জোড়া গোলে সিমিওনেকে শিরোপা এনে দিলেন গ্রিযমান
খেলার শুরুতে দুই সতীর্থ হাসিমুখে বরণ করেছিলেন একে অন্যকে। অলিম্পিক মার্শেইয়ের সফলতার পেছনে অধিনায়ক দিমিত্রি পায়েটের অবদান অনেকটাই, আরেক দলে আঁতোয়া গ্রিযমানও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মূল তারকা। ম্যাচের ঘন্টা খানেক না পেরুতেই একজনের মুখে হাসিটা আরও চওড়া হলো, আর অন্যজন ইনজুরি নিয়ে দলের হারতে থাকা দেখলেন সাইডবেঞ্চে বসে। গ্রিযমানের জোড়া গোলে ইউরোপা লিগের ফাইনলটা ৪৯ মিনিটের মধ্যেই প্রায় নিজেদের করে নিয়েছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। পরে আর সেখান থেকে ফেরত আসা হয়নি পায়েটের দলের। ফাইনালে মার্শেইকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপা লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
২০১০ আর ২০১২ সালে ইউরোপা লিগ জয়ের পর আরও দুইবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়নস লিগে খালি হাতে ফিরতে হলেও, শেষ ৮ বছরে এই নিয়ে ৩ বার ইউরোপা লিগ জিতল রোহিব্লাংকোরা। আর ৩ বার এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেও হেরে গেল মার্শেই।
অলিম্পিক লিঁওর মাঠে শিরোপাটা জিততে পারলে অবশ্য চ্যাম্পিয়নস লিগের জায়গা পাকা করার পাশাপাশি আরেকটা তৃপ্তিও কাজ করত মার্শেই সমর্থকদের। লিঁওর মাঠ গ্রুপামা স্টেডিয়ামে মার্শেই সমর্থকদের সংখ্যা বেশি হলেও তাদের উদযাপনের করতে দেননি আসলে এক লিঁও সমর্থকই। এই শহরেই জন্ম না হলেও ছোটবেলায় লিঁওর খেলা দেখতেই মাঠে আসতেন গ্রিযমান। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়ই স্পেনে কাটানো গ্রিযমান তারকা হয়ে ফিরেছিলেন লিঁওর সেই মাঠেই। গোলও করেছিলেন রিয়াল সোসিয়েদাদের হয়ে।
সেই স্টেডিয়াম অবশ্য বদলে গেছে দুই বছর আগে, কিন্তু লিঁওতে গ্রিযমানের গোল করার রীতিটা বদলায়নি। অনেকটা ধারার বিপরীতে গিয়েই ম্যাচে প্রথম গোলটা করেন গ্রিযমান। নিজের গোলরক্ষকের বাড়ানো পাসটা ঠিকমতো রিসিভ করতে পারেননি মার্শেই মিডফিল্ডার আনগুইসা, সেখান থেকেই গাবি পাস বাড়ালেন গ্রিযমানকে। গোলরক্ষককের সঙ্গে ওয়ান অন অনে সুযোগ লুফে নিয়ে অ্যাটলেটিকোকে ২১ মিনিটে এগিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রেঞ্চম্যান।
ওই গোলটা বাদে প্রথমার্ধে অবশ্য মার্শেইয়েরই দাপট ছিল বেশি। পরে সেই দাপট পরিণত হয়েছে আফসোসে হয়। ম্যাচের ৪ মিনিটে থেকে মার্শেই স্ট্রাইকার জার্মেইন অ্যাটলেটিকোর ইয়ান অবলাকের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে থেকেও বল মেরেছিলেন বাইরে দিয়ে। ওই মুহুর্তটাই পরে হয়ে থেকেছে মার্শেইয়ের গোল করার সেরা সুযোগ। এর খানিকক্ষণ পর আদিল রামিও শট করেছিলেন অ্যাটলেটিকোর গোলে, তার চেষ্টাটা অবশ্য কঠিনই ছিল, তিনিও পারেননি অবলাকের পরীক্ষা নিতে। নিজেদের ভুলে এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পর পায়েটও ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়লে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায় মার্শেইয়ের জন্য।
বিরতির ঠিক পরই গ্রিযমান আবারও ব্যবধান বাড়িয়ে দিলে মার্শেইয়ের সামনে দুই গোলে পিছিয়ে থাকাটাই পাহাড়সম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। গ্রিযমানের দ্বিতীয় গোলটাই অবশ্য শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে সব আলো। গাবি পাস বাড়িয়েছিলেন ডানদিকে, গ্রিযমান দৌড়ে সেই পাসকেই গোলরক্ষকের মাথার ওপর তুলে দিয়ে জালে জড়ালেন।
মন্ত্রমুগ্ধ করা ওই মুহুর্তের মিনিট খানেক পর ডিয়েগো গোডিন কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান বাড়িয়ে দিলে তখনই শেষ হয়ে যেতে পারত মার্শেইয়ের সব আশা। কিন্তু ফাইনলটা আর শেষ পর্যন্ত অন্ততপক্ষে স্কোরলাইনের দিক দিয়ে একপেশে হয়নি। ৮০ মিনিটে কনস্টানটিনোস পস্টেকগ্লুর হেড বারপোস্টে লেগে ফেরত না আসলে শেষ দশ মিনিটে জমে উঠতে পারত খেলা। উলটো ৮৮ মিনিটে অ্যাটলেটিকো অধিনায়ক গাবি গোল করে মার্শেইয়ের গ্লানিটা আরও বাড়ান।
এরপরই অ্যাটলেটিকোর শিরোপা তুলে ধরাটা হয়ে গেল সময়ের ব্যাপার। তবে একটা আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল তখনও। শেষদিকে ফার্নান্দো তোরেস নামলেন বদলি হয়ে। ডিয়েগো সিমিওনে, গাবি, ফার্নান্দো তোরেসরা সবাই খেলেছিলেন একই দলে। তোরেস যখন দ্বিতীয়বারের মতো বিদায় নিচ্ছেন, অ্যাটলেটিকো তখন ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী দল।
তোরেসের শৈশবের ক্লাবকে যিনি নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায় সেই ডিয়েগো সিমিওনে অবশ্য আজও মাঠে ঢুকতে পারেননি। নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলা দেখেছেন ভিআইপি বক্স থেকে, শেষ বাঁশির পর ঢুকেছিলেন মাঠে। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ার ফল যদি শিরোপা জেতাই হয় তাতে মন্দ কি! কিন্তু যে গ্রিযমান শিরোপা জেতালেন, তাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবেন তো? সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজা শুরু হয়ে গেল আজ থেকেই!