মিলানকে চার গোল দিয়ে জুভেন্টাসের চারে চার
৮৭ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে শটটা বাইরে দিয়েই মারলেন এসি মিলান মিডফিল্ডার হাকান চালহানগলু। তুরষ্কের মিডফিল্ডারের শটের পরই ক্যামেরা খুঁজে ফিরল একজনকে। অথচ জেনারো গাত্তুসোর চেহারা এমন শটের পরও ভাবলেশহীন! মাত্র কয়েক সেকেন্ডের একটা দৃশ্য, কিন্তু এই খণ্ডচিত্রই হয়ে থাকল কোপা ইতালিয়া ২০১৭-১৮ ফাইনালের প্রতিচ্ছবি। রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে এসি মিলানকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ইতালিয়ান কাপ টানা চারবার জিতল জুভেন্টাস। আগামী সপ্তাহে এই মাঠে রোমার বিপক্ষে হার এড়ালেই নিশ্চিত হবে তাদের টানা ৭ বারের মত সিরি আ-র শিরোপাজয়। ‘স্কুদেত্তো’ ঘরে তোলার ‘মহড়া’টা দারুণভাবেই সেরে নিল ম্যাক্সিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির দল।
মৌসুমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অ্যালেগ্রির মূল একাদশে ছিল বেশকিছু চমক। এর আগে ৩ জনকে রক্ষণভাগে খেলালেও দলকে আজ ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলিয়েছিলেন অ্যালেগ্রি। এর চেয়েও বড় চমক ছিল গঞ্জালো হিগুয়াইনকে বেঞ্চে বসিয়ে মারিও মানজুকিচকে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানো। প্রথমার্ধে অবশ্য হিগুয়াইনের অভাবটা বেশ ভালমতই টের পেয়েছিল জুভেন্টাস। ‘সাবেক সতীর্থ’ মানজুকিচকে রীতিমত পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন লিওনার্দো বনুচ্চি। প্রথমার্ধে খুঁজেই পাওয়া যায়নি এই ক্রোয়েশিয়ানকে। মানজুকিচ যতটা বিবর্ণ ছিলেন, প্রথমার্ধে ঠিক ততটাই উজ্জ্বল ছিলেন মিলান স্ট্রাইকার প্যাট্রিক কুত্রোনে। ৯ মিনিটে তার আগুনে এক শট জুভেন্টাস গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন রুখে না দিলে হয়ত প্রথমার্ধে লিড নিয়েই ফিরত ‘রোজ্জোনেরি’রা।
তবে পুরো মৌসুমে খেলানো ৪-৩-৩ ফরমেশনেই ভরসা রেখেছিলেন গাত্তুসো। মাঝমাঠে চালহানগলু এবং আক্রমণভাগে সুসো, কুত্রোনেদের সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল মেধি বেনাতিয়া এবং আন্দ্রেয়া বার্জাগলিদের। জুভেন্টাস রক্ষণভাগকে পুরো প্রথমার্ধ তটস্থ রাখলেও ডিবক্সের বাইরে থেকে দু-একটি বিক্ষিপ্ত শট ছাড়া বুফনকে তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি মিলানের আক্রমণভাগ। আর মানজুকিচের মতই ডগলাস কস্তা, পাউলো দিবালারা ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়েই।
বিরতিতে জুভেন্টাসের খেলোয়াড়দের যেন জাদুটোনাই করেছিলেন অ্যালেগ্রি।
দুই উইংয়ে দিবালা-কস্তা জ্বলে উঠলেন, মাঝমাঠ থেকে মানজুকিচদের নিখুঁত বল যোগান দিতে থাকলেন মিরালেম পিয়ানিচ, ব্লেইজ মাতুইদি। হঠাৎ জ্বলে ওঠা এই জুভেন্টাসের সামনে রীতিমত তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে মিলান। ৫৬ থেকে ৬৪- দ্বিতীয়ার্ধের এই ৮ মিনিটেই লেখা হয়ে যায় ফাইনালের ভাগ্য। শুরুটা করেছিলেন ডিফেন্ডার বেনাতিয়া। ডানপ্রান্ত থেকে পিয়ানিচের কর্ণারে বনুচ্চির ওপর লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেডে দলকে লিড এনে দেন তিনি। একটা সময় খেলতেন এই রোমার হয়েই, অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গোল করে বুনো উল্লাসে মাতা তো তার জন্য আর নতুন কিছু নয়! বেনাতিয়ার গোলের মিনিট পাঁচেক পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করে জুভেন্টাস। ৬১ মিনিটে ডিক্সের বাইরে থেকে কস্তার নিরীহদর্শন শট মিলান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডনারুমার হাত ফসকে জড়ায় মিলানের জালে। পুরো মৌসুম মিলানের গোলবারের নিচে ভরসার প্রতীক এই তরুণ গোলরক্ষক নিশ্চয়ই ভুলে যেতে চাইবেন আজকের এই ফাইনাল। মিনিট তিনেক পর করলেন আরও বড় ভুল। মানজুকিচের হেড ধরতে গিয়ে হাত ফসকে বলের নিয়ন্ত্রণ হারালেন, গোলের একেবারে সামনে থেকে মিলানের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিতে ভুল করেননি বেনাতিয়া।
দুর্দান্ত জুভেন্টাসের বিপক্ষে আক্রমণ তো দূরের কথা, প্রথমার্ধের গোছানো ফুটবলটাও খেলতে পারেনি মিলান। তবে ৭২ মিনিটে ভাগ্য সহায় হলে হয়ত ম্যাচে ফেরার ক্ষীণ এক আশায় বুক বাঁধতে পারত ‘রোজ্জোনেরি’রা। বদলি খেলোয়াড় নিকোলা কালিনিচের ক্রসে মাতুইদির ক্লিয়ারেন্স থমকে যায় ক্রসবারে। ডনারুমার মতই ম্যাচে কেবল দুর্ভাগ্যই জুটেছে কালিনিচের। ক্রস ফিরে এসেছে বারে লেগে, আর এর মিনিট চারেক পর করে বসেছেন আত্মঘাতী গোল! দলকে ম্যাচে ফেরানোর আশায় তাকে নামিয়েছিলেন গাত্তুসো, কালিনিচ গোল করলেন, কিন্তু নিজ জালে! ৭৬ মিনিটে আবারও সেই পিয়ানিচের কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে তার হেড জড়িয়ে পড়ে মিলানের জালে। হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়া মিলানের খেলোয়াড়, দর্শকদের শূণ্যদৃষ্টি- সব ছাপিয়ে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শোনা যাচ্ছিল তুরিনের বুড়িদের জয়োল্লাস।