ট্যাকটিকসের টুকিটাকি : ক্লপ বদলাবেন না নিশ্চিত, কিন্তু জিদান?
দুই দলের খেলার ধরন জানে দুই দলই। তাই মাঠের খেলার জন্যই তোলা থাকলো সব। কিন্তু তা নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা বা বিতর্ক কি আর থামে? ফাইনালের রঙ্গমঞ্চে শেষ পর্যন্ত কোন ব্যাপারগুলো ঘুরিয়ে দিতে পারে খেলার ফল? আলাদা করে নজরই বা রাখতে হবে কাদের ওপর?
ক্লপ বদলাবেন না নিশ্চিত, কিন্তু জিদান?
রিয়াল মাদ্রিদ এই মৌসুমের বেশিরভাগ সময় অনুসরণ করেছে ৪-৪-২ ফর্মেশন। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগের বেশিরভাগ ম্যাচেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে করিম বেনজেমা জুটি বেঁধেছেন আক্রমণে। ইস্কো খেলেছেন কিছুটা ফ্রি রোলে। বলের পজেশন থাকা অবস্থায় তাই কিছুটা নেমে এসে বাকি মিডফিল্ডারদের সঙ্গে ডায়মন্ড তৈরি করে খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছে রিয়াল। জিনেদিন জিদানের এই টোটকা কাজে লেগেছে প্রায় প্রতি ম্যাচেই। তবে যত না ট্যাকটিকালি তার চেয়ে বেশি খেলোয়াড়দের একক নৈপুণ্যে ভর করে বেশ কয়েকটি ম্যাচে পার হয়েছেন জিদান।
৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলেও জিদানের দলকে মুখোমুখি হতে হয়েছে বেশ কিছু সমস্যার। সেগুলো রক্ষণাত্মক দিক দিয়েই। লেফটব্যাক মার্সেলো খেলেন অনেকটাই ওপরে, আক্রমণে বরাবরই সাহায্য করেন তিনি। আক্রমণভাগে খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রতিপক্ষকে নিজেদের অর্ধে চাপিয়ে রাখাই থাকে জিদানের দলের মূল লক্ষ্য।
হাইপ্রেসিংই যেহেতু লিভারপুলের খেলার মূলমন্ত্র, সেক্ষেত্রে ডিফেন্সিভ লাইন আর মিডফিল্ড লাইনের দূরত্ব কমিয়ে আনলে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল আটকে দিতে পারে রিয়ালকে। সেক্ষেত্রে মিডফিল্ডে ফাঁকা জায়গাটাও পাবেন না টনি ক্রুস। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পরিণত হয়েছেন পুরোদস্তুর স্ট্রাইকারে। প্লে মেকারের ভূমিকায় তাই ক্রুস কড়া পাহারায় থাকলে ম্যাচে রিয়ালের “ক্রুজ কন্ট্রোল” নেওয়াটা একটু কঠিনই হয়ে যেতে পারে।
লিভারপুলের খেলার ধরণ একটাই। সেটা অদল বদল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু জিদানের সামনে রয়েছে অপশন। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেললে অনেকটাই সমাধান হতে পারে সমস্যাগুলোর।
প্রথমার্ধই ভাগ্য গড়ে দিতে পারে ম্যাচের
ম্যানচেস্টার সিটি বা রোমার বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে প্রথমার্ধেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল লিভারপুল। ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে পুরনো কাজটাই করতে হবে আবার। কিন্তু এবার প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ, বাকিদের সঙ্গে গেগেনপ্রেসিং কাজে দিলেও রিয়ালের বিপক্ষে সেই সম্ভাবনা কমই। ক্লপের দলের এই দুর্নামটা অবশ্য অনেকদিন ধরেই। শুরুর দিকে খেলার নিয়ন্ত্রণ না নিতে পারলে ম্যাচটাই হেরে বসে তারা। