয়ার্ন। সিরিজ শেষেই ক্রিকেটকে বিদায়। প্রথম বোলার হিসেবে ৭০০ উইকেটের মাইলফলক এই সিরিজেই ছুঁলেন ওয়ার্নি। চতুর্থ টেস্ট শুরুর আগে গ্লেন ম্যাকগ্রাও জানালেন যে এটাই শেষ টেস্ট সিরিজ তার জন্য। পঞ্চম টেস্ট শুরুর আগে অবসরের ঘোষণা আসলো ল্যাঙ্গারের কাছ থেকে! অস্ট্রেলিয়া যতই ৫-০ জয়ের দিকে এগুচ্ছিলো, ক্রিকেট বিশ্ব ততই আবেগী হয়ে পড়ছিলো। শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করার পরে পন্টিংয়ের দলের ‘দ্য ইনভিনসিবল’ খেতাব লাভ। আর মাঠজুড়ে গার্ড অফ অনারে ওয়ার্ন, ম্যাকগ্রা আর ল্যাঙ্গারদের বিদায়- ক্রিকেট ইতিহাসের আরেকটা শ্রেষ্ঠতম মুহূর্ত।


        

    এলো ২০০৯ এর অ্যাশেজ। ম্যাকগ্রা, লি, ওয়ার্ন বিহীন অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডে এলো জনসন, হিলফেনহাউজ, সিডলদের নিয়ে। ব্যাটিংয়ে নেই হেইডেন, ল্যাঙ্গার, মার্টিন, গিলক্রিস্টরা। তাদের জায়গায় এসেছে ‘ফিল হিউজ’, মার্কাস নর্থেরা। সবার জন্যই এটা প্রথম অ্যাশেজ। শুধু বটবৃক্ষের মত দাঁড়িয়ে ছিলেন পন্টিং! সাথে ক্লার্ক আর হাসি। কার্ডিফে প্রথম টেস্ট এসেছিলো আবার উত্তেজনার পসরা সাজিয়ে। কেন যেনো, ২০০৫ সালের এজবাস্টন অ্যাশেজে ঘুরেফিরে এসেছে বারেবার। শেষ বিকেলে আবারও ইংল্যান্ডের এক উইকেট বাঁচানোর উত্তেজনা। এবারও ড্র।

     

    তবে লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টের আগেই ফ্রেডি ফ্লিনটফ ঘোষণা করলেন সিরিজ শেষেই অবসরের। নিজের বিদায়টা নিজেকে কী রাজসিকভাবেই না দিলেন ফ্রেডি! লর্ডসে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মতো অনার্স বোর্ডে নাম তুললেন নিজের। লর্ডসেও ৭৫ বছর পর অসিদের সাথে জয় পেলো ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড এগিয়ে গেলো ১-০ তে। তৃতীয় টেস্টে ড্রয়ের পর চতুর্থ টেস্টে এবার ইনিংস ব্যবধান আর ৮০ রানের পরাজয়ে উড়ে গেলো ইংল্যান্ড। সিরিজে ১-১ এ সমতা। এবার ফ্রেডির ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে টার্গেট দিয়েছিলো এক অসম্ভব ৫৪৬ রানের। তবু শেষদিনে ড্রয়ের উদ্দেশ্যে বেশ ভালোই এগুচ্ছিলেন পন্টিং আর হাসি। তখনই রূপকথার নায়কের মতো বিদায় নেবেন বলে ঠিক করলেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। না, ব্যাটে বলে জীবনের শেষ টেস্টে তেমন কিছু করতে পারেননি। তবে মিড অফ থেকে সরাসরি থ্রোতে ভেঙে দিলেন পন্টিংয়ের স্টাম্প।

     

     

    ওই একটা থ্রো-ই প্রয়োজন ছিল। ২১৭/২ থেকে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হলো ৩৪৮ রানে। ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতলো। সাথে সিরিজটাও জিতলো ২-১ এ! অ্যাশেজ আবার ফিরে আসলো ইংল্যান্ডে।

     

    (চলবে)