আর্জেন্টিনা আগুনে পুড়লো প্যারাগুয়ে
সকল গোল কি তাহলে শেষ ২ টি ম্যাচের জন্যই জমিয়ে রেখেছিলো আর্জেন্টিনা?
এই টুর্নামেন্টের সবগুলো দলের মধ্যে সেরা লাইনআপ তাঁদের। কিন্তু স্কোরবোর্ড তা বুঝাতে পারছিলো কই? আগের ৪ ম্যাচে সর্বসাকুল্যে ৪ গোল। প্যারাগুয়ের সাথে ড্রয়ের পরে উরুগুয়ে আর জ্যামাইকার সাথে কষ্টার্জিত ১-০ গোলের জয়। কলম্বিয়ার সাথে টাইব্রেকারে ভাগ্যের হাত ধরে বাঁচা। আজ সেই দলই কিনা হাফডজন গোল দিয়ে বসলো প্রতিপক্ষকে। তাও কোন প্রতিপক্ষ? যাদের সাথে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ড্র করেছিলো আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনাকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিলো। আর সেই সব সমালোচনার জবাব আর্জেন্টিনা আজ কি দারুণভাবেই না দিলো। মেসির সেটপিস থেকে টুর্নামেন্টে প্রথম গোল করলেন মার্কাস রোহো। দ্বিতীয় গোলেও মেসির ভূমিকা। হ্যাভিয়ের পাস্তরেকে তিনি যে পাসটি দিলেন, সেই পাস ধরে বুলেটগতির শট নিতে পাস্তরের ভুল হয়নি মোটেও। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে ব্যবধান কমান আরেক ‘আর্জেন্টাইন’ লুকাস বারিওস। স্কোর ২-১ অবস্থায় বিরতিতে যায় দুদল।
আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মনে হয়তো দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমা হয়েছিলো। আর ১ গোল হলেই যে স্কোর সমান হয়ে যায়। তাহলে কি আবারো টাইব্রেকার? ভাগ্য কি বারবার তাঁর মুখ আর্জেন্টিনার দিকে ফেরাবে? দুশ্চিন্তার সেই কালো মেঘ উড়িয়ে দিলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে তাঁর ২ গোলে স্কোর হয়ে যায় ৪-১। ম্যাচ ওখানেই মোটামুটি শেষ। তবে প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনাকে আটকে দেওয়া প্যারাগুয়ের আবারো কোন চমকের প্রত্যাশায় ছিল অনেকেই। প্যারাগুয়ে পারেনি। উল্টা খেয়ে বসে আরও ২ গোল। নিখুঁত এক ক্রসে সার্জিও আগুয়েরোর অসাধারণ এক গোলের পরে তাঁর বদলি হিসেবে নামা গঞ্জালো হিগুয়েইনের আরও এক গোল। কি নিদারুণ প্রতিশোধ!! পয়েন্ট কেড়ে নেওয়ার প্রতিশোধ যে আর্জেন্টিনা এভাবে নেবে তা প্যারাগুয়ে কি স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিলো ?
লিওনেল মেসি শুধু গোলই পেলেন না। নাহলে দলের ৪টি গোলে সরাসরি অবদান রেখেছেন তিনি । অ্যাসিস্টের হ্যাট্রিক করার পরে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতে আর কি লাগে! কে জানে, সকল গোল হয়তো ফাইনালের জন্যই জমিয়ে রেখেছেন মেসি।
২০০৭ এর পরে আবারো কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠলো আর্জেন্টিনা। সেখানে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ স্বাগতিক চিলি। সেই লড়াইয়ের মধ্যেও থাকবে খণ্ড খণ্ড লড়াই। সানচেজ বনাম ডি মারিয়া, ভার্গাস বনাম আগুয়েরো, ভিদাল বনাম পাস্তরে। তবে আসল লড়াইটা হবে দুই অধিনায়ক ক্লদিও ব্রাভো আর লিওনেল মেসির মধ্যে। মাত্র কিছুদিন আগে একসাথে চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেছেন। সময় আজ তাঁদেরকেই মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
ফুটবলপ্রেমীদের তাতে বয়েই গেছে। সেরা দুই দলের ফাইনাল দেখার জন্য কারোরই আর তর সইছে না।
এখন শুধু গতি বনাম পাসের এক রোমাঞ্চকর এক ফাইনালের জন্য অপেক্ষা।