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে যেবার ডাগআউটে ছিলেন, সেবারও ক্লপকে একই পরিণতি মেনে নিতে হয়েছিল। অবশ্য শুরুতেই গোল করলেই যে জয় নিশ্চিত-এমনও নয়। এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে শুরুতে এগিয়ে গিয়েও পড়ে নড়বড়ে মনে হয়েছিল লিভারপুলকে। পরে যদিও অ্যানফিল্ডের ম্যাচটা ৪-৩ গোলেই জিতেছিল কপরা। তবে সংশয় থেকেই যাচ্ছে, ৯০ মিনিট ধরে প্রেস করে খেলা তো শারীরিক দিক দিয়েও প্রায় অসম্ভব! ম্যাচের ফল নিজেদের দিকে নিয়ে যেতে হলে শুরুতেই গোলটা পেতে হবে লিভারপুলকে।
রক্ষণই দুইদলের চিন্তা, লিভারপুলের জন্য একটু বেশিই
রিয়ালের দুই ফুলব্যাক ওপরে খেলতেই পছন্দ করেন। সালাহ-মানেদের ক্ষীপ্রগতির কাউন্টার অ্যাটাক সেক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে রিয়ালের। কিন্তু কাসেমিরো থাকায় সেদিক থেকে কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারে রিয়াল। লস ব্লাংকোদের থেকে দুশ্চিন্তা অনেকগুণে বেশি লিভারপুলের। অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ড আর আন্ড্রু রবার্টসন বয়সে তরুণ, হুট-হাট ভুল করে বসেন প্রায়ই। রিয়ালের মতো কাসেমিরো নেই কপদের। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইক রক্ষণের ভঙ্গুর অবস্থার অনেকটাই উন্নতি করেছেন। তবে ড্যান লভ্রেনই লিভারপুলের আসল দুশ্চিন্তার কারণ। এই মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে একেবারেই অধারাবাহিক ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বড়সড় ভুল করে দলকেও ভুগিয়েছেন। এবার সামলাতে হবে রোনালদোদের।
রামোস বনাম সালাহ
রিয়ালের আক্রমণে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন মার্সেলো। তার খেলার ধরন পাল্টানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। জিদানও রক্ষণাত্মক কৌশলে দল নামানোর লোক নয়! মার্সেলো রিয়ালের আক্রমণে যোগ দিলে রিয়ালের বাঁ প্রান্তটা পড়ে থাকে ফাঁকাই। মোহাম্মদ সালাহ ওই প্রান্ত দিয়েই খেলেন। মিশরীয় উইঙ্গারের সতীর্থ রবার্তো ফিরমিনো দলকে বলের যোগান দিতে নেমে আসেন মাঝমাঠ পর্যন্ত। সার্জিও রামোসকে এই ক্ষেত্রে দিতে হবে বড় পরীক্ষা। ফিরমিনোকে ডিফেন্ড করতে তিনিও মাঝমাঠে চলে গেলে বিপদ বাড়তে পারে রিয়ালের। অতীত বলে বড় ম্যাচে ভুল করেন না রামোস। তাই দেখেশুনেই হয়ত সিদ্ধান্ত নেবেন। মার্সেলোকে না পেলেও তাই রামোসই কড়া নজর রাখার কথা সালাহর মুভমেন্টের ওপর। রিয়াল অধিনায়ক বনাম ইংল্যান্ডের এই মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়ের লড়াইটাও নির্ধারণ করে দিতে পারে ম্যাচের ফল।
ক্লপের হাতে অপশন নেই একদমই!
গ্যারেথ বেল মৌসুমের শেষে এসে দারুণ খেলেছেন। শুরুর একাদশে জিদান রাখতে পারেন তাকেও। বেল অবশ্য বদলি হয়ে নামলেও কার্যকরী হতে পারেন। লুকাস ভাসকেজ, মার্কো আসেনসিওরাও শুরুর একাদশে ঠাঁই না পেলে যে কোনো সময় মাঠে নেমেই খেলা বদলে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। জিদানের হাতে যখন একাধিক ট্রাম্প কার্ড, ক্লপের হাত তখন খালি। চান, ক্লাইন, চেম্বারলেইনরা ইনজুরিতে পড়েছেন। অ্যাডাম লালানাও পুরোপুরি ফিট নন। হুট করে খেলা বদলে দেওয়ার মতো খেলোয়াড়ই নেই লিভারপুল দলে।