• লা লিগা
  • " />

     

    লেভান্তের মাঠে 'পরাজিত' বার্সা

    লেভান্তের মাঠে 'পরাজিত' বার্সা    

    ৪০০ দিন! ২০১৭ এর এপ্রিলে সবশেষ লা লিগার কোনো ম্যাচে হেরেছিল বার্সেলোনা। এরপর অনেক কিছুই বদলেছে, কিন্তু লা লিগায় বার্সা থেকে গেছে অপরাজিতই। সেই ধারায় ছেদ পড়ল আজ, 'ইনভিনসিবল' হওয়ার স্বপ্নটা মিলিয়ে  গেল লেভান্তের মাঠে। লেভান্তের কাছে ৫-৪ গোলে হেরে গেছে বার্সেলোনা।

    বার্সার ম্যানেজারের পদে যোগ দেওয়ার পর এই প্রথম লিগের কোনো ম্যাচ হারলেন এর্নেস্তো ভালভার্দে। লিগ নির্ধারণ হয়ে যাওয়ার পর বার্সার এই একটা লক্ষ্য পূরণই বাকি ছিল। ১৯৩০ সালের পর স্পেনের প্রথম দল হিসেবে অপরাজিত থেকে মৌসুম শেষ করা। সেই আমলে লিগ ছিল ১৮ ম্যাচে, ৩৮ ম্যাচের লিগে অপরাজিত থাকতে পারলে ইতিহাসেই ঢুকে যেতে পারতেন ভালভার্দে। সেটা না হওয়ায় অবশ্য নিজের সিদ্ধান্তকেও দুষতে পারেন ভালভার্দে, লেভান্তের মাঠে দল নিয়ে তিনি এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বার্সেলোনাতেই রেখে এসেছিলেন লিওনেল মেসিকে। পরে সেই আক্ষেপেই পুড়েছেন ম্যাচ শেষে।



    লেভান্তের মাঠে নিরপক্ষে সমর্থকদের জন্য অবশ্য দারুণ একটি ম্যাচই হয়েছে। ম্যাচের প্রথম আধঘন্টায় এমানুয়েল বোয়াটেংয়ের দুই গোলে এগিয়ে গিয়েছিল লেভান্তে। পরে ৩৮ মিনিটে ফিলিপ কুতিনিয়ো এক গোল শোধ দিয়ে প্রথমার্ধেই বার্সার ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু বিরতির পর যেন চেনাই গেল না সে বার্সাকে। দ্বিতীয় গোল করার পরিবর্তে উলটো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবারও গোল হজম করে বসে তারা। লেভান্তেকে দুই গোলের লিড ফিরিয়ে দেন ফরোয়ার্ড এনিস বার্ধি।

     

     

    চমক তখনও বাকি। এর পরের দশ মিনিটে চোখ ছানাবড়া হওয়ার দশা, লেভান্তে সমর্থকেরা ওই মুহুর্তটুকু মনে রাখবেন আজীবন। আর ভ্যালেন্সিয়াতেও যেন রোমের দুঃস্মৃতি আরেকবার ভর করে বসলো বার্সার ওপর। ৪৯ আর ৫৬ মিনিটে আরও দুইবার গোল হজম করে স্কোরলাইন তখন ৫-১! বার্সার এমন করুণ দশা শেষ কবে দেখেছে ফুটবল? ২০০৩ সালে  সবশেষ মালাগার বিপক্ষে ৫ গোল হজম করেছিল বার্সা। সেই স্মৃতি তো কবেই দুঃস্মৃতিতে পরিণত করেছিল তারা!

    পুরনো আরও একটা স্মৃতিও ফিরে এলো আজ। বার্সার আজ শুরুটাই হয়েছিল রেকর্ড হারিয়ে। এই মৌসুমে বার্সার বিপক্ষে এক ম্যাচে দুই গোল করতে পারেননি কেউ। প্রথম ৩০ মিনিটেই সেই কাজটা করেছিলেন বোয়াটেং। ৪৯ মিনিটে যখন কোণাকুণি শটে টের স্টেগানকে বোকা বানালেন ততোক্ষণে হ্যাটট্রিক পূরণ করে ফেলেছেন লেভান্তের ঘানাইয়ান স্ট্রাইকার। ঠিক ১৩ বছর আগে এই মে মাসেই বার্সার বিপক্ষে সবশেষ হ্যাটট্রিকটা করেছিলেন ডিয়েগো ফোরলান।

    থমাস ভারমালেনের সঙ্গে আজ বার্সার রক্ষণে নেমেছিলেন ইয়েরে মিনা। আধঘন্টা পরই অবশ্য ভারমালেন বদলি হয়ে মাঠ ছাড়েন, তার জায়গায় নামেন জেরার্ড পিকে। তিনিও রক্ষণে হাল ধরতে পারেননি আজ। চার গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর আরও বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনে বার্সা। অবশ্য এছাড়া উপায়ও ছিল না। লেভান্তের তিন ফরোয়ার্ড বার্সা রক্ষণে ছড়িয়ে ঘুরিয়েছেন আজ প্রায় পুরোটা সময়। ৫৬ মিনিটে আরও একবার বক্সের বাইরে নির্ভুল পাস দেওয়ার ফলটা পায় লেভান্তে। রজারের পাস থেকে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে গিয়ে বারধি করেন নিজের দ্বিতীয় গোল।

    এরপর অবশ্য বার্সা ম্যাচেও ফেরে। বোয়াটেংয়ের মতো হ্যাটট্রিক পূরণ করেন কুতিনিয়োও। কিন্তু বার্সার জার্সিতে নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক পাওয়ার দিনটা মোটেই সুখকর হয়নি ব্রাজিলিয়ানের। ৫৯ আর ৬৪ মিনিটে দুই গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেছিলনে, পরে ৭১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে লুইস সুয়ারেজ ব্যবধান আরও কমিয়ে এনেছিলেন। এক গোলে পিছিয়ে থেকে বার্সাও প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করার সংকেত দিচ্ছিল। কিন্তু শেষ ২০ মিনিটে আর লেভান্তের মনোযোগ টলেনি। ভালভার্দেও তার হাতের সবগুলো সুযোগ ব্যবহার করেও আর ফল বের করে আনতে পারেননি। ম্যাচটা তাই হেরেই শেষ হয়েছে তার।

    ন্যু ক্যাম্পে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে লিগের শেষ ম্যাচটা তাই বার্সার জন্য হয়ে রইল কেবল আনুষ্ঠানিকতার। অথচ রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে হার এড়ানোর পর বার্সাকে অপরাজেয়ই মনে হচ্ছিল। সেই তুলনায় লেভান্তে তো পুঁচকেই বটে। পঁচা শামুকে পা কেটে রেকর্ডটা হাতছাড়া হয়েছে, আর শেষ ম্যাচে বিদায় দিতে হবে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকেও। লিগের শুরুতে বার্সার আকাশে ছিল ঝঞ্ঝার মেঘ, সেই মেঘ কেটে রোদ উঠেছিল ন্যু ক্যাম্পের আকাশে। লিগের সঙ্গে কোপা ডেল রেও জেতা হয়েছে গেছে বার্সার। কিন্তু শেষদিকে এসে আবারও বোধ হয় দানা বাঁধতে শুরু করেছে সংশয়ের মেঘ।