২৮ বছর পর ফাইনালে চিলি
ম্যাচ শেষে দিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। এদুয়ার্দো ভার্গাসকে অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত গ্যারি মেডেলের। নিজেদের জালে বল ঢুকিয়ে যে বিপদে তিনি চিলিকে ফেলেছিলেন তাতে চিলির কোপা স্বপ্ন শেষ হয়ে যেতে পারতো আজই। বাঁচালেন ভার্গাস। ডিবক্সের বাইরে থেকে তাঁর অসাধারণ এক গোলেই ফাইনালে চলে গেলো চিলি।
অথচ ম্যাচের গল্পটা হতে পারতো অন্যরকমও। এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গতিময় দলের নাম সম্ভবত পেরু। এতোটাই গতিময় যে চিলির সানচেজ, ভিদালরা পেরুর ফারফান, গুইয়েরোদের সাথে পেরে উঠছিলেন না। বল কোনভাবে পেরুভিয়ানদের পায়ে গেলেই তাঁরা বল নিয়ে উসাইন বোল্টের মতো দৌড় দিচ্ছিলেন। খেলা শুরুর মিনিটখানেকের মধ্যেই চিলির ডিফেন্সে মুহুর্মুহু আক্রমণ চালাতে থাকে পেরু। চিলির গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো বেশ কয়েকবার দুর্দান্ত সেভ তো করলেনই, চিলিকে আরেকবার বাঁচালো বারপোস্ট।
এই যখন অবস্থা, তখনই বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে আরাঙ্গুইজকে ফাউল করে লাল কার্ড খেয়ে বসেন পেরুর কার্লোস জাম্বরানো। আগেই একটা হলুদ কার্ড দেখেছিলেন, এই ফাউলের পরে রেফারী সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে দেন। খেলার তখন মাত্র ২০ মিনিট। একজন কম নিয়েও সমানে লড়তে থাকে লা ইনকা’রা। তবে স্বাভাবিকভাবেই আক্রমণের ধার যায় কমে। এই ফাঁকে সানচেজ, ভালদিভিয়া, ভিদাল, ভার্গাসরা মিলে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন পেরুর ডিফেন্সকে। তার ফল পায় চিলি প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ৩ মিনিট আগে। পেরুর ডিফেন্সের ভুলে ভার্গাস পায়ে বল পেয়ে দলকে এগিয়ে নেন ১-০ তে।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলা জমে ওঠে আরও। চিলির আক্রমণ চলছিল, কিন্তু এর মাঝেই মেডেলের ঐ গোল। অ্যাডভিনকুলার ক্রস ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের জালেই জড়িয়ে দিলেন তিনি। কমেন্টেটর বলেই ফেললেন, “লাল কার্ড দিয়ে যে অন্যায় করা হয়েছিল পেরুভিয়ানদের প্রতি, এই গোল সেই অন্যায়ের সুবিচার।”
তবে এই আনন্দ বেশিক্ষণ থাকেনি পেরুর। স্কোর ১-১ হওয়ার ৪ মিনিট পর ডিবক্সের বাইরে থেকে ভার্গাস যে গোলটা করলেন তা দর্শকদের মনে থাকবে অনেকদিন। ৩০ গজ দূর থেকে করা কিক ডানপাশে ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি পেরুর গোলরক্ষক পেদ্রো কুইরোজ। খেলার বাকি সময় আর কিছু বিচ্ছিন্ন আক্রমণ চালালেও আর গোল পায়নি। তাই দীর্ঘ ২৮ বছর পরে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ওঠে চিলি।
খেলা শেষে চিলির কোচ সামপাওলিও বললেন, এই টুর্নামেন্টে তাঁদের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষের নাম ছিল পেরু। লা ইনকা’রা সান্ত্বনা খুঁজতে পারে এতে। এখন আসলে আর কিছু তো হারানোর নেই। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলায় তাই নির্ভার হয়েই মাঠে নামবে পেরু।
২ গোল করে আজ ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন এদুয়ার্দো ভার্গাস। এই নিয়ে চিলির ৫ খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন চারজন। প্রতি ম্যাচেই কেউ না কেউ জ্বলে উঠছেন চিলির হয়ে। ফাইনালে কেউ জ্বলে উঠলেই প্রথম কোপা আমেরিকা শিরোপা জিতবে চিলি তা এখনই বলা যায়। সেই সাথে অমর হয়ে যাবেন সানচেজ, ভিদাল, ভার্গাসরাও।
সেই অমরত্ব থেকে আর মাত্র এক পা দূরে চিলি।